৫ বছর পর এল আরাধ্যের সিরিজ জয়

ম্যাচ জয়, সিরিজ জয়, সাকিবের অবিশ্বাস্য কীর্তি—সব মিলেমিশে একাকার বাংলাদেশের উদযাপনে। ছবি : শামসুল হক
ম্যাচ জয়, সিরিজ জয়, সাকিবের অবিশ্বাস্য কীর্তি—সব মিলেমিশে একাকার বাংলাদেশের উদযাপনে। ছবি : শামসুল হক

জিম্বাবুয়েকে ১৬২ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জিতে নিল মুশফিকুর রহিমের দল। ৫ বছর পর বাংলাদেশ পেল টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ। বাংলাদেশ সর্বশেষ সিরিজ জিতেছিল ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। খুলনা টেস্টটা বাংলাদেশের জন্য সব পাওয়ার ম্যাচ। বাংলাদেশ সিরিজ তো জিতলই। অন্যদিকে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন সাকিব আল হাসান। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ম্যাচে দশ উইকেটের কীর্তি গড়লেন।

বছরটা খুব বাজেই যাচ্ছিল বাংলাদেশ দলের। সেই জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে হার দিয়ে শুরু। এরপর কেবলই ব্যর্থতার চোরাবালিতে হাবুডুবু খাওয়া। অবশেষে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে এল স্বস্তির জয়। ওই জয় বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিল বহুগুণে। যার ফল মিলল খুলনা টেস্টেই। দাপটের সঙ্গে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। এ বছরে এটিই বাংলাদেশের শেষ টেস্ট সিরিজ। শুরুটা খারাপ হলেও বছরের শেষটা ভালোই হলো মুশফিকের দলের। শেষ ভালো যার সব ভালো তার!
পরিসংখ্যানটাও আজ বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। টেস্টে পঞ্চম দিনে চতুর্থ ইনিংসে ৩১৪ রান তাড়া করে জেতার ইতিহাস নেই জিম্বাবুয়ের। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করলেন সাকিব-তাইজুল। দুজন ১৫ রানেই ফিরিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়ের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। মাঝে জয়টা ফিকে হতে শুরু করেছিল হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও রেজিস চাকাভার দৃঢ়তায়।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের করা ৩৬৮ রানের ২৫৯ রান জোগান দিয়েছিলেন মাসাকাদজা ও চাকাভা। দুজন পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ইনিংসেও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রচেষ্টা দুই ব্যাটসম্যানের। অবশেষে দারুণ এক গুগলিতে চাকাভাকে ফিরিয়েছেন জুবায়ের হোসেন। চাকাভা ফেরার আগে করেছেন ২৭ রান। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে উঠেছে ৭০ রান।
চাকাভা ফিরলেও মাসাকাদজা টিকে থাকলেন আরও কিছুক্ষণ। ৩৩ রানে সাকিবের বলে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন মাসাকাদজা। কিন্তু শর্ট লেগে দাঁড়ানো মুমিনুল হক ক্যাচটা লুফে নিতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে শতক হাঁকানো মাসাকাদজা ৬১ রানে আবারও সেই সাকিবের বলে সিলি পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিলেন। এবার আর ভুল করেননি মুমিনুল। দারুণভাবে লুফে নিলেন ক্যাচটা। আর এতেই নেমে গেল বাংলাদেশের ‘কাঁটা’টা । মাসাকাদজা ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জয়টা হলো স্রেফ সময়ের ব্যাপার। মাত্র ১৪ রানে জিম্বাবুয়ে হারাল শেষ ৫ উইকেট। সাকিব আর তাইজুলের ভেলকিতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, জিম্বাবুয়ে অলআউট ১৫১ রানে।
ম্যাচসেরা নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। তবে সাকিবের দিনে আলো ছড়ালেন প্রথম ম্যাচের নায়ক তাইজুলও। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। প্রশংসনীয় বল করেছেন জুবায়েরও, নিয়েছেন ২ উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাকে ধীরে ধীরে ফিকে করে তোলা মাসাকাদজা–চাকাভা জুটি তিনিই ভেঙেছেন।
বাংলাদেশের লক্ষ্য এবার জিম্বাবুয়েকে বাংলাওয়াশ দেওয়া। সেই সুযোগ মুশফিকের দল পাচ্ছে চট্টগ্রামে। সিরিজের শেষ টেস্ট শুরু হবে ১২ নভেম্বর। এই জয়ের ফলে বাংলা্দেশ টেস্ট র্যাংঙ্কিয়ে ১০ নম্বর থেকে নয়ে উঠল ।