ভাবনায় শুধুই রঙিন পোশাক

মাশরাফি
মাশরাফি

বহু পুরোনো, অনেকবার দেখা হওয়ার পরিচিত অনুভূতি। মাঠে নামার সময়, প্রথম বলটা করার আগে সেই বুক ঢিপঢিপ। মনে শঙ্কা, একধরনের উত্তেজনা। চেনা অনুভূতিগুলোই তবু অচেনা লাগে প্রতিবার। প্রতিবারই ধরা দেয় নতুন রূপে। প্রতিটি ফেরাই যে মাশরাফির কাছে নতুন শুরু! নিজের সঙ্গে লড়াইয়ে জেতার আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো কাল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে।
দুই পায়েই অ্যাঙ্কলেট ব্রেস বাধা, দিনের খেলা শেষে শরীরটাকে টেনে আনছিলেন ক্লান্ত ভঙ্গিতে। শেষ বিকেলে পাঁচ ওভার বোলিংয়ের সাক্ষ্য দিচ্ছিল ঘামে জবজবে শরীর। ঘাম মুছতে মুছতেই শোনালেন নিজের ‘নতুন’ কিন্তু চিরন্তন গল্প, ‘প্রতিবারই নতুন লাগে। এত দিন পর ফেরা, অনেক সময় মনে হয় খেলাটাই ভুলে গেছি। আগে যত ম্যাচই খেলুন না কেন, প্রতিবারই মানিয়ে নিতে হয় নতুন করে। মানিয়ে নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়।’
তাঁর পাঁচ ওভারের স্পেলে শুরু হয়েছিল দিন, শেষটাও হয়েছে তাঁর পাঁচ ওভারের স্পেলেই। দেখে মনে হচ্ছিল, প্রথম ওভারটি বুঝি ইচ্ছে করেই একটু সতর্কতায় করেছেন। তবে মাশরাফি শোনালেন অন্য কথা, ‘আমি প্রথম ওভার থেকেই পুরোটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বাইরে থেকে কোচ বা আপনারা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা প্রথম ওভারে অন্যরকম কিছু দেখেছেন। আসলে অনেক দিন পর ফিরলে মানাতে খানিকটা সময় লাগে।’
শুধু পুরোনো অনুভূতি নতুন করে ধরা দেওয়ার কারণে নয়, আরেকটা দিক থেকেও নতুন মাশরাফির এবারের ফেরা। ফিরলেন লাল বলে, দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ দিয়ে! তিনি নিজে যদিও একে আলাদা কিছু ভাবছেন না, ‘লাল বল বা লংগার ভার্সন বলে কথা নয়, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইনটেনসিটি কেমন ছিল, ফিটনেস কেমন আর কত ওভার বোলিং করছি। পুনর্বাসন ঠিকমতো হলো কি না। প্রথম দিন শেষে মনে হচ্ছে ঠিকমতোই হয়েছে।’
ফেরার প্রথম সকালেই পাঁচ ওভারের স্পেল করা বিস্ময় জাগিয়েছে যথেষ্টই। দিনের শেষে জানালেন, পরিকল্পনা করেই ওই চাপটা নেওয়া, ‘ইচ্ছে করেই ৫ ওভারের দুটো স্পেল করেছি, ওয়ানডেতে সাধারণত যেভাবে করতে হয়। আপাতত ওয়ানডের জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করছি। হুট করে টেস্ট খেলতে চাই না, দলের জন্যও সেটা ভালো হবে না।’
কোচ শেন জার্গেনসেনও আপাতত রঙিন পোশাকেই চাইছেন মাশরাফিকে, ‘ফেরার দিন হিসেবে ভালোই করেছে। ওকে বলেছিলাম আজ ৪ ওভারের স্পেল করতে। কিন্ত ও করেছে ৫ ওভার। ওকে খুব সতর্কতায় সামলাতে হবে আমাদের। সামনের ছয় মাসে অনেক ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি আছে।’
প্রথম বৃষ্টি বিরতির সময়ই লাল দলের ড্রেসিং রুমে গিয়ে মাশরাফির সঙ্গে কথা বলেছেন মুশফিকুর রহিম। দিনের শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘উনি তো বললেন ভালোই লাগছে। প্রথম দিন হিসেবে আমাদেরও দেখে খারাপ লাগেনি। মাশরাফির মতো বোলার লাখে একটা, মাশরাফির মতো মানুষ লাখে একটা। মাঠে বোলার মাশরাফিকে, ড্রেসিং রুমে মানুষ মাশরাফিকে চাই যত দ্রুত সম্ভব।’
সকাল থেকেই মাঠে থাকা নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন অবশ্য তাড়াহুড়া করতে চান না, ‘মাত্রই শুরু হলো। শুধু বোলিং করলে তো হবে না, পুরো দিন ফিল্ডিংয়ের ফিটনেসও অর্জন করতে হবে। সামনে ঢাকা লিগ আছে, দেখা যাক কতটা উন্নতি করে।’ উন্নতির তাগিদ অনুভব করেছেন মাশরাফি নিজেও, ‘ফিটনেসে যা কিছু করার, আমি সব করেছি। তবে বোলিংয়ে অনেক উন্নতি করতে হবে। ছন্দ আসবে আসলে ম্যাচ খেলতে খেলতে। আজ কয়েকটা নো বল করেছি। এসব কিছু ব্যাপারে ফাইন টিউন করতে হবে।’
বন্ধুর পথ পেরিয়ে মাঠে ফেরাটা অন্তত হলো। এবার নিজেকে পুরো ফিরে পাওয়ার লড়াই।