ঢাকার দুঃস্মৃতি ভোলেননি আশফাক

আলী আশফাক
আলী আশফাক

সকালে নাশতার টেবিল থেকে সোজা রুমে। ডানে-বাঁয়ে কোনো দিকে তাকালেন না। পেছনে ধাওয়া করল একদল সাংবাদিক। কিন্তু আলী আশফাকের তাতে কী আসে যায়!
মালদ্বীপ ফুটবল ফেডারেশন থেকে ম্যাচের পরদিন কথা বলা বারণ করা হয়েছে মিডিয়ার সঙ্গে। সেটি তাঁর কাছে শিরোধার্য। আগের রাতেই সাফে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়া মালদ্বীপ স্ট্রাইকার অনন্য এক উচ্চতায় ওঠার পরও তাই আশ্চর্য রকম নির্লিপ্ত!
বাইচুং ভুটিয়া পড়ে গেলেন পেছনে। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল টুর্নামেন্ট সাফে এখন সবার চেয়ে বেশি ১৩ গোলের মালিক আলী আশফাক।
সেটিও এক লাফেই অনেক পেছন থেকে প্রথম! পরশু রাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মালদ্বীপের ১০-০ জয়ে আশফাকের একারই গোল ছয়টি! গোলবন্যার ওই এক ম্যাচেই ২৭ বছর বয়সীর তারকার ওপর ফেলল নতুন আলো।
হিমালয়ের দেশে এসে সত্যি সত্যিই হিমালয়ে উঠে গেলেন মালের সবচেয়ে দামি ফুটবলার। ভারতের ঘরোয়া ফুটবলে খেলার প্রস্তাব পেলেও যাননি। বাংলাদেশে খেলতে চান কি না, দুই দিন আগে এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে ‘না’ শব্দটাই উচ্চারণ করলেন, ‘বাংলাদেশে খেলার ইচ্ছা নেই আমার।’ চোখ রেখেছেন ইউরোপে। মালদ্বীপের হাঙ্গেরিয়ান কোচ ইন্তেভান উরবানি তো আশফাকের সামনে ইউরোপের দুয়ার খোলাই দেখতে পেলেন, ‘সে ইউরোপে খেলার যোগ্যতা রাখে। আশা করি একদিন ওর এই স্বপ্ন পূরণ হবে।’
ছোট দেশের বড় তারকা আশফাককে ঢাকার দর্শকেরাও মনে রেখেছেন। ২০০৯ ঢাকায় সাফ ফুটবলের ফাইনালে তুলেও দলকে ট্রফি দিতে পারেননি। টাইব্রেকারে ভারতের কাছে হেরেছে মালদ্বীপ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সেই রাাতে আশফাক এবং টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা তারেক টাইব্রেকারে মিস করে হতাশায় ডোবেন। সেই দুঃম্মৃতি আজও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়।
এবার কাঠমান্ডু এসেই হোটেলে ব্যাগপত্তর রেখে যখন বিশ্রাম নিচ্ছেলেন, আশফাককে ঢাকার সেই টাইব্রেকার স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিলে খানিক চুপ করে রইলেন। তারপর ভাঙলেন নীরবতা, ‘হ্যাঁ, টাইব্রেকারে ওই মিসের কথা জীবনে কখনো ভুলব না। সব সময়ই ওই বাজে স্মৃতিটা আমার মনে পড়ে।’
দুষ্টুমি করতে পছন্দ করেন। চুলে লাগিয়েছেন সাদা-কালো রং। দেখতে অন্যরকম লাগে মালদ্বীপ অধিনায়ককে। মালদ্বীপের গড়পড়তা খেলোয়াড়দের চেয়ে তাঁর উচ্চতা বেশি, ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। তবে নিজেকে ছাপিয়ে আশফাক এখন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বড় এক নাম। ঘরোয়া লিগে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে প্রথম তিন মৌসুমে প্রায় এক শ গোল করে ফেলেন। যার মধ্যে এক মওসুমে সর্বোচ্চ ৩৭টি। এখন তো ঘরোয়া আন্তর্জাতিক মিলিয়ে আশফাকের গোল তিন শতাধিক।
গতি, নিখুঁত নিশানা, ড্রিবলিং—এই তিনটির সমন্বয়ে আশফাক দুর্দান্ত এক স্ট্রাইকার। আন্তর্জাতিক ম্যাচে হরহামেশাই ৪-৫ গোল করছেন এক ম্যাচে। ৫টি করে গোল আছে এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপে ক্লাব দলের হয়ে। আঞ্চলিক কোনো টুর্নামেন্টে এত দিন এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫ গোল নিয়ে মেসির সঙ্গে ছিলেন আশফাক। কাল মেসিকে গেলেন ছাপিয়ে।
আশফাকের আরেক ভাই আলী আসফান খেলতেন মালদ্বীপ জাতীয় দলে। এখন অবশ্য ভাই নেই, আশফাফ একাই টেনে নিচ্ছেন ছোটমট দ্বীপদেশের ফুটবল।