'লঙ্কা-জয়ে' চোখ মাশরাফির

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ছবি: শামসুল হক, মেলবোর্ন থেকে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ছবি: শামসুল হক, মেলবোর্ন থেকে

তামিম ইকবালের কেন যেন মনে হচ্ছে মেলবোর্নে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারাবে। মাশরাফি বিন মুর্তজার মতে, ভালো খেললে শ্রীলঙ্কাকে না হারানোর কোনো কারণ থাকতে পারে না। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড খারাপ হতে পারে, কিন্তু অতীতকে বর্তমানে নিয়ে এসে দলের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলতে চান না তিনি। বলেছেন, পরিকল্পনামাফিক খেলতে পারলেই মেলবোর্নে শ্রীলঙ্কাকে হারাবে বাংলাদেশ। 
কালকের ম্যাচে আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার কণ্ঠ কিন্তু যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসীই শুনিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের স্মৃতি বাংলাদেশের যথেষ্ট দুঃসহ। ২০০৩ সালে ১০ উইকেটের বিশাল হার আর ২০০৭ সালে ১৯৮ রানে হারের কাহিনিকে এই মুহূর্তে যথেষ্ট অপ্রাসঙ্গিকই মনে করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে যে দুটো ম্যাচে আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেছি, সেই দুটো ম্যাচেই আমরা প্রচণ্ড বাজে খেলেছি। কালকের ম্যাচে আমরা যদি ভালো করতে পারি, নিজেদের খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে শ্রীলঙ্কাকে না হারানোর কোনো কারণ আমি দেখি না।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপ রেকর্ড খারাপ হলেও মাশরাফি সবাইকে মনে করিয়ে দেন এই দলটির বিপক্ষে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ভালো খেলার বিষয়টি। নিকট অতীতে শ্রীলঙ্কাকে বলে-কয়ে হারিয়ে দেওয়ার ইতিহাসটিও টেনে আনেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান দলটি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছে যথেষ্ট পরিচিত।
প্রতিপক্ষের ওপর মাশরাফির কিন্তু আছে যথেষ্ট শ্রদ্ধা। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের ‘অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে মাশরাফি কিন্তু একই সঙ্গে নিজ দলের খেলোয়াড়দের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন সতর্কতার বার্তাও।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দুইবার অস্ট্রেলিয়া সফর করলেও মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন, পার্থ কিংবা অ্যাডিলেডের মতো বিখ্যাত ভেন্যুগুলোতে বাংলাদেশের কখনোই খেলা হয়নি। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সুযোগ হয়েছে ‘আইকনিক’ ভেন্যুগুলোতে পদচারণের। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টি হতে না দিলেও দল এখন জগদ্বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অভিষেকের জন্য মুখিয়ে আছে। এমসিজির অভিষেক লগ্নটি স্মরণীয় করে রাখতেই লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়টাকে প্রার্থিতই ভাবছেন বাংলাদেশের এই বোলিং তারকা, ‘মাত্র একটি বলই লাগে একজন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে। পরিকল্পনামাফিক ক্রিকেটটা খুব জরুরি। এমসিজির অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেই।’
এমসিজির উইকেটকে ‘ব্যাটিং-উপযোগী’ই মনে করেন মাশরাফি। দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত ম্যাচটি উপভোগের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এ ব্যাপারে জানিয়েছেন তাঁর মতামত, ‘কোনো সন্দেহ নেই এমসিজির উইকেট ব্যাটিং-সহায়ক। খেলাটায় অনেক রান হবে। তবে এই উইকেট বোলারদের ভালো রকম চ্যালেঞ্জের মুখেই ফেলবে বলে মনে হয়।’
শ্রীলঙ্কান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহকে লঙ্কা-বধের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবেই মনে করেন মাশরাফি। সেই সঙ্গে জানিয়েছে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কান কোচ তাঁর নিজ দেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত সব পরিকল্পনাই আঁটছেন, ‘কোচ আমাদের দারুণভাবে সাহায্য করছেন। বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনাও তৈরি করছেন। পুরো বিষয়টিই এখন নির্ভর করছে আমাদের ওপর, আমাদের ভালো খেলার ওপর।’
মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আপাতত কোনো শঙ্কা নেই বলেই জানিয়েছেন অধিনায়ক। নেটে মুশফিকের ব্যাট করার খবরটিও তিনি জানিয়েছেন স্বস্তি নিয়েই, ‘মুশফিক আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আপাতত ওকে নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সে আজ নেটে ব্যাট করেছে। আশা করছি আগামী কালকের ম্যাচে সে দলের অংশই থাকবে।’
মাশরাফি অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন দলে থাকলেও কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উইকেটরক্ষণের দায়িত্বটা পালন নাও করতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে মুশফিকের বদলি হিসেবে স্টাম্পের পেছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়াবেন এনামুল হক।
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দেশে ফেরত আনা আল আমিন হোসেনের প্রসঙ্গও উঠে এল সংবাদ সম্মেলনে। মাশরাফি অবশ্য এ ব্যাপারে তৈরি হয়েই ছিলেন। সোজা-সাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, আল আমিন অধ্যায় এখন অতীতের ব্যাপারই। একই সঙ্গে তার দেশে ফেরার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি, ‘বাংলাদেশ দল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম শৃঙ্খলবদ্ধ দল। এই দলে থাকতে হলে সুশৃঙ্খল খেলোয়াড় হয়েই থাকতে হয়। কোনো খেলোয়াড় যদি নিজেকে নিয়ম-শৃঙ্খলার বাইরে নিয়ে যায়, শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।’