জনতার ভিড়ে মিশে আছেন তাসকিন

তাসকিন আহমেদ
তাসকিন আহমেদ

অন্যদের মতো বিকল্প পথ ধরেননি। বাসায় ফিরেছেন বিমানবন্দর সড়ক দিয়েই। রাত বলেই হয়তো রাস্তায় অপেক্ষমাণ ভক্তদের চোখ এড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাতে লাভ হলো কী?
রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের বাসায় পৌঁছে তাসকিন আহমেদের চোখ তো ছানাবড়া। বাসার সামনে অন্তত দেড়-দুই শ মানুষ। এলাকাবাসী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে অজস্র অপরিচিত। তাসকিনের গাড়ি পৌঁছাতেই, ‘তাসকিন, তাসকিন’ স্লোগানে প্রকম্পিত এলাকা। যেন বিশ্বজয়ী কোনো বীর এইমাত্র ঘরে ফিরলেন।
২২ মার্চ রাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পর থেকেই তাসকিন জনতার ভিড়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষ। তাসকিনের ভাষায়, ‘এই কয় দিনে অন্তত আড়াই-তিন শ মানুষ এসেছে বাসায়। সবাই কথা বলতে চায়, ছবি তুলতে চায়। আমিও আবদার মিটিয়ে যাচ্ছি।’ শুধু ছবি তোলা বা কথা বলা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও হতো। অনেকে নাকি ফিরে যাওয়ার সময় দাওয়াতও দিয়ে যাচ্ছেন তাসকিনকে।
তা কটি দাওয়াত খেলেন এই কদিনে? তাসকিনের প্রতিবাদ, ‘আরে না না, এত দাওয়াত খাওয়া যায় নাকি! আমি কোথাও খাইনি। তবে ২৫-২৬টি বাসায় গেছি দেখা করতে।’ কারা সেই সৌভাগ্যবান ২৫-২৬ জন? ‘বন্ধুবান্ধব। আত্মীয়স্বজন। অথবা বন্ধুদের বন্ধু, বা বন্ধুদের বন্ধুদেরও বন্ধু। আসলে আমার কাজিন বা বন্ধুদেরও এসে মানুষ ধরছে আমার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে। এতে তারাও বিরক্ত। বলে, তোর জন্য এখন আমাদের যত ঝামেলা’—মুঠোফোনেও হাসিটা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ দলের তরুণ পেসারের।
হ্যাঁ, তাসকিন হাসতে হাসতেই বলছিলেন সব কথা। বিশ্বকাপ থেকে ফেরার তিন-চার দিন পরও চেনা-অচেনা অতিথিদের আবদার মেটাতে গিয়ে এখনো ঠিকভাবে বিশ্রাম নিতে পারেননি। বিরক্তিকর! অথচ তাসকিন উল্টো উপভোগ করছেন, ‘মানুষের ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে বলেন? আমি চাই ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত যেন এই ভালোবাসা আমার সঙ্গে থাকে।’
ভালোবাসার ভিড়ে কিছু উদ্ভট উপদ্রবও অবশ্য সহ্য করতে হচ্ছে। বাসায় হুটহাট চলে আসছে তরুণী ভক্তের দল। একদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, ‘সবচেয়ে ঝামেলা হলো অচেনা মেয়েরা বাসায় এসে আমার বাবা-মাকে জ্বালানো শুরু করেছে। একদিন কয়েকজন এসে তাঁদের ধরল, আমার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে হবে। ওরা নাকি আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। ভাগ্যিস, আমি বাসায় ছিলাম না।’
ঘরে আসা অতিথিরা প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন প্রিয় ক্রিকেটারকে। কেউ বলছেন, ‘বাটলারকে যে ওই সময় আউট করে দিলে, ওটা না হলে তো বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিততই না। শাবাশ তাসকিন!’ রোহিত শর্মাকে বোল্ড করার প্রশংসা কারও মুখে, ‘ওই বলটা দুর্দান্ত করেছিস রে!’ বিশ্বকাপে পাওয়া ৯ উইকেটের মধ্যে তাসকিনের কাছে অবশ্য স্মরণীয় বাটলারেরটাই, ‘বাটলারকে আউট করতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়েছে। সেট ব্যাটসম্যান ছিল। তাকে ওই সময় ফেরাতে না পারলে ম্যাচের ফল উল্টোও হতে পারত।’ শুধু বাটলারের উইকেটই নয়, তাসকিন সারা জীবন মনে রাখবেন অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাকেই, ‘এ রকম ম্যাচ আমি জীবনে খেলিনি। কী চাপ আর টেনশন ছিল! আপনারাও দেখেছেন ওটা ছিল আমাদের ডু অর ডাই ম্যাচ।’
বিশ্বকাপে তাসকিনের আরেকটা বিশেষ অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে বল করা। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি এগিয়ে রাখছেন রুবেল হোসেনকে, ‘রুবেল ভাই-ই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলার। কী ওভারটাই না করলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে! তাঁকে আগে কখনো এ রকম বল করতে আমি দেখিনি।’
টুর্নামেন্টের সেরা ১০ বোলারের মধ্যে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলেন তাসকিন। সে প্রত্যাশা না মিটলেও আফসোস নেই। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম খেলা বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হতে পেরেই তিনি খুশি, ‘সেদিন দেখলাম বোলারদের মধ্যে আমি সম্ভবত ২১ বা ২২ নম্বরে। তাতে দুঃখ নেই, কারণ জানি আমি আরও ভালো করতে পারি। আর দল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাতেই আমি আনন্দিত।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সাফল্যে গোটা দেশই আনন্দরাজ্য। তাসকিনরা জনতার ভিড়ের মধ্যমণি তো সে কারণেই!