এমনই তো হওয়ার কথা ছিল!

অস্ট্রেলিয়ার আয়নায় নিজেদের আসল ছবি দেখল বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার আয়নায় নিজেদের আসল ছবি দেখল বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি

ম্যাচের ফল ৫-০। পোস্টে একটা হেড লেগেছে বলে বাঁচোয়া। আধ ডজন গোল হয়নি। আবেগী সমর্থকেরা হয়তো বলবেন, ‘এ কী করল বাংলাদেশ! কী লজ্জা!’ কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলকে যারা অনুসরণ করেন, এ দেশের ফুটবলের ঘটনা-প্রবাহের খবর রাখেন, তাদের কাছে এই ফল বিস্ময় হয়ে আসেনি। ১৯৭৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৯-০, কিংবা ১৯৯৩ সালে জাপানের বিপক্ষে ৮-০ গোলে হারের চেয়ে তো ঢের ভালো ফল এল পার্থের মাটিতে। বিশ্বমানের খেলোয়াড়ে ভরা বিশ্বকাপের নিয়মিত একটি দলের বিপক্ষে এমন ফলই তো অনুমিত।
গোলাম সারোয়ার টিপুর কাছে ৫-০ বরং ‘ভালো ফল’ই মনে হচ্ছে। বেশ কিছু প্রাপ্তিযোগও দেখছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ। বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ বাংলাদেশের কপালে জোটে কালেভদ্রে। বরাবরই হাতে গোনা কয়েকটি দলের সঙ্গে খেলা বাংলাদেশ এই প্রথম বুঝল তাদের আসল শক্তি। সারোয়ার ব্যাখ্যা করলেন, ‘আমরা অনেক দিন বড় দলের সঙ্গে খেলি না। অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বমানের একটি দলের বিপক্ষে ছেলেরা যা খেলেছে, তাতে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। এই ম্যাচ নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে মামুনুলদের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচ খেলোয়াড়দের জন্য বড় একটা অভিজ্ঞতাও হয়ে থাকবে।’
সারোয়ার বাস্তবতা বোঝালেন। বললেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোনো জায়গাতেই বাংলাদেশের তুলনা চলে না, ‘দুই দলের মান, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিল, স্ট্যামিনা সব জায়গাতেই বাংলাদেশ হাজার ক্রোশ পেছনে। বাংলাদেশের ফুটবলাররা ম্যাচে গড়ে ৫ কিলোমিটার সমান তালে দৌড়াতে পারলে থাকলে অস্ট্রেলীয়রা দৌড়োয় ১০-১২ কিলোমিটার। শারীরিক গড়ন-গঠনেও অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ পার্থক্য আকাশ-পাতাল।’
নিজে জাতীয় দলে খেলেছেন। কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন একাধিকবার। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলারদের মানসিক অবস্থাটা অনুভব করেছেন সারোয়ার, ‘আজকে ৯০ মিনিট মামুনুলদের কেমন লেগেছে, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে। আমি জানি, এই ধরনের খেলাগুলোতে খেলোয়াড়েরা নিজেদের কতটা অসহায় মনে করে। তবে আমার দৃষ্টিতে মামুনুলরা একেবারেই খারাপ করেনি। আজকের ম্যাচের পর মানসিক দিক দিয়ে ওরা অনেকটাই এগিয়ে যাবে। আমি বলব অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের অর্জন বলতে এটিই।’
সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি খেলাটা দেখতে দেখতে বারবারই ফিরে গিয়েছেন নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর অভিমত, ‘যা হওয়ার ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেটাই হয়েছে আজ। কেউ যদি ভেবে থাকত অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ জোর লড়াই করবে, তাহলে বলব সে বোকার স্বর্গে বাস করছিল।’
জনি জোর দিয়েই বললেন, ‘আমাদের ফুটবলাররা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে ন্যূনতম লড়াই করাটাও বিরাট ব্যাপার। আজ পার্থে স্কোরলাইনটাকে আমি বরং অনেক ভালোই বলব।’
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের পার্থক্য আকাশ-পাতাল এটা জানা ছিল। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে নেমে বাংলাদেশের ফুটবলাররা বুঝতে পারছে নিজেদের অবস্থানটা। এই অবস্থানটা জানা জরুরি ছিল।’
পার্থের মাঠ​টির উদাহরণ টেনে জনি বলেন, ‘আমি নিজের খেলোয়াড়ি অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এ ধরনের মাঠ কিংবা এর পরিবেশ একজন খেলোয়াড়ের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মতো মাঠে সারা বছর খেলে বিশ্বমানের একটি মাঠে খেলতে নামলে স্বভাবতই খেই হারিয়ে ফেলার কথা। পার্থে আজ যে মাঠটিতে খেলা হয়েছে, সে মাঠে খেললে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি স্ট্যামিনা ও শক্তির দরকার হয়। এসব অনুষঙ্গগুলো বিচার করে দেখুন, বাংলাদেশ দলের জন্য সমবেদনাই জাগবে সবার মনে। আমি খেলোয়াড়দের এই ফলে সাধুবাদই দেব।’
কিন্তু ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’ও আপ্তবাক্য আর কত দিন? বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়েছে না পিছিয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক করা যায়। তবে এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, বাকি ফুটবল বিশ্ব এগিয়ে গেছে যোজন যোজন ক্রোশ দূরে।