স্মিথের 'স্মরণীয়' মাহমুদউল্লাহ ও বাংলাদেশ

গ্রায়েম স্মিথ
গ্রায়েম স্মিথ

ক্রিকেট ছাড়লেও এবার বিশ্বকাপে ভালোভাবেই ছিলেন গ্রায়েম স্মিথ। ধারাভাষ্য দিয়েছেন, বিশ্বকাপজুড়েই নিয়মিত কলাম লিখেছেন আইসিসি ওয়েবসাইটের জন্য। বিশ্বকাপ শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফিরে তাকিয়েছেন টুর্নামেন্টে, বেছে নিয়েছেন স্মরণীয় কিছু পারফরম্যান্স। স্মিথের এই তালিকায় জায়গা পেয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর সেই দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স—
ম্যাককালামের নেতৃত্ব
টুর্নামেন্টজুড়ে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধিনায়কত্ব বর্ণনায় অনেক বিশেষণই বলা হয়েছে। আমি ওর নেতৃত্বকে বলব, ‘বৈপ্লবিক।’ মৌলিকত্ব ছিল, আবার উদ্ভাবনীও, তবে অনিয়ন্ত্রিত নয়। ম্যাচের পরিস্থিতি যা-ই হোক, টুর্নামেন্টজুড়েই ও নিজের বোলিং আক্রমণের ওপর আস্থা রেখে তাদের পর্যপ্ত রসদ জুগিয়ে গেছে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা যেভাবে ওয়ানডে ব্যাটিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, এবার সেভাবেই ওয়ানডে অধিনায়কত্বের নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে ম্যাককালাম।

সাঙ্গার টানা চার

বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া—প্রজন্মের অসাধারণ এক ব্যাটসম্যানের ব্যাটের আগুনে পুড়েছে এরা সবাই। ১০৮.২০ গড়ে ৫৪১ রান, ক্যারিয়ার শেষ করা আর নিজেকে স্মরণীয় করে রাখার এর চেয়ে আদর্শ কিছু আর হতে পারত না।

বোল্টের টানা ১০

টানা ১০ ওভার দারুণ গতি ও নিখুঁত নিশানায় বোলিং করে ওয়ানডেতে নতুন বলে বোলিংয়ের ধারা বদলে দিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। ওর স্ট্যামিনা ও ফিটনেস পেস বোলারদের জন্য নতুন মানদণ্ড বেঁধে দিয়েছে। পেসারদের কাছে অধিনায়কদের প্রত্যাশাও নতুন উচ্চতায় তুলে নিয়েছে বোল্টের টানা ১০ ওভারের স্পেল।

সাউদি ৭/৩৩

প্রথম ৩ ওভার শেষে সাউদির ফিগার ছিল ২০ রানে ১ উইকেট। কিন্তু পরের ৬ ওভারে মাত্র ১৩ রানে ৬ উইকেট! বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা স্পেল। ৩৬ বলের নিখুঁত ও বিধ্বংসী এক স্পেল। সাউদির নিউজিল্যান্ড আর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, বাকি টুর্নামেন্টের জন্য দুই দলের সুর বেঁধে দিয়েছিল সাউদির ওই স্পেল।

স্টার্কের ৬/২৮

২০০৭ বিশ্বকাপে আমাদের বিপক্ষে বিধ্বংসী এক স্পেলে শ্রীলঙ্কাকে হারের কিনারা থেকে প্রায় জয় এনে দিচ্ছিল লাসিথ মালিঙ্গা। এবার প্রায় একই কাজ করে ফেলেছিল মিচেল স্টার্ক। শেষ স্পেলে ৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিল স্টার্ক। তবে ওই উইকেটসংখ্যার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেভাবে নিয়েছিল উইকেটগুলো—দারুণ গতি, দুর্দান্ত সুইং ও হার না-মানা মানসিকতা মিলিয়ে বিষাক্ত বোলিং।

মাহমুদউল্লাহর ১০৩

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ওর ইনিংসটি সেদিন দলকে দিয়েছিল ভিত্তি আর বিশ্বাস। বাংলাদেশের ছেলেরা বুঝতে পেরেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক হতে হবে। মাঠে নেমে সেটা করেই পেয়েছিল দারুণ এক জয়।

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড

২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ তাদের বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। এবার বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে ইংল্যান্ডকে শুধু হারায়ইনি, বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে দিয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা, এই জয়েই বাংলাদেশ প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে, যেটি ছিল তাদের প্রাপ্য।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ—মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি আর রুবেলের উল্লাস l ফাইল ছ​িব
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ—মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি আর রুবেলের উল্লাস l ফাইল ছ​িব

প্রোটিয়াদের নকআউট জয়

লোকে হয়তো সবার আগে বলবে, দক্ষিণ আফ্রিকা এখনো বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল জিততে পারেনি। পরের ধাপটি আসবে শিগগিরই। আপাতত এটি মনে রাখা উচিত যে আমরা প্রথমবার বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচ জিতেছি। ২৩ বছর আর ৭টি টুর্নামেন্ট লাগল। তবে কাঁধ থেকে ভার যেহেতু নেমে গেছে, দল এখন তাই সামনে ও ওপরে তাকানোর সুযোগ পাবে।

রিয়াজের সেই স্পেল

ব্যাটিংয়ের সময় স্লেজিংয়ের শিকার হয়ে তেতে ছিলেন রিয়াজ। অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসের নবম ওভারে বল হাতে নিয়ে তৃতীয় বলেই ফেরালেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। দশম বলে মাইকেল ক্লার্ককে। দুই বল পরই গতি ছুঁল ১৫০ কিমি, সেটা ছিল কেবল শুরু। পরের ৫ ওভার ছিল রিয়াজ আর ওয়াটসনের রোমাঞ্চকর লড়াই। ওই সময় রিয়াজের বলে ওয়াটসনের ওই ক্যাচটি না পড়লে হয়তো টুর্নামেন্টের ভাগ্যই অন্যভাবে লেখা হতো!

নিউজিল্যান্ডের ১ম ফাইনাল

দক্ষিণ আফ্রিকা যখন প্রথম নকআউট ম্যাচ জয়ের আনন্দ উপভোগ করছে, নিউজিল্যান্ড তখন সপ্তমবারের চেষ্টায় সেমিফাইনাল জয়ের পরিকল্পনা করছে। শেষ পর্যন্ত তারা দারুণভাবেই সফল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো ট্রফি জিততে পারেনি। তবে দল হিসেবে উন্নতি করার তৃপ্তি অবশ্যই থাকবে ওদের। আর এই ধারা ধরে রাখতে পারলে ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে।