কামাল 'বিদ্রোহে' বিসিসিআই যা ভাবছে

বিমানবন্দরে শ্রীনির বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন কামাল। ফাইল ছবি
বিমানবন্দরে শ্রীনির বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন কামাল। ফাইল ছবি

দুই সপ্তাহে একটা ঝড়ই গেল বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ শেষ, কিন্তু বিশ্বকাপে ঘটে যাওয়া ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। ঘটনা বলতে, সাবেক আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বনাম বর্তমান চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ‘লড়াই’। শ্রীনিকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়ে পদত্যাগ করেছেন কামাল। ঘটনা এখানেই শেষ হলে পারত। তা হচ্ছে কোথায়? এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে জুনে ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে।

বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কামাল-শ্রীনি লড়াইয়ের প্রভাব পড়বে না তো দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে? বিষয়টি এখন নির্ভর করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) ওপর। জুনে ভারত আদৌ বাংলাদেশে আসবে কি না, এ নিয়ে একটি জরুরি সভা ডাকছে বিসিসিআই। এক সপ্তাহের মধ্যেই সভাটি হওয়ার কথা। সেই সভায় কী সিদ্ধান্ত হবে?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, আইপিএল ফিক্সিং কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে আদালতের নির্দেশে বোর্ড ছাড়লেও শ্রীনিপন্থী অনেক কর্তা রয়েছেন বোর্ডে। শ্রীনির নির্দেশে তাঁরা চাইবেন কামালের ওপর ‘প্রতিশোধ’ তুলে সফরটা বাতিল করতে। বোর্ডের ওই অংশ মনে করছে, আইসিসিতে যেহেতু ভারতীয় বোর্ডের মনোনীত প্রতিনিধি শ্রীনি, তাই তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার মানে সেটি ভারতের ‘জাতীয় ইস্যু’! কাজেই এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে জুনে ভারতের বাংলাদেশ সফর বাতিল করে ‘অপমানে’র প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা তারা করবে।

তবে নরেন্দ্র মোদি সরকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পক্ষে নয়। কারণ কামাল বলেছেন, তাঁর লড়াইটা ভারতের বিরুদ্ধে নয়, শ্রীনির বিরুদ্ধে। ফলে ভারতীয় বোর্ড সফর না করার সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ সরকার হয়তো দিল্লির সঙ্গে যোগযোগ করবে। সে ক্ষেত্রে মোদি সরকারের সফরের পক্ষে সায় দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তা ছাড়া বোর্ডে এখন অনেক শ্রীনি-বিরোধী কর্তাও রয়েছেন। তাঁরা চাইবেন সফরটা হোক। তাঁদের মূল যুক্তি, লড়াইটা ব্যক্তিগত। এখানে রাজনীতি টেনে আনা কিছুতেই সমীচীন নয়।
অন্যদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে মোদির কয়েকজন মন্ত্রীও রয়েছেন। শ্রীনি-বিরোধীরা এ মন্ত্রীদের দলে টেনে শ্রীনিকে চাপে ফেলতে চাইবেন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বর্তমান বিসিসিআই প্রধান জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সখ্য পুরোনো। তিনি সভাপতি থাকার সময়ই বাংলাদেশ পেয়েছিল টেস্ট মর্যাদা এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে ভারতই এসেছিল। ফলে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে হয়তো সম্পর্কের প্রাথমিক ধাক্কাটা বিসিবি সামলে উঠতে পারবে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও আশাবাদী, দুই দেশের বোর্ডের সুসম্পর্কটা থাকবে। আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দাওয়াতও পেয়েছেন নাজমুল। তা ছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে কামাল স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁর ​বিরোধ ভারত বা বিসিসিআইয়ের সঙ্গে নয়।
তবে দুটো কারণে শ্রীনি-পন্থীরা পেরেও যেতে পারেন। আইসিসিকে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ হিসেবে অভিহিত করা এবং কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে ‘জোর’ করে হারিয়েছে ভারত, দুটো বিষয়কে রং চড়িয়ে নিজেদের মতো করে দেখাতে সচেষ্ট শ্রীনি-পন্থীরা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া এখনো এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। বোর্ডসচিব অনুরাগ ঠাকুর কেবল জানিয়েছেন, ‘সফরটা নিয়ে আগে আমাকে কথা বলতে হবে বোর্ডের বৈঠকে, তারপর বলতে পারব।’