পাকিস্তানের ক্রিকেটের 'মৃত্যু' হয়েছে!

দ্য স্পোর্টিং টাইমসে প্রকাশিত ছবির অনুকরণে পাকিস্তান ক্রিকেটের শোক গাঁথা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
দ্য স্পোর্টিং টাইমসে প্রকাশিত ছবির অনুকরণে পাকিস্তান ক্রিকেটের শোক গাঁথা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

বারবার চলে আসছে ১৬ বছর জয়বঞ্চিত থাকার প্রসঙ্গটি। আবার কেন? পরিসংখ্যান বলছে পাকিস্তানে এখন ০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যাটা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৬.৭ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও অধিক মানুষ জন্মের পর থেকে কখ​​নোই পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে হারতে দেখেনি। এর বেশি বয়স্ক যারা আছে, তারাও দেখেছে মোটে একবার। ওই সেই ১৬ বছর আগে। এত দিন পর তারা আবার পাকিস্তানকে হারতে দেখল। এ ​কি শুধু হার? রীতিমতো ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। যেটাকে বাংলাদেশিরা ডাকতে পছন্দ করে বাংলাওয়াশ নামে।
অনভ্যস্ততার কারণেই বুঝি এখনো বিষয়টি ঠিক হজম করে উঠতে পারেনি পাকিস্তানের সমর্থকেরা। বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন এক একজন। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দলের সিরিজ হার। তবু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তাঁরা যা বলছেন, তার বেশির ভাগই প্রকাশ পাচ্ছে ক্ষোভ, হতাশা আর ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তা।
এক সমর্থক টুইটারে তুলে এনেছেন ‘অ্যাশেজ’ প্রসঙ্গ। ১৮৮২ সালে ২৯ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড। ৪র্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড মাত্র ৮৫ রানের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড নিজ দেশে ​ওই সিরিজে হেরে যায়। এরপর সবচেয়ে বিখ্যাত ব্রিটিশ পত্রিকা টাইমস তাদের প্রতিবেদনে ইংল্যান্ডকে বিদ্রূপ করে একটি শোকগাথা ছাপায়। যার মধ্যে বড় করে লেখা ছিল এ রকম, ‘২৯ আগস্ট, ১৮৮২ ওভালে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মৃত্যু ঘটল।’ সেই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজের সঙ্গে এই ওয়ানডের সম্পর্কটা কোথায়? এ জন্যও বাহবা দিতে হয় পাকিস্তানি সমর্থকদের ‘কল্পনাকে’। সেই শোকগাঁথাই ফটোশপে সম্পাদনা করে অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি সমর্থকেরা। সেখানে তারিখের জায়গায় ২২ এপ্রিল ২০১৫, স্থানের জায়গায় বাংলাদেশ দিয়ে ‘পাকিস্তান ক্রিকেটের মৃত্যু’ লেখা হয়েছে। এ রকম আরেকটি ছবিতে একটি সমাধি বানানো হয়েছে। সমাধিফলকে লেখা আছে ‘পাকিস্তান ক্রিকেট, ১৯৫২-২০১৫’।

ব্যাঙ্গ করে বানানো পাকিস্তান ক্রিকেটের সমাধি। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
ব্যাঙ্গ করে বানানো পাকিস্তান ক্রিকেটের সমাধি। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত


আরেক সমর্থক টুইট করেন, ‘এরপর যদি ২০১৯, ২০২৩ এমনকি ২০২৭ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই তবু বাংলাদেশের বিপক্ষে এই হোয়াইটওয়াশের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোলা সম্ভব না।’ অনেকে আবার এর মধ্যেই টেনে এনেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীকেও। ১৯৯৯-এও একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ‘অপয়া’, তাঁর কারণেই পাকিস্তান হেরেছে। কেউ তো সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে একদম নির্লজ্জ বলে গালমন্দ করেছেন। একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘পিসিবির লজ্জা-শরম বলতে কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই আর। বোর্ড এবং নিজাম শেঠিকে এই অপমানের ব্যাখ্যা দিতে হবে।’ এসব দেখে পাকিস্তানি সমর্থকদের মনের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।
বাংলাদেশের সমর্থকদের অবস্থা অবশ্য একদম উল্টো। কাল রাতের আনন্দের আমেজ এখনো একদম টাটকা। সকাল থেকে স্কুল, কলেজ, অফিস থেকে শুরু করে রাস্তা-গাড়ি সবার আলোচনায় একটাই প্রসঙ্গ। সবার চোখ-মুখ চকচক করছে বাংলাওয়াশের আনন্দে।