কে এই নতুন বিস্ময়?

অভিষেকেই আলো ছড়ালেন মুস্তাফিজ। ছবি: শামসুল হক
অভিষেকেই আলো ছড়ালেন মুস্তাফিজ। ছবি: শামসুল হক

গতকালই সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নতুন মুখের দেখা মিলতে পারে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। সৌম্য সরকারের এটা প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হলেও আক্ষরিক অর্থে নতুন মুখ মুস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হলো ৪৪তম বাংলাদেশি ক্রিকেটারের।

মাশরাফি যখন ম্যাচের আগে ড্রেসিং রুমের সামনে ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছিলেন, মুস্তাফিজ নিশ্চয় রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলেন মনে। রোমাঞ্চ ছড়ালেন বল করতে এসেও। প্রথমে তাঁর হাতেই বল তুলে ​দিলেন মাশরাফি। শুরুতেই ওয়াইড। এর কিছু পরই দেখালেন নিজের ধার। প্রথম স্পেলে জায়গা মতো বল ফেলে দারুণ কিছু সুইংয়ে ভালোই ভোগালেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। প্রথম স্পেলে ২ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৫ রান। গতির সঙ্গে সর্পিল সুইং-বাঁহাতি পেসারের এমন রোমাঞ্চ ছড়ানো বোলিং বাংলাদেশ সর্বশেষ কবে দেখেছে! বারবার​ তাঁর বলে খাবি খাচ্ছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরলেন একাদশ ওভারে। উইকেটে তখন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের পক্ষে টি-টোয়েন্টি যাঁর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেটে যাঁর অবস্থান ছয়ে। ৫০টি ছক্কা নিয়ে ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডেও ছয়ে আছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ওয়ানডের এক সময়ের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই খেলছেন ১৯ বছর ধরে!
আফ্রিদির ৫০তম ছক্কাটি এল তাঁর বলেই। একাদশ ওভারের তৃতীয় বলে। চতুর্থ বলেই এমন সুইং করালেন, আফ্রিদি তো বটেই, বোকা বনে গেলেন আম্পায়ারও! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজারেরও বেশি রানের মালিক আফ্রিদিকে দিয়েই উইকেটের খাতা খুললেন মুস্তাফিজ। 

শেষ ওভারটা হলো আরও দুর্দান্ত। মনে রাখবেন, সেটা ইনিংসের ১৮ নম্বর ওভার। স্লগ করতে মরিয়া পাকিস্তান। প্রথম দুই বলে তিন রান নিয়ে হাফিজকে স্ট্রাইক দিলেন হারিস সোহেল। হাফিজ, টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের (১ হাজার ৩৪২) মালিক। পর পর দুই বলে সুইংয়ে পরাস্ত হাফিজ। এরপর ইয়র্কার। প্লাম্ব! এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে হাফিজও ফিরলেন সাজঘরে।
অভিষেকে মোস্তাফিজের বোলিংটা এমন: ৪-০-২০-২। ডট বলই ১৬টা! একটাও চার খাননি। একমাত্র ছক্কাটি আফ্রিদির।

মুস্তাফিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটাও খুব বেশি দিনের নয়। বছর তিনেক আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে এসে কোচদের নজর কেড়েছিলেন সাতক্ষীরার এ পেসার। এরপর নিয়মিতই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। জাতীয় দলের নেটেও নিয়মিত বল করেছেন। তবে আলো ছড়িয়েছিলেন গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। পেয়েছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ উইকেট।
অবশ্য আলোচনায় এসেছিলেন গত বছর মে মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে ডাক পেয়ে। রীতিমতো চমকই ছিলেন তিনি। তাঁকে দলে নেওয়ার যুক্তি হিসেবে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ সংবাদমাধ্যমে তখন বলেছিলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সেরা বোলার সে। হয়তো খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। তবে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া আমাদের বাঁহাতি পেসারও দরকার।’ একই যুক্তি ছিল অপর নির্বাচক হাবিবুল বাশারেরও।
প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক গত বছর এপ্রিলে। আর ছয় মাস আগে অভিষেক হয়েছে ঘরোয়া একদিনের ম্যাচে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুলনার হয়ে মাত্র আট ম্যাচ খেলেই পেয়েছেন ২৩ উইকেট। গড় ১৮.৯১, ইকোনমিক রেট ২.৬৮। আর লিস্ট এ-তে আবাহনীর পক্ষে ৫ ম্যাচে উইকেট ১২টি। গড় মাত্র ১১.৭৫, ইকোনমিক রেট ৩.৪৫। ছোট্ট এ ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে মুস্তাফিজ কতটা প্রতিভাধর। এখন সে প্রতিভার বিকাশ দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। ১৯ বছর বয়সী সেই আশার গানই শোনালেন অভিষেকে।