সেই খুলনাতেই সৌম্য

টেস্ট দলে এই প্রথম ডাক পেয়েছেন দুজন। অভিষেকের সেই তৃষিত মুহূর্তও আজ এসে যেতে পারে সৌম্য-লিটনের। কাল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে সেই রোমাঞ্চই যেন ছুঁয়ে গেল দুজনকে l শামসুল হক
টেস্ট দলে এই প্রথম ডাক পেয়েছেন দুজন। অভিষেকের সেই তৃষিত মুহূর্তও আজ এসে যেতে পারে সৌম্য-লিটনের। কাল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে সেই রোমাঞ্চই যেন ছুঁয়ে গেল দুজনকে l শামসুল হক

ফিজিও বায়েজিদ খানের সঙ্গে অনুশীলন ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ শহীদ। কাঁধে চেপে ধরে ছিলেন আইস ব্যাগ। টেস্ট শুরুর আগের দিন দৃশ্যটা আঁতকে ওঠার মতোই। পরে যদিও নিশ্চিত হওয়া গেছে শহীদ ভালো আছেন। কাল সকালে নেওয়া সিদ্ধান্ত ঠিক থাকলে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আজই টেস্ট ক্যাপ উঠবে তাঁর মাথায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যাচ্ছে এই পেসারের।
এই ম্যাচে টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন আরও একজন—সৌম্য সরকার। ১০টি ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন, টি-টোয়েন্টিও খেলেছেন একটা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়পর্ব তাই শেষ। তবে আসল ক্রিকেট টেস্ট ক্রিকেট এবং সেই আসল ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁরও পরিচয় ঘটবে আজই। আর খুলনায় অভিষেক হওয়াটা সৌম্যের জন্যই বরং বেশি রোমাঞ্চকর। প্রথম টেস্টের বাংলাদেশ দলে খুলনার চার ক্রিকেটারের একজন তিনি। রোমাঞ্চের কারণ অবশ্য সেটা নয়।
আজ যে মাঠে টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে, আড়াই বছর আগে এই শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামই সৌম্যকে উপহার দিয়েছিল বড় এক জ্বালা। ২০১২ সালের অক্টোবর। জাতীয় লিগে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ম্যাচে সৌম্য খেলছিলেন খুলনার ওপেনার হিসেবে। প্রথম ইনিংসেই এসে গিয়েছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির সুযোগ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেঞ্চুরি থেকে মাত্র চার রান দূরে থাকতে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন সোহাগ গাজীর বলে। সেই যে ব্যর্থ হলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সৌম্য সেঞ্চুরি পাননি আজও পর্যন্ত। সর্বোচ্চ ইনিংস হয়ে আছে ওই ৯৬-ই।
ম্যাচটা খুলনা শেষ পর্যন্ত ৫২ রানে জিতলেও সৌম্যের জন্য আজও সেটা বেদনার স্মৃতি। তবে সেই শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেই টেস্ট অভিষেকের সুযোগ এসে যাওয়ায় নিশ্চয়ই চাইবেন পুরোনো দুঃখ ভুলিয়ে দেওয়ার মতো কিছু করতে। সাতক্ষীরার এই তরুণও কাল দিলেন সেই প্রতিশ্রুতি, ‘খেলার সুযোগ পেলে, অবশ্যই চেষ্টা করব সেটাকে এক শ ভাগ কাজে লাগাতে। দলকে কিছু দেওয়ার জন্যই খেলব আমি।’ ওয়ানডেতে টপ অর্ডারে খেললেও টেস্টে যে সৌম্যকে ব্যাটিং অর্ডারের একটু নিচের দিকে নামতে হবে, সেই আভাস আগেই দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সৌম্যেরও সেটিতে কোনো আপত্তি নেই, ‘সুযোগ পেলে যেখানেই খেলব, ভালো খেলারই লক্ষ্য থাকবে আমার।’
খুলনার মানুষেরও নিশ্চয়ই সেটাই দাবি। আর সৌম্য দাবি জানাতে পারেন অদৃষ্টের কাছে। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিটা সেদিন পেতে পেতেও না পেয়ে অপেক্ষায় থাকতে হলো আড়াই বছর। এখন যখন শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম তাঁর জন্য সাজিয়ে দিয়েছে বড় মঞ্চ, চার রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার ক্ষতিপূরণ তো এবার সৌম্যকে উপহার দিতেই পারে অদৃষ্ট!