পাকিস্তানকে টপকে র‍্যাঙ্কিংয়ের আটে বাংলাদেশ

ওয়ানডেতে নিয়মিত সাফল্য র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে দিল বাংলাদেশকে। ছবি: শামসুল হক
ওয়ানডেতে নিয়মিত সাফল্য র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে দিল বাংলাদেশকে। ছবি: শামসুল হক

পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার সবচেয়ে বড় পুরস্কার পেল বাংলাদেশ। আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে আট নম্বরে উঠে এল বাংলাদেশ। সাত থেকে একেবারে নয়ে নেমে গেছে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র‍্যাঙ্কিংয়ে আট নম্বরের ভেতরে থাকতে পারলে আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের সামনে সুযোগ থাকছে সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও টপকে যাওয়ার। কারণ বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুদলেরই রেটিং পয়েন্ট ৮৮। ৩৫ ম্যাচে মোট ৩ হাজার ৯৪ পয়েন্ট ক্যারিবীয়দের। ২৮ ম্যাচে বাংলাদেশের মোট পয়েন্ট ২ হাজার ৪৭১। সমান রেটিং পয়েন্ট নিয়েও ভগ্নাংশের সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সাতে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্ট ৮৮.৪, বাংলাদেশের ৮৮.২৫। ছয়ে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গেও দূরত্বটা খুব বেশি নয় বাংলাদেশের। গত দুই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়ার তিক্ত স্বাদ পাওয়া ইংল্যান্ডের রেটিং পয়েন্ট ৯৩। বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র ৫ রেটিং পয়েন্ট বেশি।
জুন মাসেই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ। ঘরের মাঠে সেই সিরিজে ভালো করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নামিয়ে বাংলাদেশ সাতে উঠে যেতে পারে। তবে সাত-আট-নয় অবস্থানে থাকা তিন দলের মধ্যে ব্যবধান সামান্যই। ৪৩ ম্যাচে ৮৭ রেটিং পয়েন্ট পাকিস্তানের। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে মাত্র এক রেটিং পয়েন্ট পেছনে। ফলে তিন দলের মধ্যে রেটিং পয়েন্টের অদৃশ্য একটা লড়াই চলবে।
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে সাতে ছিল পাকিস্তান। রেটিং পয়েন্ট ছিল ৯৫। ৯২ পয়েন্ট নিয়ে আটে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ছিল ৭৬। পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুদলই বেশ কিছু রেটিং পয়েন্ট হারিয়েছে। অন্য দিকে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো ধবল ধোলাই করার ফলে বাংলাদেশের পাশে যোগ হয়েছে ১২টি রেটিং পয়েন্ট।
মোট পয়েন্টকে মোট ম্যাচ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় রেটিং পয়েন্ট। মোট পয়েন্ট যাই হোক না কেন, রেটিং পয়েন্ট দিয়েই নির্ধারিত হয় র‍্যাঙ্কিং। এ কারণে মোট পয়েন্টে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তান বেশি ম্যাচ খেলায় রেটিং পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে। র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে থাকা দল নিচের দিকে থাকা দলের সঙ্গে ম্যাচ জিতলে তুলনামূলক কম পয়েন্ট পায়। কিন্তু ম্যাচ হারলে পয়েন্ট হারায় বেশি। এই সুবিধাই পেয়েছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ যা পয়েন্ট পাবে, তার চেয়ে বেশি পয়েন্ট পাবে র‍্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দিকে থাকা দলগুলোকে হারালে।
এ কারণে জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ১১৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ভারত আছে দুইয়ে (১২৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানটি বেশ মজবুত করেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া)। সেই সিরিজে ভারতের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেবে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো ওয়ানডে সিরিজ নেই। কিন্তু এ বছর বেশ ব্যস্ততায় কাটবে বাংলাদেশের। ভারতের পর আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা, এরপর অস্ট্রেলিয়া। আগামী বছরের শুরুতে আসবে জিম্বাবুয়ে।
এ বছর সেপ্টেম্বর ৩০-এর মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ের সাতে উঠে আসতে পারলে বাংলাদেশের সামনে মিলবে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলার সুযোগও। র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা সাত দল ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড মিলে হবে এই টুর্নামেন্টটি। ২০১৯ বিশ্বকাপও যেহেতু ইংল্যান্ডে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হতে পারে বিশ্বকাপের ‘মহড়া’ টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই কাজে দেবে বিশ্বকাপে।
ফলে আটে আটকে না থেকে বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতের বিপক্ষে সিরিজটায় ভালো খেলে সাতে উঠে আসার চেষ্টা করা। সেটাই বলছিলেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘র‍্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসাটাই শেষ কথা নয়, ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা আরও ওপরে উঠতে পারি। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে।’
মাশরাফির অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ তাঁর ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সোনালি সময় পার করছে। তবে এর কোনো কৃতিত্ব মাশরাফি নিতে চান না, ‘সাফল্য তো একদিনে আসে না। একেক সময় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে একেকজন দায়িত্ব পালন করেছেন। সৌভাগ্যক্রমে আমি অধিনায়ক থাকার সময় দল আটে উঠল। ভেবেছিলাম আরও পরে হয়তো এ সাফল্য আসবে। কিন্তু আগেই চলে এল। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব এড়িয়ে সরাসরি খেলার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ কৃতিত্ব খেলোয়াড় তো বটেই; কোচিং স্টাফ, নির্বাচক-সবার প্রাপ্য।’