কাবাডিতে দুই ভাইয়ের যুগলবন্দী

আবদুল জলিল ও জিয়াউর রহমান
আবদুল জলিল ও জিয়াউর রহমান

১৯৯৫ মাদ্রাজ সাফ গেমসে আবদুল জলিল যখন একই সঙ্গে অধিনায়ক ও কোচ, জিয়াউর রহমানের সেখানে আন্তর্জাতিক অভিষেক। দুই ভাই তারপর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে অনেক সাফল্যই এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের কাবাডিকে। ভাইয়ের পথ ধরে জিয়া জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন অনেক দিন। জলিল খেলোয়াড় হিসেবে জিয়াকে পেয়েছেন জাতীয় দলেই।
এবার জীবনের নতুন এক বাঁকে দাঁড়িয়ে দুই ভাই। কোচ জলিলের সহকারী ছোট ভাই জিয়া। এসএ গেমসে বাংলাদেশ মহিলা দলের কোচ করা হয়েছে জলিলকে, সহকারী কোচ হিসেবে তাঁর সঙ্গে জিয়াকে জুড়ে দিয়েছে কাবাডি ফেডারেশন।
জিয়া খেলা ছেড়েছেন গত বছর এশিয়ান গেমসের পরপর। সেই থেকে তিনি নিজের দল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কোচ, খেলোয়াড় থেকে কোচের ভূমিকায় এবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন করেছেন বিজিবিকে। জাতীয় খেলাটির সর্বোচ্চ মঞ্চে আগমনী বার্তাটাও জানান দিয়েছেন কোচ হিসেবে।
আরেক ধাপ এগিয়ে এবার নাম লিখিয়েছেন আন্তর্জাতিক স্তরে। জাতীয় দলের সঙ্গে দুই ভাইয়ের যুগলবন্দীটা ভালো হবে, এই আত্মবিশ্বাস দুই ভাইয়ের মধ্যেই প্রবল। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে মহিলা কাবাডির আত্মপ্রকাশ ২০০৬ কলম্বোয়, প্রথমবার আসে ব্রোঞ্জ। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে এক ধাপ এগিয়ে রুপা জয়। তবে গত বছর থাইল্যান্ডের ফুকেটে এশিয়ান বিচ গেমসে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে খালি হাতে ফেরাটা বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য ছিল হতাশার। সেই শ্রীলঙ্কাকে এবার হারিয়ে এসএ গেমসের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন বাংলাদেশের। জলিল বলছিলেন, ‘ফাইনালে খেলার লক্ষ্যটা পূরণ করতে চাই।’
জলিল মূলত পুরুষ দলের কোচ, তবে মেয়েদের দলেও কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে হায়দরাবাদে এশিয়ান মহিলা কাবাডি থেকে এনেছেন ব্রোঞ্জ। মাঝে বিরতি দিয়ে বার কয়েক মহিলা দল দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এবারও ফেডারেশনের বিশ্বাস, দলটাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে জলিলই সেরা পছন্দ।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে এশিয়াডে রুপা জয়ের গৌরব সঙ্গী জলিলের, মহিলা দলের চ্যালেঞ্জটা তাঁর কাছে এমন বড় কিছু নয়। নিজেই বলেন, ‘যখন যে দায়িত্ব পাই, সেটিই ভালোভাবে পালনের চেষ্টা করি।’ এবার ছোট ভাইকে সহকারী হিসেবে পেয়ে আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়েছে, ‘দুই ভাই মিলে ভালো কিছু দিতে চাই দেশকে।’ কোচ জিয়াকে এই কদিনে দেখে ভালোই লেগেছে জলিলের, ‘জিয়া বিশ্বসেরা রেইডার ছিল একসময়। ওর মতো খেলোয়াড়ের কোচিংয়ে আসা কাবাডির জন্যই ভালো খবর। এখন পর্যন্ত যা দেখলাম, সফল কোচ হওয়ার সব গুণই ওর আছে।’
বড় ভাই শুধু নন, জিয়ার কাছে জলিল কখনো বাবা, কখনো শিক্ষক, কখনো বন্ধু। এই দুই ভাইয়ের গল্পটা অনেক ডালপালা ছড়ানো। নানাভাবেই ভাইকে দেখেছেন জিয়া, পাশে পেয়েছেন। ভাইয়ের কোচিং অভিজ্ঞতার ভান্ডার এমনই সমৃদ্ধ যে, খেলোয়াড় হিসেবে এশিয়াডে রুপাজয়ী জিয়ার কণ্ঠে মুগ্ধতাই ছড়ায়, ‘ভাই তো অনেক দিন ধরেই কোচিংয়ে আছেন। বিশাল তাঁর অভিজ্ঞতা। আশা করি তাঁর কাছে অনেক কিছু শিখতে পারব, তিনি আমার ভাই, গুরু, সবই।’
সবকিছু ছাপিয়ে দুই ভাই আপাতত মহিলা কাবাডি দলের স্বপ্নের কান্ডারি।