ঢাকা আবাহনীর জয়ের হাসি

গ্যালারির দিকে তাকিয়ে অনেকেরই হয়তো মন খারাপ হয়েছে। চট্টগ্রামের ফুটবলে এত বড় আয়োজন, অথচ অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা। কিন্তু তাই বলে প্রাণস্পন্দন তো থেমে থাকবে না।
না, তা থাকেনি। বরং সেই স্পন্দন ছড়িয়ে দিল ঢাকা আবাহনী। তাদের ক্লাব প্রতিষ্ঠাতার নামে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কাল শুরু হয়েছে এই ফুটবল-যজ্ঞ। সেটার শুভসূচনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল আবাহনীই। প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক জয় তুলে স্থানীয় দর্শক, সংগঠক, আয়োজকদের মুখে হাসিও ছড়িয়ে দিল আকাশি নীলেরা।
জয়টা ৩-২, শুধু স্কোরলাইন আবাহনীর দাপট বোঝাতে পারছে না। জয়টা আরও বড় হতে পারত। দ্বিতীয়ার্ধে ‘ক্লান্তি’ আর খেলোয়াড়দের অতি আত্মবিশ্বাসের খেসারতে তা আর হলো কই!
পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে তাদের শুরুটা ছিল বেশ সতর্ক। মিনিট দশেক প্রতিপক্ষকে ‘দেখে’ আক্রমণে ওঠা, এরপর দ্রুতগতির ফুটবল খেলে দুদুটি নজরকাড়া গোল আদায়। এসবই আবাহনীকে তুলে ধরছিল গোছানো এক দল হিসেবে।
সানডের সঙ্গে কেস্টার আকনের রসায়নটাও বেশ জমেছিল। দুজনই কাঁপিয়ে দিচ্ছিলেন প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ। মাঝমাঠ থেকে বল তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন ইমন বাবু। দুই উইং ব্যাক নাসিরুল ও ওয়ালি ছিলেন দুর্বার।
ওয়ালি তো গোলও করে বসলেন! পুরোনো দলের জার্সি গায়ে এদিন ২৩ মিনিটে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত ফ্রি কিক নিলেন, বাঁদিকে ঝাঁপিয়েও নাগাল পেলেন না করাচি ইলেকট্রিকের গোলরক্ষক গুলাম নবী (১-০)। মিনিট সাতেক পর সানডের গোলটিও মনে রাখার মতো। ইমন বাবুর বাড়ানো বল বক্সের ঠিক ওপরে পেলেন। গোলরক্ষককে এগিয়ে থাকতে দেখে শূন্যে বলটা রেখেই বুদ্ধিদীপ্ত হেডে পাঠালেন জালে।
করাচি ইলেকট্রিকের স্ট্রাইকার মোহাম্মদ রসুলই পাকিস্তান জাতীয় দলেরও ‘নাম্বার নাইন’। বক্সের প্রান্ত থেকে দারুণ শটে ২-১ করলেন ৭৫ মিনিটে। যেন সবাইকে বললেন, ‘দেখো আমাকে!’ অবশ্য মিনিট দুয়েক পরই ওয়ালির ফ্রি কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে ইলেকট্রিকের এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে জালে। ৩-১ ম্যাচটা শেষ মিনিটে গোলরক্ষক জিয়ার ভুলে পেনাল্টিতে ৩-২ করলেন সানডে। না, নাম শুনে চমকাবেন না। ইনি করাচি ইলেকট্রিকের সানডে, বাড়ি নাইজেরিয়া।
পাকিস্তানে ঘরোয়া ফুটবল বিরতি চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা খেলায় ছিলেন না। তবু ভালোই লড়াই করেছেন এই সানডেরা। প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কৌশল পাল্টে। ব্রিটিশ ফুটবলার জন আন্দ্রে প্রথমার্ধে সুবিধা করতে পারছিলেন না পরিবেশের সঙ্গে মানাতে না পেরে। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁকে তুলে ওয়েলসনকে মাঠে পাঠিয়ে কোচ একটা সুযোগ নিলেন। তাতে কাজও হয়েছে। মাঝমাঠ থেকে প্রচুর বল বের করলেন ওয়েলসন, যা থেকে গোলও করে ফেলেছে করাচি ইলেকট্রিক।
ম্যাচে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান কিংবা স্কোরলাইন যা-ই হোক, করাচি কোচ কিন্তু মনে করেন, ড্র-ই হতো ন্যায্য ফলাফল। মাজেদ শফিক বলেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, এক পয়েন্ট পেলেই খুশি হতাম।’ ওদিকে আবাহনী কোচ অমলেশ সেন জেতার তৃপ্তির চেয়ে বেশি অতৃপ্ত দল শেষ দিকে অটুট রক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বলে, ‘৯০ মিনিট আমরা একইভাবে খেলতে পারিনি। তবে প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সে ছেলেদের প্রশংসা অবশ্যই করব।’
প্রথমার্ধের আবাহনীর তো একটা করতালিও প্রাপ্য।
আবাহনী: জিয়া, মামুন মিয়া, ওয়ালি ফয়সাল, তপু, সামাদ, নাসির, ইমন, প্রাণতোষ (কোমল), শাহেদুল (ফাহাদ), কেস্টার আকন, সানডে