কোথায় হারালেন সেই ধোনি!

মাঠে এখন আর ‘ক্যাপ্টেন কুল’ থাকতে পারছেন না ধোনি। ছবি: এএফপি
মাঠে এখন আর ‘ক্যাপ্টেন কুল’ থাকতে পারছেন না ধোনি। ছবি: এএফপি

‘ক্যাপ্টেন কুল’। মাঠে দল যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন সব সময় ধীর-স্থির। ঠান্ডা মাথায় অবিশ্বাস্য সব জুয়া খেলতে জানেন। ম্যাচের যে পরিস্থিতিতে যে বোলারকে দিয়ে কেউ বল করানোর সাহস দেখায় না, তিনি তাঁর হাতেই তুলে দিতে পারেন বল। নাম না বলে দিলেও চলবে কার কথা হচ্ছে। নিজের ক্রিকেটকে আলাদা একটা ‘ব্র্যান্ড’ দেওয়া সেই মহেন্দ্র সিং ধোনিকে চেন এখন চেনা যায় না। এই ধোনি অনেক হিসেবি, পা ফেলেন টিপে টিপে। এই ধোনি ঝুঁকি নেওয়ার আগে ভাবেন দশবার।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখে মনে হচ্ছে, এক সময় ফলাফল নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ‘নিরাসক্ত’ ধোনি বদলে যাচ্ছেন। ধোনি এখন খুব করেই ভাবেন ম্যাচে জিততে যাচ্ছে কে। কখনো কখনো ম্যাচ জিততে তিনি এতটাই মরিয়া, চলতি সিরিজেই যেমন একবার অন্যায় আপিল করেছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফারহান বেহারডিয়েনের ব্যাটে না লাগার পরও ধোনি জোরালো আবেদন করেন। আম্পায়ারের ওঠে যাওয়া তর্জনী ওই ম্যাচের ফলাফলে বড় প্রভাবকও ছিল।
ধোনির এই বদলে যাওয়া নিয়ে সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার ক্রিকইনফোতে বড়সড় কলামই লিখে ফেলেছেন। অনেক দিন ধরে ধারাভাষ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন মাঞ্জরেকার ধোনিকে চেনেন শুরুর দিনগুলো থেকেই। দশ বছর ধরে ধোনিকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরও প্রশ্ন, আগের সেই ধোনি কি আর আছে! এই ধোনি তো যেকোনোভাবে ম্যাচ জিততে মরিয়া!
ক্রিকেটার ধোনির অর্জনই ভারতীয় ক্রিকেটে আলাদা হয়ে থাকবে। তাঁর মতো ফিনিশার ভারতীয় ক্রিকেট তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেও বিরল। অবশ্য ব্যাটিংয়ের চেয়ে ধোনিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তাঁর অধিনায়কত্ব। ম্যাচের উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলোতে চোখ কপালে তোলার মতো অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত আর সেই ফাটকাগুলো বারবার কাজে লাগিয়ে ফেলাতেই নিজেকে আলাদা করেছিলেন ধোনি।
কিন্তু ইদানীং অধিনায়ক ধোনি অনেক বেশি রক্ষণাত্মক। এমনও ম্যাচ দেখা যাচ্ছে, ধোনি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পাঁচ বোলারকেই ব্যবহার করছেন, চেনা পথের বাইরে পা ফেলতে যেন ভয়! দরকার হলে একঘেয়ে ক্রিকেট খেলেই জিততে আগ্রহী। কেবল অধিনায়কত্বে নয়; মাঠেও তাঁর আচরণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ এখন কখনো কখনো আর ‘কুল’ থাকতে পারেন না। আগে মাঠে কোনো সিদ্ধান্ত নিজের পক্ষে না পেলে কেবল কাঁধ ঝাড়া দিয়েই পরের বলের দিকে নজর দিতেন। কিন্তু ইদানীং মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, হেরে গেলে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কত ব্যাখ্যা হাজির করেন, যেগুলো অজুহাতের মতো শোনায়।
অথচ আগে দলের পরাজয় অনায়াসে নিজের কাঁধে তুলে নিতেন। এখন দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘আমরা’ সর্বনামের পরিবর্তে ‘ওরা’ ব্যবহার করেন। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, নিজের চেনা জানা খোলস ভেঙে পুরোপুরি অন্য এক ধোনিতে রূপান্তরিত হচ্ছেন। দলে নিজের জায়গা ধরে রাখার আকুতিতেই কি ধোনির এমন পরিবর্তন? নাকি বরাবরের ‘একলা পথিক’ একলা চলতে চলতে বড্ড ক্লান্ত!
মাঞ্জরেকারের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার কিংবা সাহসী সহিসটি হয়তো আচমকা অবসরের সিদ্ধান্তও নিয়ে নিতে পারেন। সময়ও তো ফুরাল! তবে ধোনির এমন প্রস্থান ক্রিকেটের জন্যই হবে দুঃখজনক ঘটনা। ধোনি বরং ফিরে আসুন ‘ধোনি’তেই!