ম্যারাডোনার আত্মজীবনীর শুরুতেই বাংলাদেশ!

>ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্য কোনো ভূমিকা লাগে না! আজ এই জীবন্ত কিংবদন্তির জন্মদিন। এ নিয়ে বিশেষ ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব—
১৯৯৪ বিশ্বকাপ, ডোপ টেস্ট দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ম্যারাডোনাকে। ফাইল ছবি
১৯৯৪ বিশ্বকাপ, ডোপ টেস্ট দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ম্যারাডোনাকে। ফাইল ছবি

এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। প্রায় কুড়ি হাজার কিলোমিটার দূরের দুটো দেশ। দূরত্বের চেয়েও বেশি দূরত্ব দুই দেশের ভাষায়। সংস্কৃতিতে। কিন্তু মিল আছে একখানে। আবেগের উথলানো জোয়ারে। দুই দেশের মানুষই ভীষণ রকমের আবেগী।

আর সেই আবেগটাই যেন নাড়ির বন্ধন হয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দূরের আর্জেন্টিনাকে এই দেশের মানুষ ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছে। ফুটবলের সূত্রে তো বটেই, তবে তার চেয়েও বড় যোগসূত্রের নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা, সেই ফুটবলার, যিনি খেলাটাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। অনেক দূরের সেই দেশের সেই খ্যাপাটে মানুষটাকে বাংলাদেশ নিজের ঘরের ছেলের মতো ভালোবাসা দিয়েছে। দিচ্ছে এখনো।
ম্যারাডোনার সাড়া জাগানো আত্মজীবনীর ‘এল ডিয়েগো’র শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রসঙ্গের সূত্র ধরে এসেছে বাংলাদেশের নাম। মূল স্প্যানিশ থেকে বইটি ইংরেজিতে অনু্বাদ করেছেন মার্সেলা মোরা আরাউজো। বইটি শুরুই হয়েছে আরাউজোর ভূমিকা দিয়ে। আর সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মনে আছে, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হয়ে কাজ করার সময় একটা স্টোরি নিয়ে গবেষণা করছিলাম। সে সময় খুঁজে পেয়েছি, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে যখন বহিষ্কার করা হলো, বাংলাদেশে এত মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, সেটা রীতিমতো গণ-আত্মহত্যার চেষ্টায় রূপ নেয়।’
সেই বিশ্বকাপে ডোপ টেস্টে ধরা পড়েছিলেন ম্যারাডোনা। তিনি এ দেশের কেউ নন। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়লে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি বা লাভের কিছুই নেই। কিন্তু ঠিক আগের দুটো বাক্য মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে এ কারণে, কোনো সম্পর্ক না থেকেও যেন কী এক অদ্ভুত সম্পর্কে বাঁধা বাংলাদেশ আর আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার শোকে পুরো বাংলাদেশ কেঁদে ওঠে। অনেকেই আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে চায়।
আজ এতগুলো বছর পরেও, বাংলাদেশের কোনো চায়ের দোকানে হয়তো আপনি মশগুল আড্ডার ছেঁড়া সংলাপে শুনতে পাবেন, ‘...সেটা ছিল ম্যারাডোনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
ম্যারাডোনাকে ভালোবেসেই এই দেশের মানুষ আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছে। আর সেই ভালোবাসা আজও বহমান, অথচ ম্যারাডোনা-যুগ শেষে আর্জেন্টিনার বলার মতো কোনো সাফল্যই নেই, অন্তত শিরোপা বিচারে। ম্যারাডোনা সেই যে জাদু দেখিয়ে গিয়েছিলেন, সেটার ঘোর যেন থেকে গেছে আজও!

আগামীকাল পড়ুন: ম্যারাডোনা যখন ক্যারাডোনা!