টুকরো টুকরো ছবি

‘নো’ রুবেল

নো বলের সঙ্গে রুবেল হোসেনের সম্পর্কটা বরাবরই দারুণ। টেস্ট অভিষেকে ১১টি নো বল করে শুরু। এরপর কোনো টেস্টেই রুবেল আর নো বলকে আলাদা করা যায়নি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই টেস্টের আগে ১৬ টেস্টে ৯৫টি নো করেছেন রুবেল! তবে তাঁকে এবং দলকে সবচেয়ে বেশি পোড়াল বুঝি ক্যারিয়ারের ৯৬তম নো বলটি। কাল মাত্র ৪ রানেই গালিতে ক্যাচ বানিয়েছিলেন বিজে ওয়াটলিংকে। নো বলের কারণে নতুন জীবন পেয়ে ওয়াটলিং কী করেছেন, সেটা আপনারা জানেন।

ওয়াটলিং আবার

কথায় আছে, বিড়ালের নাকি জীবন থাকে নয়টি। কাল বিজে ওয়াটলিং দেখালেন, ‘জীবন’ তাঁরও কম নয়! রুবেলের নো বলে ক্যাচ হয়েও বেঁচে যাওয়ার পর আউট হতে হতেও বেঁচে গেলেন সাকিবের বলে। ২৬ রানে ব্যাট করছিলেন তখন। সাকিবের বলে ডিফেন্স করেছিলেন, বল ব্যাটের কানায় লেগে ওয়াটলিংয়ের পায়ের পেছন দিক দিয়ে গড়িয়ে চলে গেল স্টাম্পে বাতাস লাগিয়ে!

পাটকেল

ক্রিকেট তাঁর অনুঘটকদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই রসিকতা করতে ভালোবাসে। কাল যেমন সেই রসিকতার শিকার হলেন নাসির হোসেন। না হলে নিউজিল্যান্ড যখন চার শর দোরগোড়ায়, তখনই কেন নাসিরের হাতে বল তুলে দেবেন মুশফিক! আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নাসির বলেছিলেন, চার শ করতে দেবেন না নিউজিল্যান্ডকে। কাল সেই নাসিরের ওভারেই চার শ ছুঁয়ে ফেলল নিউজিল্যান্ড।

বোল্টের জোড়া ফিফটি

লোকে এক ঢিলে মারে দুই পাখি। ট্রেন্ট বোল্ট কাল এক দিনে মারলেন দুই ফিফটি। প্রথমে ব্যাট হাতে, পরে বল হাতে! ব্যাটিংয়ে তাঁর অপরাজিত ৫২ প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারেরই প্রথম ফিফটি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে এগারোতে নেমে ফিফটি করেছেন কেবল রিচার্ড কলিঞ্জ (৬৮*)। মজার ব্যাপার হলো, বোল্টের মতো কলিঞ্জও ছিলেন বাঁহাতি পেসার, কিন্তু ব্যাটসম্যান ডানহাতি! কাল বোল্টের দ্বিতীয় ফিফটি এসেছে বল হাতে প্রথম বৈধ বলেই। তামিম ইকবালকে আউট করে ছুঁয়েছেন ৫০ টেস্ট উইকেট। এখানেও সবার ওপরে কলিঞ্জ। তাঁর ১১৬ উইকেট বাঁহাতি কিউই পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

দুটিতে দুই

দুটি রেকর্ডের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল ওয়াটলিং-বোল্ট জুটি—শেষ উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান ও নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রান। তবে শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানের জুটিতে দুটি রেকর্ডেই থাকতে হচ্ছে দুইয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি ২০০৪ সালে শচীন টেন্ডুলকার ও জহির খানের ১৩৩। নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি রিচার্ড কলিঞ্জ ও ব্রায়ান হেস্টিংসের ১৫১। শেষ উইকেট জুটির বিশ্ব রেকর্ডটি কদিন আগেই গড়েছেন ফিল হিউজ ও অ্যাশটন অ্যাগার। গত অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে ট্রেন্ট ব্রিজে ১৬৩।

‘সোনার হাঁস’

রূপকথার সোনার হাঁস যতটা রোমাঞ্চকর, ক্রিকেটে গোল্ডেন ডাক ততটাই দুঃস্বপ্ন ব্যাটসম্যানদের জন্য। কাল প্রথমবার সেই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হলেন তামিম ইকবাল। টেস্টে প্রথম বলে আউট হলেন প্রথমবার। টেস্টে তামিমের আগের তিনটি ‘শূন্য’ ছিল ২, ৬ ও ৮ বলে। ২০০৮ সালে ডেল স্টেইনের বলে ব্যাট-প্যাড ফিরতি ক্যাচ, ২০০৯ সালে চামিন্ডা ভাসের বলে কট বিহাইন্ড, ২০১০ সালে জহির খানের বলে বোল্ড। কাল ট্রেন্ট বোল্টের বলে ক্যাচ গালিতে।

উল্টোরথে

সৌভাগ্যের দেখা সবাই পান না। অনেকে আবার পেলেও সৌভাগ্যের রথ চালাতে জানেন না।  নো বলে জীবন পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগালেন বিজে ওয়াটলিং। আর এনামুল হক দেখালেন সৌভাগ্য কীভাবে পায়ে ঠেলতে হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব ভালো ফর্মে না থাকার পরও সুযোগ পেয়েছেন টেস্ট দলে জায়গা পাকা করার। নির্বাচকদের পর কাল পাশে পেলেন ভাগ্যকেও। ডগ ব্রেসওয়েলেরে বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও নতুন জীবন পেলেন নো বল হওয়ায়। কিন্তু টিকতে পারলেন আর মাত্র তিনটি বল। সেই ব্রেসওয়েলেরই ভেতরে ঢোকা এক বলে এলবিডব্লু মাত্র ৩ রানে।

মার্টিন ও বোল্ট

ক্রিস মার্টিনের সম্ভাব্য উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছে ট্রেন্ট বোল্টকে। তবে যেভাবে পারফর্ম করছেন, তাতে সম্ভাবনা এখন রূপ নিয়েছে শঙ্কায়! না, বোলিংয়ের কথা বলা হচ্ছে না। মার্টিনের পর কিউই পেস আক্রমণের নেতা হওয়ার পথে ঠিকমতোই এগোচ্ছেন বোল্ট। কিন্তু পুরোপুরি ‘হতাশ’ করছেন ব্যাটসম্যান বোল্ট। মার্টিনের মতো এগারোতে ব্যাটিং করেন তিনিও। কিন্তু ‘টিপিক্যাল নম্বর ইলেভেনের’ লেশমাত্র নেই ব্যাটিংয়ে! এখনই যেমন ছাড়িয়ে গেছেন মার্টিনকে। ৭১ টেস্টের ক্যারিয়ারে মার্টিন মেরেছেন ১৫ চার, ১৬ টেস্টেই বোল্টের ১৭ চার হয়ে গেছে। সঙ্গে মেরেছেন এক ডজন ছক্কা, অথচ মার্টিনের এক জীবন শুধু ছক্কার স্বপ্ন দেখেই কেটে গেছে। মার্টিনের টেস্ট রান মোট ১২৩, বোল্ট এখনই ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছেন (২১১)। মার্টিন দুই অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন মাত্র একবার, বোল্ট ২৫ ইনিংসেই ছুঁলেন সাতবার। কাল তো ফিফটিই করে ফেললেন। সবচেয়ে বড় কথা, মার্টিনের ব্যাটিং যেখানে ‘কীভাবে ব্যাটিং করা উচিত নয়’-এর উদাহরণ, বোল্টের ব্যাটিং সেখানে লোয়ার অর্ডারদের জন্য হতে পারে কোচিং ম্যানুয়াল! কিউইরা তাতে খুশি হলেও ক্রিকেটপ্রেমীরা মিস করছেন নির্মল বিনোদন। বাংলাদেশ তো কাল নিশ্চিতভাবেই মিস করেছে মার্টিনকে!

আরিফুল ইসলাম