পাঁচে-পাঁচ করে ফেলল বাংলাদেশ!

লাল-সবুজ উদযাপন চলছেই! ছবি: শামসুল হক
লাল-সবুজ উদযাপন চলছেই! ছবি: শামসুল হক

প্রথম ওয়ানডের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও প্রায় একই চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি। এবারও টসে জিতে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল, এবারও রান তাড়া করতে গিয়ে জিম্বাবুয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল। আজকের জয়ে বাংলাদেশকে একটু বেশি ঘাম ঝরাতে হয়েছে, পার্থক্য এই যা! শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টানা পাঁচটি সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই লড়াইয়ের ঝাঁজ ছিল তাদের বোলিংয়ে। বাংলাদেশকে ২৪১ রানে আটকে ফেলেও অবশ্য শেষ পর্যন্ত পারল না। ৪৩.২ ওভারে ১৮৩ রানেই অলআউট হয়ে গেল। প্রথম ওয়ানডের পর এবারও দুশো পেরোতে পারল না তারা। এই সিরিজে এখন পর্যন্ত তাদের প্রাপ্তি দুটো টস জয়। সেখান থেকে বের হতে না পারলে বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ৩-০-ই হয়তো অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। গতবার জিম্বাবুয়ে হেরেছিল ৫-০ ব্যবধানে।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। সেটা জিম্বাবুয়ের বোলারদের কৃতিত্ব তো বটেই, তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও দায় আছে। দলের ৩২ রানেই ফিরে যান তামিম ইকবাল। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে। তবে একপাশ আঁকড়ে ছিলেন ইমরুল কায়েস। এই বছরের বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে দলে ব্রাত্যই ছিলেন। ফিরেই খেললেন ৭৬ রানের ঝকঝকে একটা ইনিংস। আরেকটা কারণেও এই ইনিংসটা অনেক দিন মনে রাখবেন ইমরুল, সাত ম্যাচ পর যে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারলেন!
সেঞ্চুরির সুবাসই পাচ্ছিলেন ইমরুল, তবে শন উইলিয়ামসকে ছক্কা মারার পরের বলেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে অপমৃত্যু হয়েছে সম্ভাবনাময় ইনিংসের। আরও একবার ব্যর্থ লিটন দাশ (৭) ও মাহমুদউল্লাহ (৪)। বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ ওই টুর্নামেন্টের পর সাত ইনিংসে পঞ্চমবারের মতো আউট হলেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। আজকের ৪ রান তুলতে তাঁর ২০ বল খেলাও যেন সেই আত্মবিশ্বাসহীনতার প্রতিচ্ছবি।
গত ম্যাচের নায়ক মুশফিকও (২১) ইনিংসটা খুব বড় করতে পারেননি। সাব্বিরও ভালো শুরু করেও আউট হয়ে যান ৩৩ রানেই। মাশরাফিকে নিয়ে নাসির দলকে আড়াই শ পার করে ফেলবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ২৩২/৫ থেকে ২৪১/৯ রানের মধ্যেই শেষ চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। নাসিরের ৪১ রানই ছিল দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জিম্বাবুয়ের সফলতম বোলার ছিলেন তিনাশে পানিয়াঙ্গারা, ৪১ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। শেষ চার ওভারে মাত্র ১৪, বাংলাদেশের স্কোরটাও তাই ২৪১-এ থমকে গেল।
এই পুঁজি নিয়ে যেমন বোলিং শুরু করা দরকার, বাংলাদেশ তেমনই শুরু পেল। জিম্বাবুয়েকে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছেন আরাফাত সানি, ২২ রানেই ফিরিয়ে দিয়েছেন চাকাভাকে। ঠিক চার বল পরেই ফিরে গেছেন চিবাবা, এবার শিকারি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ক্রেইগ আরভিন (২৬) ও শন উইলিয়ামসও (১৪) বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকেননি। ম্যাচটা তখন জিম্বাবুয়ের মুঠো থেকে বেরিয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছিল।
এরপর এলটন চিগুম্বুরা ও সিকান্দার রাজা আবার আশা দেখাতে শুরু করেন তাদের। কিন্তু ৭৩ রানের জুটি গড়ার পর রাজা (৩৩) ও চিগুম্বুরা (৪৭) ফিরে গেছেন তিন ওভারের মধ্যেই। দুজনকেই ফিরিয়েছেন আল আমিন, দুইটি ক্যাচই ধরেছেন ইমরুল কায়েস। শেষদিকে নাসিরকে নিয়ে লেজটা মুড়ে দিয়েছেন মুস্তাফিজ, ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এই বাঁ-হাতিই বাংলাদেশের সফলতম বোলার। দুটি করে উইকেট আল–আমিন ও নাসিরের।
জিম্বাবুয়েকে দিয়েই শুরু হয়েছিল। আবারও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরও একটি সিরিজ জয়। বলতে পারেন বৃত্ত পূরণ। তবে বৃত্ত পূরণ মানে তো আবার শেষও। গত বছরের শেষাশেষি জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে যে স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ, টানা পাঁচ সিরিজ জয়ের পরও সেই যাত্রার শেষটা হবে না নিশ্চয়ই। জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবারও জিম্বাবুয়ে—ঘরের মাঠে এই হলো বাংলাদেশের টানা পাঁচ সিরিজ জয়ের আখ্যান। যে আখ্যান সোনালি ভবিষ্যতের গানই শোনাচ্ছে। উঁচু থেকে আরও উঁচুতে নিজেদের নিয়ে যাবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল, সেই প্রতিশ্রুতির গান শোনা গেল আরও একবার।