১৩ বছরে টেস্টে যা কিছু অর্জন

হাবিবুল বাশার: টেস্ট ক্রিকেটে এখনো বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সাবেক এই অধিনায়কের। ফাইল ছবি
হাবিবুল বাশার: টেস্ট ক্রিকেটে এখনো বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সাবেক এই অধিনায়কের। ফাইল ছবি

টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন মঞ্চে দেখতে দেখতে ১৩টি বছর কাটিয়ে দিল বাংলাদেশ। এই ১৩টি বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছে আনন্দ-বেদনার কাব্য হয়ে। ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হলেও এই ১৩ বছরের যাত্রায় আমরা এগিয়ে গিয়েছি অনেকটা পথও। ব্যর্থতা অমানিশা আমাদের ওপর চেপে বসলেও এই ১৩ বছরে আমাদের আলোকোজ্জ্বল প্রাপ্তিও আছে অনেক।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ৪০০ রান। আমিনুল ইসলামের ব্যাট থেকে এসেছিল অনন্য-অসাধারণ এক শতক। অধিনায়ক নাঈমুর রহমান একাই বধ করেছিলেন ছয়জন ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে। তবে বন্ধুর এই পথ চলার শুরুটা আশাপ্রদ হলেও প্রায়ই আমরা পথ হারিয়েছি। ব্যর্থতার আঘাতে জর্জরিত হয়েছি বারবারই। আক্ষেপও আমাদের সঙ্গী হয়েছে অনেকবার। কিন্তু দুস্তর এই পারাবারে আমরা শিখেছি অনেক কিছু। গত ১৩ বছরের এই শিক্ষাকে পাথেয় করে ভবিষ্যতে পথচলার গতিকে আরও বাড়িয়ে তোলাই হোক টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ বার্ষিকীর প্রত্যাশা।
গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে মোট ৮১টি। এর মধ্যে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়েছে বেশির ভাগ টেস্টেই। জয় এসেছে মাত্র ৪টিতে। ১০টি টেস্ট শেষ হয়েছে অমীমাংসিতভাবে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (১৪টি)। সবচেয়ে কম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (৪টি)। বাংলাদেশের ঘরের মাঠে খেলা টেস্টের সংখ্যা ৪১টি; বিদেশের মাটিতে ৪০টি। তবে জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের বিদেশের মাটিতেই ‘ভালো’। ভিনদেশে ৩টি জয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে এসেছে ১টি। তবে দেশের মাটিতে ৭টি ম্যাচ ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৬৭টি পরাজয়ের দীর্ঘ মিছিলে ইনিংস-ব্যবধানে হার ৩৫টি। বাংলাদেশ দুটি করে ম্যাচে জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

নিজেদের প্রথম ইনিংসেই ৪০০ করে ফেলা বাংলাদেশ টেস্টে ৪০০ কিংবা তার চেয়েও বেশি স্কোর করেছে দশবার। এ বছর গলে যেমন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৩৮ করেছিল বাংলাদেশ। এটাই তাদের সর্বোচ্চ স্কোর। ১০০-এর নিচে অলআউট হওয়ার লজ্জায় বাংলাদেশ পড়েছে আটবার। সর্বোচ্চ স্কোরের মতো বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরটাও শ্রীলঙ্কারই বিপক্ষে। ২০০৭ কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ৬২ রানে। বাংলাদেশের সর্বনিম্ন পাঁচটি স্কোরের চারটিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সবগুলোই অবশ্য মুরালিধরন-যুগে।

টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের। এ বছর রান-উত্সবের সেই গল টেস্টে দ্বিশতকের কীর্তি গড়েছেন মুশফিক। সর্বোচ্চ ক্যারিয়ার রান সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের (৩০২৬)। হাবিবুল ছাড়া তিন হাজার রানের কোটা পেরোয়নি আর কেউই। সর্বোচ্চ ছয়টি সেঞ্চুরি মোহাম্মদ আশরাফুলের। সর্বোচ্চ ১৬ বার শূন্য রানেও আউট হওয়ার রেকর্ড তাঁরই। সর্বোচ্চ ২৭টি ফিফটি করেছেন হাবিবুল। সবচেয়ে বেশি চার মারার রেকর্ডটিও হাবিবুলের (৪০১টি)। সবচেয়ে বেশি ছক্কা (৩৪টি) হাঁকিয়েছেন মোহাম্মদ রফিক।

বোলিংয়েও বাংলাদেশের অর্জন কিন্তু কম নয়। এই তোরো বছরে টেস্টে এসেছে দুটি হ্যাটট্রিক। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অলক কাপালির হ্যাটট্রিক কীর্তির পর এ বছরই চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সোহাগ গাজীর আরও একটি হ্যাটট্রিক বল হাতে এদেশের বোলারদের ঠাঁই দিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। টেস্ট ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট-শিকারী সাকিব আল হাসান। ১১৩ উইকেট নিয়ে তিনি ছাড়িয়ে ড়েছেন সবাইকে। কিন্তু টেস্টে প্রথম ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ডটা কিন্তু মোহাম্মদ রফিক রেখে দিয়েছেন নিজের কাছেই।

তবে বাংলাদেশের অর্জন তো শুধু পরিসংখ্যানে নয়। বাংলাদেশ বিশ্ব সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার খুঁজে পেয়েছে সাকিব আল হাসানের মধ্যে। বাংলাদেশ পেয়েছে মুমিনুল হকের মতো উদীয়মান প্রতিভা। যাঁরা সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানিই দিচ্ছেন বাংলাদেশের সামনে।