সৌন্দর্যের মধ্যে আছে প্রশ্নও

দূরে ঝাউবন, তারপরই বঙ্গোপসাগর। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়েই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম l প্রথম আলো
দূরে ঝাউবন, তারপরই বঙ্গোপসাগর। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়েই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম l প্রথম আলো

পশ্চিম দিকের প্রাচীরটা পেরোলেই ঘন ঝাউবন। ঠিক তারপরই সমুদ্র। গোধূলিবেলায় সিঁদুররাঙা সূর্যটা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে গেল ঝাউবনের আড়ালে। কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পা রেখেই প্রকৃতির এমন রূপে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে। তবে মুগ্ধতার মধ্যে একটা প্রশ্নও জেগে ওঠে, ‘খেলা হবে কোন মাঠে?’
একটাই স্টেডিয়াম, মূল মাঠও একটি। তাতেও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই যে কোথায় খেলা হবে! মূল মাঠের সঙ্গে একাডেমি মাঠ। সেখানেও তাঁবু-প্যান্ডেল, টুর্নামেন্টের ব্যানার-ফেস্টুন। ভেন্যু ম্যানেজার রতন কুমার বিশ্বাস জানালেন, খেলা হবে দুই মাঠে। কক্সবাজারে যুব বিশ্বকাপের মোট ১৭টি ম্যাচ। এর মধ্যে মূল মাঠে ৯টি, বাকি ৮টি একাডেমি মাঠে। স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল খেলবে মূল মাঠে।
মূল মাঠটা অবশ্য এখনো অসম্পূর্ণ। উত্তর-পূর্ব দিকে ১৬০০ দর্শকের একটি গ্যালারি করা হয়েছে। ওটাই যেন স্টেডিয়ামের ‘সদর দপ্তর’। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুম, ম্যাচ অফিশিয়াল, প্রেসবক্স, বিসিবি কর্মকর্তাদের কক্ষ—আপাতত সবকিছু এক জায়গাতেই।
২০১৩-এর ডিসেম্বরে তৈরি হওয়ার পর ২০১৪ সালের মার্চে এ মাঠের যাত্রা শুরু আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়েই। সেটি অবশ্য ছিল মেয়েদের ক্রিকেট। এরপর জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা হচ্ছে নিয়মিত। ২০১৪-এ সেপ্টেম্বরে সফরকারী জিম্বাবুয়ে ‘এ’ ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রথম আনঅফিশিয়াল টেস্টও হয়েছে এখানে।
গত বছর এপ্রিলে এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে সাত ম্যাচ সিরিজের দুটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ যুবারা। দুটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯। ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি, নিকট ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবে সাগরপারের নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আমেজটা পেতে যাচ্ছে আসলে এবারই। ভেন্যু ম্যানেজার রতনও মানলেন, এ স্টেডিয়াম নিয়ে এমন আগ্রহ আগে তেমন দেখা যায়নি।
স্টেডিয়ামের উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে বিসিবির। তবে তা বেশির ভাগ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। অবকাঠামোগত যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক, মাঠ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ কম। সেন্টার উইকেট রয়েছে ৭টি। আউটফিল্ড ভালোই বলতে হবে। অদূরে একাডেমি মাঠে সেন্টার উইকেট ৫টি। সেখানে নেট উইকেট ১২টি।
বাংলাদেশের অন্য ভেন্যুগুলোর মতো এ মাঠের চরিত্রও ভিন্ন কিছু হবে না। উইকেট মন্থর থাকবে, বল নিচু হবে, মিলবে টার্ন। মেহেদী হাসান মিরাজরা নিশ্চয়ই ছক কষছেন এসব মেনেই। কাল বিকেলে মাঠে এক চক্কর দিয়ে গেলেন যুবাদের কোচ মিজানুর রহমান। পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের হাসিটা এখনো লেগে আছে মুখে। এই হাসি তিনি ধরেই রাখতে চাইবেন। কক্সবাজারের উইকেট সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলতে না পারলেও মাঠটা মিজানের মোটেও অপরিচিত নয়, ‘এখানে আমরা আগেও খেলেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে সিরিজের আগে সাত দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করেছি। তবে এখন উইকেট কেমন হবে বলতে পারছি না। কালকের (আজ স্কটল্যান্ড-নামিবিয়া) ম্যাচের পর বুঝতে পারব উইকেট কেমন।’
ভেন্যু ম্যানেজার জানালেন, যুব বিশ্বকাপ নিয়ে পর্যটন শহরে দর্শকদের আগ্রহ নেহাত মন্দ নয়। তবে বিশ্বকাপের এই একটি ভেন্যুতেই সাধারণ দর্শকদের নেই ‘প্রবেশাধিকার’! দুই মাঠ মিলিয়ে মোট ১৬০০ দর্শকের খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেখতে পাবেন শুধু আমন্ত্রিতরাই। তাই স্কটল্যান্ড-নামিবিয়ার বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজদের লড়াই থেকে বঞ্চিতই থাকতে হবে সাধারণ দর্শকদের।
কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত? আয়োজকদের যুক্তি, ‘ধারণক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই’। এত দিনেও কেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়ায় ঘেরা ভেন্যুটিকে সম্পূর্ণ করা গেল না?