ভরা স্টেডিয়ামে ফুটবলের জয়

অনেক দিন পর ঘরোয়া ফুটবলের ছোঁয়ায় জেগে উঠল ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ময়মনসিংহ পর্বের প্রথম দিনেই উপচে পড়া দর্শকের সামনে গোল করতে পারেনি কোন দলই l শামসুল হক
অনেক দিন পর ঘরোয়া ফুটবলের ছোঁয়ায় জেগে উঠল ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ময়মনসিংহ পর্বের প্রথম দিনেই উপচে পড়া দর্শকের সামনে গোল করতে পারেনি কোন দলই l শামসুল হক

ক্ষণে ক্ষণে মেক্সিকান ওয়েভ। ভুভুজেলার গগনবিদারী আওয়াজ। ম্যাচ শুরুর আধা ঘণ্টা পরও ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ঢুকতে লম্বা লাইন। শহরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের প্রচারণা যতই কম থাকুক, ছুটির বিকেলে ফুটবলের টানে খেলাপাগল মানুষ ঠিকই স্টেডিয়ামে এসেছেন। ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষম স্টেডিয়াম ভরে উঠেছিল কানায় কানায়।
কোনটা শেখ জামাল ধানমন্ডি আর কোনটা চট্টগ্রাম আবাহনী, যেন চেনার দায় নেই। বল পায়ে পড়লেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার। ৩ পয়েন্টের আশায় ময়মনসিংহে এসেও কাল জিততে পারেনি এ দুই দলের কেউই। তবে গোলশূন্য ম্যাচে জিতেছে ফুটবল।
এই ড্রয়ে ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এখন চট্টগ্রাম আবাহনী। সমান ম্যাচে ৩ ড্র ও ১ জয়ে ৬ পয়েন্ট পাওয়া শেখ জামাল তিনে।
চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে পুরোনো ‘লেনাদেনা’ শেখ জামালের। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের ঘর ভেঙে পাঁচ ফুটবলার যোগ দেয় চট্টগ্রাম আবাহনীতে। এই ফুটবলারদের ফিরে পেতে আদালত পর্যন্ত গিয়েছিল শেখ জামাল। শেষ পর্যন্ত মামুনুলদের ধরে রাখতে পারেনি। এ কারণেই কিনা চট্টগ্রাম পর্বের তুলনায় মামুনুলের পুরোনো সতীর্থদের ময়মনসিংহে উজ্জীবিত দেখাল একটু বেশিই। দ্বিতীয়ার্ধে তো অনেক বেশি প্রাধান্য নিয়ে খেলেছে শেখ জামাল। অথচ মাঠে নামার আগে পরশু রাত দুইটায় তারা পৌঁছায় ময়মনসিংহে। মাঠে নেমে ভালো খেলার সঞ্জীবনী সুধা খেলোয়াড়দের কানে ঢুকিয়েছেন ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদের। খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকায় একান্ত বৈঠক করেন তিনি। তাইতো শতভাগ নিংড়ে খেলেছেন ইয়াসিন, এনামুল, ওয়েডসনরা। দুর্ভাগ্য, গোলটাই পায়নি শেখ জামাল। না হলে কি ৭৯ মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া ল্যান্ডিংয়ের ওই শট সাইডপোস্টে লেগে ফেরে! ৮৬ মিনিটে ওয়েডসনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে এমেকা আবারও ব্যর্থ। ফাঁকা পোস্টে মারতে গিয়ে পড়ে পেলেন!
চট্টগ্রামে সর্বশেষ ম্যাচে রেফারি মাঠ থেকে বের করে দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ জোসেফ পাভলিককে। এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় তাই তাঁকে ডাগআউটে দেখা যায়নি কাল। মামুনুল, রুবেলরাও মনে হলো সেরাটা দিতে পারেননি। যদিও ম্যাচ শেষে গোলরক্ষক কোচ পনিরুজ্জামান মানতে চাইলেন না তা, ‘এর আগে চট্টগ্রামে আমরা সন্ধ্যায় খেলেছি। আজ গরমে সমস্যা হয়েছে। তবে সবাই শতভাগ দিয়ে খেলেছে।’
গত তিন ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা রুবেল প্রথমার্ধে সুযোগ নষ্ট করেছেন বেশ কয়েকবার। ২২ মিনিটে প্রতি-আক্রমণ থেকে পাওয়া বলে সহজ গোলের সুযোগ হারান। শেখ জামালের গোলরক্ষক মাকসুদুর জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এলে শট নেন রুবেল। কিন্তু সেটি গোললাইনে সেভ করেন শেখ জামাল ডিফেন্ডার ইয়াসিন। ৫২ মিনিটে রুবেলের ক্রসে ইব্রাহিম পা ছোঁয়াতে পারলেন না।
গোড়ালিতে চোট পাওয়া ওয়েডসনকে মাঠেই নামাতে চাননি শেখ জামালের আপত্কালীন কোচ মোশাররফ বাদল। বাধ্য হয়েই ৫৭ মিনিটে রাকিবকে তুলে মাঠে নামান এই হাইতিয়ানকে। আর এই ওয়েডসন মাঠে নামার পরই গতি বেড়েছে শেখ জামালের। কখনো বল নিয়ে বক্সে ঢুকেছেন। কখনো বল বানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তা থেকে নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেছেন এমেকা।
প্রচণ্ড গরমের জন্য গ্যালারির কিছু দর্শক আগেভাগেই মাঠ ছেড়েছিলেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রপাড়ে ‘ফুটবলের মধুচন্দ্রিমা’ যে এক ম্যাচেই শেষ হয়নি আভাসটা ঠিকই দিয়ে গেলেন তাঁরা।
আজকের খেলা
শেখ রাসেল-ফেনী সকার
(বিকেল ৪টা, রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহ)