'আমরা মাঠের মধ্যেই কেঁদে ফেলি'
>আগের দিন আবেগ আর রোমাঞ্চে ঠিকভাবে কথাই বলতে পারছিলেন না। তবে কাল দেশে ফেরার বিমান ধরতে বেলফাস্ট বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ রুমানা আহমেদকে অনেকটাই স্বাভাবিক মনে হলো। মুঠোফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকের আনন্দ প্রকাশ করলেন, আবার দল হিসেবে উন্নতির পথও দেখালেন এই অলরাউন্ডার—
*হ্যাটট্রিক করলেন, ম্যাচ জেতালেন। স্বপ্নের মতো একটা রাত গেল। তো এক দিন পর এখন আনন্দটা কেমন?
রুমানা আহমেদ: সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে, খবরটা খুব দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায়। দেশ থেকে ফোন করে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে।
*কারা অভিনন্দন জানাল?
রুমানা: যত বন্ধুবান্ধব আছে, খেলোয়াড়েরা, পরিবার থেকে...বিশেষ করে আমার আম্মা। সবাই খবরে দেখেছে। আম্মা তো খুবই এক্সাইটেড। ফোনে বললেন, অনেক খুশি হয়েছেন। আসলে আমার পরিবার সব সময়ই আমার খেলাধুলা সমর্থন করে। প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত তারা আমার সঙ্গে আছে। সে জন্যই তাদের আনন্দটা বেশি।
*আয়ারল্যান্ডে আপনার সতীর্থ বা দেশের যাঁরা আছেন, দেশের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করাটাকে তাঁরা কীভাবে দেখছেন?

রুমানা: সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। খেলা শেষে শাবাশ বলেছে...উঁচু করে ধরেছে। আসলে এটা না দেখলে বুঝবেন না। পুরো দল এতটাই খুশি ছিলাম যে, আমরা মাঠের মধ্যেই কেঁদে ফেলি। এটা জাহানারার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথম ওয়ানডে জয়। সে জন্য সবাই তাকেও অভিনন্দন জানিয়েছে। অনেক দিন পর আমরা একটা ওয়ানডে সিরিজ খেললাম এবং তাতে জিতলাম। আমাদের কাছে এটা অনেক বড় পাওয়া।
*মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো বোলারের এটা প্রথম হ্যাটট্রিক। অন্য কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে কি এর আগে হ্যাটট্রিক করেছেন কখনো?
রুমানা: না, আমার হ্যাটট্রিক ছিল না। সব ধরনের ক্রিকেটেই এটা আমার প্রথম হ্যাটট্রিক।
*লেগ স্পিনারের আগে আপনি একজন ভালো ব্যাটসম্যান। দুটোর মধ্যে কোনটা বেশি উপভোগ করেন?
রুমানা: ব্যাটিংই বেশি ভালো লাগে। নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি সব সময়।
*এখন নিশ্চয়ই বোলিংকেও গুরুত্ব দেবেন...
রুমানা: বোলিংয়ে গুরুত্ব দিই না, তা নয়। আমি যদি আধা ঘণ্টা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করি, তাহলে আধা ঘণ্টা বোলিংও প্র্যাকটিস করি। তবে আমি মনে করি আমার ব্যাটিংটা দলের জন্য বেশি দরকার।
*ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সব মিলিয়ে আয়ারল্যান্ড সফরটা আপনাদের জন্য কেমন হলো?
রুমানা: অনেক কিছু শিখেছি এই সফরে। সমস্যা হয়েছে আবহাওয়া ভালো না থাকায়। বৃষ্টির জন্য দুটি ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ায় খারাপ লেগেছে। ওই দুটি ম্যাচ খেলা আমাদের জন্য জরুরি ছিল। এমন কন্ডিশনে তো আমরা সব সময় খেলার সুযোগ পাই না। আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি সিরিজই জেতা।
*কন্ডিশন আপনাদের অপরিচিত ছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাড়তি কী করেছেন?
রুমানা: উইকেট বোলিং-সহায়ক থাকায় আমাকে বাড়তি কিছু করতে হয়নি। শুধু ভালো জায়গায় বল করার চেষ্টা করেছি। আর আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করে আমরা তেমন ভালো করতে পারিনি। তবে ওদেরও দেখিয়ে দিয়েছি...আমরা যেখানে পারিনি সেখানে ওদেরও সুযোগ নেই। ভেবেছিলাম ওদের মাঠ, ওরা নিশ্চয়ই ভালো খেলবে। কিন্তু আমাদের বোলিং খুব ভালো হয়েছে।
*সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে কি মনে হয় দলীয়ভাবে ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি দরকার?
রুমানা: আমরা ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট ভালো। ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে আমরা ২১০ রান করেছি। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান সফরেও আমাদের স্কোর ১৮০-এর ওপর ছিল। তবে হ্যাঁ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে আমাদের ব্যাটিং একটু খারাপ করছে। বোলিংয়ের তুলনায় এদিকটায় একটু পিছিয়ে গেছি। তবে এটা এক বা দুই দিনে উন্নতি করা সম্ভব নয়।
*ব্যাটিংয়ে উন্নতির জন্য কী করা দরকার বলে মনে করেন?
রুমানা: প্রথমত, এর জন্য অনেক সময় দরকার, অভিজ্ঞতারও ব্যাপার আছে। বিদেশি দলের সঙ্গে আমরা খুব কম খেলি। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খেলে এখন বুঝতে পারছি কোথায় আমাদের উন্নতি করতে হবে, কোথায় দুর্বলতা। ইংল্যান্ডের সঙ্গে যেমন এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছি। ওদের অভিজ্ঞতা এবং আমাদের অভিজ্ঞতার পার্থক্য সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা ওদের সঙ্গে নেমেই ভালো খেলে ফেলব, এটা আশা করা ঠিক না। তবে সময় দিলে অবশ্যই ভালো ফলাফল সম্ভব। ভালো দলগুলোর সঙ্গে খেলে আমরা এখন নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পারছি। যত বেশি খেলতে পারব ততই পারফরম্যান্স ভালো হবে।
*আয়ারল্যান্ড সফর মোটামুটি সফলই বলতে হবে। তো এটা ধরে রাখতে কোন জিনিসটা বেশি জরুরি?
রুমানা: আমরা অনেক দিন পর একজন ভালো কোচ পেয়েছি। আমাদের দুর্বলতা উনি হাতে-কলমে ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন, এই কাজগুলো করতে পারলে অন্য দলের পক্ষে আমাদের ধরা কঠিন হবে। এর মধ্যে ব্যাটিংয়ে উন্নতির ব্যাপারটাই বেশি। সঙ্গে পেস বোলিংয়ের ওপরও জোর দিতে বলেছেন।
*আপনার হ্যাটট্রিক, বাংলাদেশের জয়—এসবে আইরিশদের প্রতিক্রিয়া কী?
রুমানা: আমার মনে হয়েছে, শেষ ম্যাচে তারা অতি-আত্মবিশ্বাসী ছিল। ধরেই নিয়েছিল ওরা ম্যাচটা জিতে যাচ্ছে। পরে আমরা জেতার পর ওরাও মাঠের মধ্যে কান্না করে দিয়েছে। অনেক লজ্জা পেয়েছে। ওদের দেশে গিয়ে ওদের হারিয়েছি, এটা তারা মানতে পারছে না। আয়ারল্যান্ড অন্যান্য দলের সঙ্গে ভালো খেললেও আমাদের সঙ্গে বরাবরই এ রকম খেলে।