অবশেষে খেলছেন নাসির?

নাসির হোসেন
নাসির হোসেন

নাসির হোসেন কি আজ খেলবেন? নাকি বসে থাকবেন ডাগ আউটেই! আফগানিস্তান সিরিজ থেকে প্রতিটি ম্যাচেই উঠছে প্রশ্নটা। নাসিরকে খেলানোর পক্ষে-বিপক্ষে ভোট হলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ হয়তো পক্ষেই ভোট দেবেন।
কিন্তু জনমত যাচাই করে তো আর খেলোয়াড় নির্বাচন হয় না! কাল যে বাংলাদেশ দলের টিম মিটিংয়ে ঠিক হয়ে গেল, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নাসির খেলছেন, সেটাও কোনো গণভোটের ফল নয়। নাসির খেললে নিশ্চয়ই কোচ-অধিনায়ক তাঁকে খেলানোর প্রয়োজন মনে করছেন বলেই খেলবেন।
নাসিরের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ’ অনেক। তাঁর মুঠোফোন থেকে শুরু করে একজন খেলোয়াড়ের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, এমন অনেক কিছুর সংখ্যা নাকি অনেক বেশি। নাসির ঠিকমতো অনুশীলন করেন না, কোচের কথাও শোনেন না—এসব তো আছেই।
তবে নাসিরকে ম্যাচের পর ম্যাচ না খেলিয়ে বসিয়ে রাখার কারণ নিশ্চয়ই এসব নয়। সে রকম কিছু হলে নির্বাচকেরা ১৪ জনের দলেই তাঁকে নিতেন না। তাঁরা কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করে দল করেছেন এবং সেই দল বোর্ড সভাপতিও অনুমোদন করেছেন। তার মানে নাসিরকে নিয়ে ওই নেতিবাচক আলোচনাগুলোর ভিত্তি নেই। যোগ্য বলেই তিনি দলে।
তাহলে চলমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটার উত্তর কী? নাসির কেন ম্যাচের পর ম্যাচ পানি টানছেন? ক্রিকেটারদের মাঠে পানি টানাটা টিম ওয়ার্কেরই অংশ। তবে নাসির পানি না টেনে খেললেই দলে বেশি অবদান রাখতে পারতেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।
প্রয়োজনের মুহূর্তে হাল ধরে ম্যাচ শেষ করে আসার সক্ষমতাই ‘দ্য ফিনিশার’ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে তাঁকে। সেই নাসির আফগানিস্তান সিরিজের তিন ম্যাচেই বাইরে! খেলার সুযোগ পাননি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও। অনেকেরই বিশ্বাস, পরশু জিততে জিততে হেরে যাওয়া এই ম্যাচে নাসির দলে থাকলে চিত্রটা অন্য রকমও হতে পারত।
হয়তো হতো, হয়তো না। মূল প্রসঙ্গ সেটি নয়। কোন কারণে নাসিরকে ১৪ জনে রেখেও ১১ জনে রাখা হলো না, প্রশ্ন সেটাই। ক্রিকেটাঙ্গনে একটা কথা খুব চালু যে, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পছন্দ করেন না বলেই একাদশে সুযোগ হয়নি নাসিরের। কিন্তু তা হলে তো কোচ আগে থেকেই জানতেন যে, শেষ পর্যন্ত একাদশে থাকতে পারবেন না নাসির। তাহলে ১৪ জনের দল গঠনের সময়ই কেন তাঁকে বাইরে রেখে অন্য কাউকে বেছে নেননি হাথুরুসিংহে! একজন কোচ নিশ্চয়ই এমন কাউকে দলের সঙ্গে রাখবেন না, যাঁকে তিনি খেলাবেনও না আবার দলের জন্য বোঝাও মনে করবেন। নাসিরকে না খেলানোর এই কারণটি তাই যুক্তির ভিত্তি পাচ্ছে না।
এর চেয়ে ক্রিকেটীয় কারণটিই বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। নাসির যে ধরনের খেলোয়াড়, সে রকমই আরেকজন খেলোয়াড় সাব্বির রহমান আছেন কোচের হাতে। লোয়ার মিডল অর্ডারে নাসিরের চেয়ে সাব্বিরকেই নাকি তিনি বেশি উপযুক্ত মনে করেন। কিন্তু গত দুটি ওয়ানডেতে সাব্বিরকে তিন নম্বরে তুলে আনার পরও কি নাসিরের জায়গা হতে পারত না দলে?
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নাসিরের বোলিং-ফিল্ডিংও দলের শক্তি বাড়ায়। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তো একবার এমনও বলেছিলেন, নাসিরকে তিনি নিয়মিত অফ স্পিনার হিসেবেই দেখেন। গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজের তিন ওয়ানডেতেই নাসিরকে দিয়ে তিনি নিয়মিত বল করিয়েছেন এবং নাসিরও কম-বেশি আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।
নাসিরকে নিয়ে টানাপোড়েন ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকেই। অদ্ভুত সব কথা শোনা যেত তখন তাঁর ব্যাপারে। টেস্ট-ওয়ানডে দুটিতেই দারুণ সব পারফরম্যান্স আছে যাঁর, সেই ব্যাটসম্যানই নাকি ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে পড়লে স্কয়ার লেগের দিকে সরে যান! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলার পর থেকে সব ম্যাচেই ছিলেন মাঠের বাইরে। তখনো বাতাসে উড়েছে একই কথা—নাসির ফাস্ট বোলিংকে ভয় পান।
নাসির কি পারবেন সমালোচনার জবাব দিতে?