অর্থলোভী সৌরভ নৈতিক মান কমিয়ে দিচ্ছেন?

সৌরভকে লোভী বলেছেন রামচন্দ্র গুহ।
ফাইল ছবি

২০১৭ সালে ভয়ংকর এক ঝড় গিয়েছিল ভারতের ক্রিকেটে। দেশটির ক্রিকেট বোর্ডে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে সুপ্রিম কোর্টকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। চার সদস্যের একটি প্রশাসক কমিটি সৃষ্টি করা হয়েছিল। ভারতীয় ক্রিকেটে আর্থিক দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা দূর করতে ও জবাবদিহি ফেরাতে গঠন করা সেই কমিটিতে ছিলেন রামচন্দ্র গুহ। এই ক্রিকেট ইতিহাসবিদ বরাবরই পরিষ্কার কথা বলতে পছন্দ করেন। প্রশাসক কমিটির সদস্য হয়েও বোর্ডের সংস্কৃতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনতে না পেরে সে বছরের জুনেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

যত দিন দায়িত্বে ছিলেন, তত দিন ভারতীয় ক্রিকেটে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি দূর করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন কিছু বদল আনতে। বিদায়ী চিঠিতে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সে সময়টা কাটিয়ে এসেছে। সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো সাবেক অধিনায়ক এখন বোর্ডের সভাপতি। কিন্তু সভাপতি পদে থাকা গাঙ্গুলীর আচরণেও হতাশ রামচন্দ্র। তাঁর চোখে বোর্ড সভাপতি হিসেবে নিজেই অর্থের লোভ সামলাতে পারছেন না গাঙ্গুলী। আর সভাপতির এ আচরণ প্রভাব ফেলছে দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে।

সদ্য শেষ হওয়া আইপিএল চলাকালে বেশ নিয়মিতই গাঙ্গুলীর চেহারা দেখা গেছে টিভি পর্দায়। বোর্ড সভাপতি হিসেবে তাঁর উপস্থিতি তো ছিলই, তবে মাঠের জলজ্যান্ত গাঙ্গুলীর চেয়েও বেশি দেখা গেছে বিজ্ঞাপনের গাঙ্গুলীকে। আইপিএল নিয়ে চালু হওয়া এক ফ্যান্টাসি অ্যাপের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে গাঙ্গুলীকে। নিজের পছন্দের একাদশ বানাতে বলা হতো সবাইকে। আর মাঠে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের ওপর পয়েন্ট পেতেন ব্যবহারকারীরা। সৌরভ জানাতেন একাদশ বানিয়ে তাঁর চেয়ে বেশি পয়েন্ট আদায় করে দেখাতে। সৌরভ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন তারকা এই অ্যাপের বিজ্ঞাপন করেছেন। তবে বাদবাকিরা সবাই আইপিএলে খেলেছেন। বোর্ডের সঙ্গে জড়িত শুধু সৌরভই ছিলেন।

একজন বোর্ড সভাপতি কেন এভাবে বিজ্ঞাপনে অংশ নেবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রামচন্দ্র। নতুন একটি বই লিখেছেন এই লেখক, ‘দ্য কমনওয়েলথ অব ক্রিকেট: আ লাইফলং লাভ অ্যাফেয়ার উইথ দ্য মোস্ট সাটল অ্যান্ড সফিস্টেকেটেড গেম নোন টু হিউম্যানকাইন্ড।’ সে বইয়ে ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে তাঁর সময়টার কথা বলেছেন। মিড ডেতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে উঠে এসেছে গাঙ্গুলীর কথা, ‘এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা নয়, কিন্তু এটা একটি সমস্যা। গাঙ্গুলীর দিকে তাকান, বোর্ডের প্রধান অথচ একটা ফ্যান্টাসি ক্রিকেট গেমের প্রচার করছেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে টাকার এত লোভ খুবই বিস্ময়কর। আমার বইয়ের সবচেয়ে ভালো গল্পটা হলো বিষেণ সিং বেদির। যিনি বলছেন ক্রিকেটের জন্য কাবুলেও (কোচিং করাতে) যেতে রাজি আছেন, কিন্তু অর্থের জন্য কোথাও যাবেন না। তাহলে গাঙ্গুলী সামান্য কিছু অর্থের জন্য এসব করে বেড়াচ্ছেন? বোর্ডের সভাপতি যদি এমন করেন, তাহলে নৈতিক মান কমে যায়।’

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসন ও এর ভেতরের দিক নিয়ে নতুন বইয়ে আলোচনা করেছেন রামচন্দ্র।
ছবি: টুইটার

সাক্ষাৎকারে সৌরভের আরেকটি খুঁত দেখিয়েছেন রামচন্দ্র। সেটা অবশ্য অন্যের সমালোচনা করেই করেছেন। বোর্ডের সভাপতিত্ব বুঝে পেয়েছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেছে গাঙ্গুলীর। কিন্তু রামচন্দ্র দাবি করছেন, গাঙ্গুলী নিজের কাজটা করছেন না। বরং তাঁকে সামনে রেখে ভারতের ক্রিকেট চালিয়ে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং সাবেক বোর্ড সভাপতি এন শ্রীনিবাসন। মিডডের কাছে সরাসরি বলেছেন, ‘বর্তমানে ভারত ক্রিকেট তো আসলে চালাচ্ছে এন শ্রীনিবাসন আর অমিত শাহ। রাজ্য সংস্থাগুলো কারও মেয়ে অথবা কারও ছেলে চালাচ্ছে। স্বজনপ্রীতি আর চক্রান্তে ডুবে আছে বোর্ড। আর রঞ্জির খেলোয়াড়দের বেতন দিতে দেরি করছে তারা। সবকিছু নতুন করে গোছানোর যে আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি।’