আইপিএলের জন্য ইংল্যান্ডকে টেস্টের সূচি বদলাতে চাপ ভারতের

বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী ও ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি।ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) অনুরোধটা লিখিত না মৌখিক, আনুষ্ঠানিক না অনানুষ্ঠানিক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) উদ্ধৃত করে ইংলিশ দৈনিক গার্ডিয়ান লিখেছে এখনো ‘আনুষ্ঠানিক’ কোনো প্রস্তাব পায়নি ইসিবি। অন্যদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানাচ্ছে, বিসিসিআই ‘লিখিতভাবে’ অনুরোধটা করেছে ইসিবিকে।

তবে ধরন যা-ই হোক, ইংল্যান্ডের মাটিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজের সূচিতে অদলবদল আনার অনুরোধ যে ভারতীয় বোর্ড করেছে, তা নিয়ে সম্ভবত আর সংশয়ের কিছু নেই। করোনার কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া এবারের আইপিএল মৌসুমের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের স্বার্থেই ইংল্যান্ড-ভারতের সিরিজের সূচিতে বদল আনতে চাইছে বিসিসিআই। সিরিজের পঞ্চম টেস্টটিকে এগিয়ে আনা অথবা টেস্টটি একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়া—   ভারতের প্রস্তাব মূলত এটিই।

আগামী ৪ আগস্ট শুরু হয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল টেস্ট সিরিজটি। কিন্তু বিসিসিআই চাইছে এক সপ্তাহ আগেই সিরিজটি শেষ করে দিতে, যাতে আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আইপিএলের বাকি অংশ আয়োজনের জন্য ফাঁকা সময় পাওয়া যায়। ইসিবি এখনো কোনো জবাব দেয়নি।

ভারতজুড়ে করোনার প্রকোপ ভয়ংকর রূপ নেওয়ায় ৪ মে এবারের আইপিএল স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এখনো ৩১টি ম্যাচ বাকি আছে আইপিএলের। শুধু এই ম্যাচগুলোরই সম্প্রচার মূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি পাউন্ড বলে জানাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ২৪০০ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ম্যাচগুলো না হলে বিসিসিআইয়ের এত টাকার ক্ষতি হবে। ইসিবিকে কেন চাপ দিচ্ছে ভারত, তা বুঝে নিতে তো আর কষ্ট হয় না।

সূচিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে অক্টোবরে, তার মানে হচ্ছে আইপিএলের বাকি অংশ এর আগেই আয়োজন করতে হবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের টেস্ট সিরিজের বর্তমান সূচি অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে সিরিজ শেষ হচ্ছে না। সে কারণে ভারত চাইছে, বর্তমান সূচিতে ৪ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া সিরিজটা আরও এক সপ্তাহ আগে শুরু হোক।

তাতে পঞ্চম টেস্টটা ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আইপিএলের বাকি ৩১ ম্যাচ আয়োজন, কোয়ারেন্টিন, প্রস্তুতি...সবকিছুর জন্য তখন এক সপ্তাহ সময় বেশি পাবে ভারত।

ভারতের মাটিতে কদিন আগে খেলে গেছে ইংল্যান্ড।
ছবি: রয়টার্স

তা ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক সূচি কী বলছে? বলছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজ শেষ হবে ২০ জুলাই। বর্তমান সূচি অনুযায়ী এরপর ভারত সিরিজের আগে দুই সপ্তাহ সময় আছে ইংল্যান্ডের হাতে। কিন্তু ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী এর মধ্যে একটা টেস্ট ফেললে সেটার প্রস্তুতির ব্যাপার তো থাকেই, প্রতিবাদ আসতে পারে দর্শকদের দিক থেকেও।

এক বছরের বেশি সময় দর্শকহীন থাকার পর ইংল্যান্ডে আস্তে আস্তে খেলার মাঠে দর্শক ফিরছেন, বর্তমান সূচি অনুযায়ী ১০ সেপ্টেম্বর ম্যানচেস্টারে শুরু হতে যাওয়া পঞ্চম টেস্টের প্রথম তিন দিনের টিকিট অনেকটা বিক্রিও হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান। এখন টেস্ট সিরিজের সূচিতে বদল আনলে সেই টেস্টের দিনক্ষণ এগিয়ে আসবে, যা দর্শককে খ্যাপানোর কথা।

এর পাশাপাশি সম্প্রচারের সূচিতে অদলবদলের ঝামেলা তো আছেই! সঙ্গে বাড়তি তথ্য যোগ করে নিন, ২১ জুলাই থেকে ইংল্যান্ডের ১০০ বলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ‘দ্য হানড্রেড’ শুরু হওয়ার কথা। সেটির সূচি, কোন মাঠে কোন দলের খেলা...এসব দিকও হিসাব করতে হবে।

এখনো ৩১টি ম্যাচ বাকি আছে আইপিএলের। শুধু এই ম্যাচগুলোরই সম্প্রচার মূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি পাউন্ড বলে জানাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ২৪০০ কোটি টাকার বেশি।

সে ক্ষেত্রে বিকল্প প্রস্তাব হতে পারে সিরিজটা পাঁচ টেস্টের বদলে চার টেস্টের করে ফেলা। কিন্তু দ্য গার্ডিয়ানের হিসাব, ‘ওভারসিজ রাইটসে’র হিসাব করার আগে একেকটা টেস্টের সম্প্রচার মূল্য স্বাগতিক দলের জন্য দাঁড়াচ্ছে ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪০ কোটি টাকার মতো। টেস্ট বাতিল করতে গেলে ইসিবিকে সে অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি সমর্থকদের দিক থেকে ক্ষোভের ব্যাপার তো আছেই।

সে কারণে ইসিবি বর্তমান সূচিতেই পাঁচ টেস্টের সিরিজ আয়োজনের অবস্থানে অনড় থাকার কথা ভাবছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, বর্তমান সূচি ‘অনেক আগে থেকে ঠিক করে রাখা, জটিল এবং এ নিয়ে বাণিজ্যিক চুক্তিও হয়ে গেছে।’

তবে আইপিএলের বাকি অংশ শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বরে হলেও তাতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা থাকবেন না বলে জানাচ্ছে দ্য গার্ডিয়ান। ইসিবির ক্রিকেট পরিচালক অ্যাশলি জাইলস আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আইপিএলের চেয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর বেশি গুরুত্বপূর্ণ।