ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুব ভালো বল করেন আদিল রশিদছবি: এএফপি

কোনটা বেশি চমকে দেওয়ার মতো তথ্য—বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের কাছে ৫৫ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া, নাকি অল্প এই রানও তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা!

শেষ পর্যন্ত জিতে মাঠ ছেড়েছে ইংল্যান্ড। ৬ উইকেট আর ৭০ বল হাতে রেখেই জিতেছে। তা ইংল্যান্ডের বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে শঙ্কা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের পরই কারও সম্ভবত ছিল না। কিন্তু উইকেটের ব্যবধান যে আরও বড় হয়নি, সেটিই বোধ হয় ভাবাবে ইংল্যান্ডের কোচ-অধিনায়ককে।

ব্যাপারটাকে অবশ্য এভাবেও দেখা যায়। ইংল্যান্ডের কোনো বোলারকেই খালি হাতে ফেরায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ক্যারিবিয়ানদের এই ‘বিস্ময়কর’ চেষ্টার দামও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা! ফেরায়নি—কথাটা ঠিক ক্রিকেটীয় না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হওয়ায় ব্যাটসম্যানের ‘অবদান’ যথেষ্ট। টি–টোয়েন্টিতে বোলারদের ওপর যথেচ্ছাচার চালানো ক্যারিবিয়ানরা এমন সংগ্রহের পর আর ম্যাচে ফেরে কীভাবে!

দুবাইয়ের উইকেট খানিকটা মন্থর, এখানে ব্যাট করা কঠিন হবে—বাইশ গজ দেখে কি আগেই টের পেয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগান? তা-ই হওয়ার কথা, এ কারণেই হয়তো টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ১৪.২ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে পারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের কখনো স্বস্তি নিয়ে ব্যাট করতে দেখা গেল না।

মরগান ও বাটলার জয় এনে দেন ইংল্যান্ডের
ছবি: এএফপি

টপ অর্ডারদের সবাই উইকেট ছুড়ে এসেছেন। ইংলিশ বোলারদের ভালো জায়গায় বল করা তার কারণ। ফিল্ডারদের কাছ থেকেও দারুণ সহায়তা পেয়েছেন ইংলিশ বোলাররা। তাতে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে। এ সংস্করণে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বনিম্ন, শুধু নেদারল্যান্ডসই এ টুর্নামেন্টে তাদের চেয়ে কম রানে অলআউট হয়েছে।

অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং অর্ডারে আট নম্বর পর্যন্ত সবাই এ সংস্করণের ডাকসাইটে তারকা। লেন্ডল সিমন্স, এভিন লুইস, ক্রিস গেইল, শিমরন হেটমায়ার, ডোয়াইন ব্রাভো, নিকোলাস পুরান, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল—নামগুলো একবার দেখুন! নামের ওজনের বিপরীতে এবার তাঁদের স্কোরও দেখুন।

এক ‘আনলাকি থার্টিন’–এ আউট হওয়া গেইল (১৩) ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। বাকিদের সংগ্রহ যেন মুঠোফোনের নম্বর—৩ (সিমন্স), ৬ (লুইস), ৯ (হেটমায়ার), ব্রাভো (৫), পুরান (১), পোলার্ড (৬) ও রাসেল (০)। এর মধ্যে রাসেলের আউটটি ইংলিশ সমর্থকেরা অনেক দিন মনে রাখবেন।

অবিশ্বাস্য একটি ক্যাচ নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার আকিল হোসেন
ছবি: এএফপি

ম্যাচের তখন ১০ ওভার শেষ। ৬ উইকেটে ৪৪ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধুঁকছে। লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে বোলিংয়ে আনেন মরগান। তাঁর ‘স্লাইডার’ ডেলিভারি একটু জোরে ভেতরে ঢুকবে—শেষ বেলায় বুঝতে পেরে সোজা ব্যাটে খেলার চেষ্টা করেন রাসেল। ব্যাট–প্যাডের মাঝে ফাঁক থাকায় বোল্ড।

তার আগে ইংল্যান্ডের পেসার ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান ও টাইমাল মিলসের সামনে ক্যারিবিয়ানরা স্রেফ কেঁপেছে। ইংলিশ বোলাররা উইকেট থেকে বাউন্স আদায় করে নেওয়ায় ক্যারিবীয়রা নিজেদের খেলাটা কেউ খেলতে পারেননি। মঈন আলী মন্থর উইকেটের বাঁক ব্যবহার করে দারুণ বল করেন (৪–১–১৭–২)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে ওকসের করা দ্বিতীয় ওভারে লুইসের দারুণ ক্যাচ ধরে বিপর্যয়ের শুরু করেন মঈন। পরের ওভারে তাঁকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দেন সিমন্স। ২.২ ওভারে ৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর গেইল–হেটমায়ারের দায়িত্ব ছিল দ্রুত রান তোলার সঙ্গে উইকেটও ধরে রাখা। কিন্তু পাওয়ার প্লের মধ্যেই দুজন ফিরে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপদ আরও বাড়ান।

ব্রাভো আর পুরানও অধৈর্য হয়ে শট খেলতে গিয়ে উইকেট দেন। আদিল রশিদের বলে আউট হওয়া পোলার্ডের ইনিংসটিও তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ—১৪ বলে ৬ রান। ২.২ ওভারে ২ রানে ৪ উইকেট নেন আদিল রশিদ। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র ২ রানে ৪ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার এ লেগি। ১৭ রানে ২ উইকেট নেন টাইমাল মিলস, ১২ রানে ১ উইকেট ওকসের।

ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ বল করেন আদিল রশিদ। উইকেট নেওয়ার পর
ছবি: এএফপি

মজার বিষয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই খড়কুটোর মতো সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডও ভুগেছে। ৩.১ ওভারে দলীয় ২১ রানে ফিরেছেন জেসন রয় (১১)। তাঁকে তুলে নেন এই বিশ্বকাপ দিয়েই ৬ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফেরা রবি রামপল। ঠিক এর এক ওভার পরই (৪.১ ওভার) স্পিনার আকিল হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দেন জনি বেয়ারস্টো (৯)।

পরের ওভারে মঈন আলী রানআউট—প্রতিপক্ষের একদম সাদামাটা সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে রান নেওয়ার কিসের এত তাড়া, তা বোধগম্য হয়নি। সপ্তম ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনও আকিলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণভাবে ক্যাচটি নিয়ে আকিল যেন ম্যাচে ফেরার অসম্ভব চেষ্টাই করলেন।

কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মরগান (৭*) বাটলার (২৪*) মিলে পাড়ি দেন বাকি পথ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৪ রানে ২ উইকেট নেন আকিল।