ইতিহাসের সেই সোহাগ গাজী

>
.
.
একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক! ইতিহাসের প্রথম এবং একমাত্র সোহাগ গাজীর এই কীর্তি কিন্তু নিউজিল্যান্ডেরই বিপক্ষে। লিখেছেন রানা আব্বাস

টিক টিক টিক...এগিয়ে চলেছে ঘড়ির কাঁটা। তবুও মুহূর্তের জন্য সময়টা যেন থমকে দাঁড়ায়। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম হয়ে সারা দেশ—সবাই অপেক্ষায়, পারবেন সোহাগ গাজী?

নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ৮৫তম ওভার, সোহাগ গাজীর ২৪তম। দ্বিতীয় বলে কোরি অ্যান্ডারসন এলবিডব্লু, পরের বলে ওয়াটলিং ক্যাচ দিলেন মুশফিকুর রহিমকে। বলটা বুকে লাগার পর দু-তিনবারের চেষ্টায় ধরেন বাংলাদেশ দলের উইকেটকিপার। মুশফিকের বুকের পরিচর্যায় খেলা বন্ধ। সবার কৌতূহল স্পন্দিত অপেক্ষা।
এই দৃশ্যের মধুর সমাপ্তি চতুর্থ বলে। ডগ ব্রেসওয়েল ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। মুশফিকের প্যাড ছুঁয়ে সেটি শূন্যে ভেসে ওঠে, লেগ স্লিপ থেকে দৌড়ে সাকিব আল হাসান মুঠোয় পুরে নেন বলটা—হ্যাটট্রিক! সোহাগ গাজীর হ্যাটট্রিক! ২০১৩ সালের অক্টোবরে কিউইদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেটে ইতিহাসের পাতায় উঠে যায় বাংলাদেশের এই অফ স্পিনারের নাম।
সোহাগের আগে টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক হয়েছে ৩৯টি, তাঁর পরে আরও দুটি। সোহাগের আগে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট পাওয়ার ঘটনা ২৮টি, তাঁর পরে হয়েছে আরও তিনটি। তবে ১৩৯ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের ঘটনা একটিই। অনন্য সেই কীর্তি যখনই স্মৃতিতে ভেসে ওঠে সোহাগের মনে দোলা দেয় অপার্থিব আনন্দ, ‘রেকর্ডটার কথা মনে পড়লে ভীষণ ভালো লাগে। কদিন আগে একটা বিরল রেকর্ডের তালিকা দেখছিলাম। ওখানে শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারার সঙ্গে আমার নামটাও আছে। এত বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমার নাম দেখে ভালো লেগেছে। ক্রিকেটে অনেক কিছুই পেয়েছি। তবে সবচেয়ে বড় পাওয়া বোধ হয় ২০১৩ সালের নিউজিল্যান্ড সিরিজে করা রেকর্ডটা।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরির রেকর্ড সোহাগের আগেই ছিল। তবে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে রেকর্ডটির বিশালতা এতটাই, ম্লান হয়েছে বাকি সবকিছুই। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, অকল্পনীয় কীর্তি গড়ার পরও কেন পথ হারালেন? সোহাগ মনে করেন, ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা প্রভাব ফেলেছে ক্যারিয়ারে। দুবার পরীক্ষা দিয়ে উতরেছেন সেই বাধা। ১০ টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি খেলা সোহাগের উপলব্ধি, ‘জাতীয় দল থেকে হঠাr বাদ পড়া, ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া, বোলিং অ্যাকশন শুধরে আবার ফেরা, একেবারে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলাম! সেভাবে আর ফিরে আসতে পারিনি। একটা টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম মাঝে। কিন্তু নিজেকে প্রমাণের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। পরে প্রশ্ন ওঠে আমার ফিটনেস নিয়ে।’
নিউজিল্যান্ড সিরিজটাও তাঁকে দেখতে হবে দূর থেকে। বুকের ভেতর হাহাকার তৈরি হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ ভালো করলে মনটা ঠিকই নেচে উঠবে ২৫ বছর বয়সী এই অফ স্পিনারের, ‘নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে রেকর্ড করেছি, ভালো কিছু পারফরম্যান্স আছে আমার, এসব ভেবে মনটা খারাপ লাগবে। বাংলাদেশ এখন ধারাবাহিক ভালো খেলছে। নিউজিল্যান্ডে এটি ধরে রাখতে পারলে অনেক ভালো লাগবে।’
দুঃসময়ের প্রহর কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে উন্মুখ সোহাগ। দূর থেকে নয়, আবারও অংশীদার হতে চান দলের সাফল্যে। শুধু ইতিহাস হয়ে নয়, সোহাগ থাকতে চান বর্তমানেও।