কেন ডাকা হয়েছিল ইমরুলকে, কেনই-বা ছুড়ে ফেলা

ইমরুল কায়েস ব্রাত্য হয়েই রইলেন।ছবি: প্রথম আলো

৬, ৬, ৪, ৫— ২০১৯ সালে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে দুই টেস্টের চার ইনিংসে ইমরুল কায়েসের রান। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ইমরুলকে ব্রাত্য বানিয়ে দিতে নির্বাচকদের জন্য এটুকুই ছিল যথেষ্ট। অথচ সবাইকে চমকে দিয়ে প্রায় দুই বছর পর তাঁকে আবারও ডাকা হলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রাথমিক দলে। তবে কাল প্রথম দুই ম্যাচের জন্য ঘোষিত চূড়ান্ত দলে আর সুযোগ হয়নি এই বাঁহাতি ওপেনারের।

ইমরুলকে যে চূড়ান্ত দলে রাখা হবে না—এটা নাকি আগে থেকেই ঠিক করা। সেটিই যদি হবে তাহলে তাঁকে প্রাথমিক দলেই বা ডাকা হলো কেন? দেশের হয়ে ১৩১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটারের জন্য এটা অপমানজনক এবং ক্রিকেট সংস্কৃতির জন্যও ভালো উদাহরণ নয়।

কেবল অনুশীলন ম্যাচ খেলার জন্যই ডাকা হয়েছিল ইমরুলকে!
ছবি: প্রথম আলো

ইমরুলের বয়স ৩৪ হয়ে গেছে, সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের মাটিতে। সে সিরিজে ভালো রান করতে পারেননি। এ মুহূর্তে জাতীয় দলে তামিম ইকবালের সঙ্গী হওয়ার মতো ওপেনার আছেন বেশ কয়েকজনই। লিটন দাস আছেন। মোহাম্মদ নাঈমও খারাপ করছেন না। ওপেনিংয়ের পাশাপাশি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন নাজমুল হোসেন, সৌম্য সরকার। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা তো আছেনই।

এ অবস্থায় ইমরুলের দলে জায়গা করে নেওয়াটা বেশ কঠিন এবং সেটা টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকেরাই সবচেয়ে ভালো জানেন। কাল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনও বলেছেন, ইমরুলকে মূল দলে নেওয়ার পরিকল্পনা নাকি তাদের কখনোই ছিল না। নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্যই তাঁকে ২৩ জনের দলে রাখা হয়েছিল।

ইমরুলকে চূড়ান্ত দলে নেওয়ার পরিকল্পনাই নাকি ছিল না!
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচকদের এই নীতি তাদেরই মতের বিরুদ্ধে যায়। কারণ, ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজার সরে দাঁড়ানোর পর বলা হয়েছিল এখন থেকে ওয়ানডে দল হবে ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। সেদিক থেকেও ইমরুলের প্রাথমিক দলে থাকার কথা নয়। অবশ্য নিজেদের বলা কথা থেকে তো নির্বাচকেরা সরে এসেছেন আরো আগেই।

ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের প্রাথমিক দলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের তরুণ বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেনকে সুযোগ দিয়েছিলেন নির্বাচকেরা। ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুনদের দেখতেই তাঁকে নেওয়া। একই কারণে মাশরাফির পরিবর্তে দলে রাখা হয়েছিল তরুণ পেসার শরীফুল ইসলামকে। কিন্তু চোটে পড়ে প্রাথমিক দল ঘোষণার দুই দিন পরই ছিটকে পড়েন পারভেজ।

নির্বাচনী ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে তো চোটমুক্ত পারভেজেরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রাথমিক দলে থাকার কথা! কিন্তু ডাকা হয় ইমরুলকে। তাঁর জায়গায় পারভেজকে ডাকা হলে এমন প্রশ্ন উঠত না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে পারভেজকে জাতীয় দলের আবহে অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু ইমরুলের বেলায় তো সে যুক্তিও খাটে না!

ইমরুল বাংলাদেশের দুর্ভাগা ক্রিকেটারদেরই একজন। কখনোই ‘প্রথম পছন্দ’ হিসেবে দলে আসেন না তিনি। কখনোই তাঁকে এই বলে নির্ভার খেলতে দেওয়া হয় না যে, ‘পরের ১০টি ম্যাচে তুমি খেলবে।’ ইমরুল যত ম্যাচ খেলেছেন তার বেশির ভাগই অন্য খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতির কারণে। ২০১৫ সালে যেমন শুরুতে দলে না থেকেও ‘বিশ্বকাপ’ খেলা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ২০১৯ সালে এসে তাঁর ক্যারিয়ারে মোটামুটি স্থায়ী যতি চিহ্নই পড়ে গিয়েছিল।

সেই ইমরুলকে আশার আলো দেখিয়ে আবার অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলাটা বোধহয় তার প্রতি একটু নির্দয় আচরনই হয়ে গেল। আর তাতে ফুটে উঠল টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচক কমিটির চিন্তার দৈন্যতাও।