এই গ্যাব্রিয়েলকে সামলাতে পারবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের জন্য হুমকি হবেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের জন্য হুমকি হবেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ফাইল ছবি
>

আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। নর্থ সাউন্ডে প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে দুই দল। পেসবান্ধব ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উইকেটে বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে যাচ্ছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল

জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফট, অ্যান্ডি রবার্টস—একনিশ্বাসে পড়া হয়ে গেল নামগুলো? এবার আরেকবার নিশ্বাস টেনে নিয়ে পরের নামগুলোও পড়ে নিন—কার্টলি অ্যামব্রোস, ম্যালকম মার্শাল, ইয়ান বিশপ, কোর্টনি ওয়ালশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলারদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে এ নামগুলোই দেখতে পাওয়া যায়। ল্যান্স গিবসদের যুগে না হয় নাই-বা গেলাম। তবে তাঁদের সবাই ধূসর অতীত। দুই যুগ ধরে নিজেদের সোনালি সময়ের সেনানীদের বিকল্প খুঁজে মরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। তাঁদের মানের তো দূরের কথা, কাছাকাছি মানের কেউ উঠে আসেননি একসময়ের পেস বোলারদের স্বর্গভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে।

পূর্বসূরিদের জায়গা পূরণ করতে পারেননি কোনো পেসারই। যার ফলই বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের করুণ অবস্থা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। ১৯৯৫ সালের পর যে পেসাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে এসেছেন, পূর্বসূরিদের মতো তাঁদের কাউকে ক্রিকেট ইতিহাস মনে রাখবে না।

আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন তিনিও। ২০১২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের। পরের ছয় বছরে খেলেছেন কেবল ৩৫টি টেস্ট। ৩১ গড়ে ও ৫৪ স্ট্রাইক রেটে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১০৩টি—যেটি ঠিক ভয় জাগানো কোনো বোলারের পরিসংখ্যান নয়। এ সময়ে সতীর্থ কেমার রোচই তাঁর চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন।

তবু গ্যাব্রিয়েলই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে যাচ্ছেন। কারণ, তাঁর গত ১৮ মাসের ফর্ম। ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্তও খুব একটা পরিচিত ছিলেন না ক্রিকেট বিশ্বে। কিন্তু এরপরই নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল।

২০১২ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খেলা ২৩ টেস্টে ৩৯ গড় ও ৬৬ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৪৯ উইকেট পেয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল। ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল কেবল একবার, ম্যাচে ১০ উইকেট পাননি কখনো। সবকিছুই বদলে যায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এসে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত ১২টি টেস্ট খেলেছেন গ্যাব্রিয়েল। ২৩.৬৬ গড়ে ও ৪৪ স্ট্রাইক রেটে এ সময়ের মধ্যে নিয়েছেন ৫৪টি উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৩ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট একবার। কদিন আগেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে দলকে জিতিয়েছেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এই অসাধারণ ফর্ম নিয়েই নামবেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও চাওয়া, নিজের এই রুদ্র রূপ বাংলাদেশের বিপক্ষেও ধরে রাখুন গ্যাব্রিয়েল।

রোচ, গ্যাব্রিয়েলরা অতীতের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেস আক্রমণের ধ্বংসাবশেষ। গ্যাব্রিয়েলের মতো এমন অনেকেই আশা নিয়ে এসেও হারিয়ে গেছেন। গ্যাব্রিয়েলের বয়সই যেমন ৩০। অর্থাৎ তাঁর ক্যারিয়ারেরও খুব বেশি বাকি নেই। তবু বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং আক্রমণের অবিসংবাদী নেতা গ্যাব্রিয়েল।

দারুণ ফর্মে থাকা গ্যাব্রিয়েলকে সামলানোটাই হবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতিতে বল করে যাওয়ার সামর্থ্য আছে গ্যাব্রিয়েলের। গতির বিপক্ষে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের নড়বড়ে অবস্থাও কারও অজানা নয়। গতি দিয়েই বাংলাদেশকে এলোমেলো করে দেওয়ার ছক কষছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটির নেতৃত্বে থাকবেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্যাব্রিয়েলকে সামলানোর ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা।