কবে বুঝবেন মুশফিক, তামিমরা?

প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়েছেন এই দুইজন।ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্নটা ইদানীং একটু বেশিই শোনা যাচ্ছে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা যখন একে একে খেলা থেকে বিদায় নেবেন, বাংলাদেশ দলের কান্ডারি হবেন কারা? তরুণদের খেলায় সেই আস্থাটা যে রাখা যাচ্ছে না, যা দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হওয়া যায়! ভবিষ্যতের সাকিব–তামিম–মুশফিকদের ছায়া যে দেখা যাচ্ছে না তাঁদের মধ্যে!

ভবিষ্যৎ নিয়ে এই আশঙ্কার মধ্যে আপাত স্বস্তি আবার সাকিব–তামিমদের কথাই। আরও তিন–চার বছর বাংলাদেশ দলকে সার্ভিস দিয়ে যাওয়ার আশাটাও তো তাঁরাই দেখান। কিন্তু অভিজ্ঞ ও অগ্রজ ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে দলে যে ভূমিকাটা অভিজ্ঞদের রাখা উচিত, সেটি কি তাঁরা রাখতে পারছেন?

ফিফটি করেই ফিরেছেন তামিম।
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ দলের আজকের ইনিংসটার দিকেই তাকান। এটা ঠিক যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ মুশফিক–তামিম–মাহমুদউল্লাহদের ফিফটির সৌজন্যেই বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার সামনে ২৫৭ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে। তরুণদের অবদান এখানে সামান্যই। বোলার–ফিল্ডাররা তাঁদের কাজটা ঠিককঠাকভাবে করলে এই রানও হতে পারে জয়ের জন্য যথেষ্ট। তবু প্রশ্নটা থেকেই যায়। আরও ভালো কি হতে পারত না বাংলাদেশের ব্যাটিংটা?

তামিম–মুশফিকের ব্যাটে সে রকম সম্ভাবনা ছিল বলেই আলোচনার সূত্রপাত। শুরুতেই সঙ্গী ওপেনার লিটন দাসকে হারানোর পর দুই সিরিজ বিরতি দিয়ে ফেরা সাকিব আল হাসানও তামিমের সঙ্গে থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। কিন্তু ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর যে নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছিল বাংলাদেশ দল, সেটি বেশ ভালোই সামাল দিয়েছেন তামিম ও মুশফিক। ততক্ষণে তামিমেরও উইকেটে পুরোপুরি থিতু হয়ে যাওয়ার কথা। আর শ্রীলঙ্কার বোলার–ফিল্ডারদের কাবু করতে প্রচণ্ড গরম তো ছিলই। কিন্তু মুশফিকের সঙ্গে বড় কিছু করার সম্ভাবনাটার অপমৃত্যু ঘটালেন তামিম নিজেই।

সেঞ্চুরির সম্ভাবনা নিজেই নষ্ট করেছেন মুশফিক।
ছবি: প্রথম আলো

উইকেটে থিতু হয়ে গেলে নিজের ওপর একটা আত্মবিশ্বাস এমনিতেই চলে আসে ব্যাটসম্যানের। ছয় বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ফিফটি করে ফেলার পর তামিমের মধ্যেও সেটা চলে আসা অস্বাভাবিক ছিল না। হয়তো সে আত্মবিশ্বাস থেকেই শ্রীলঙ্কার অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন। বোলার যখন দৌড় শুরু করলেন তামিম প্রথমে একটু লেগের দিকে গিয়ে তারপর আবার স্বাভাবিক জায়গায় আসতে চাইলেন। কিন্তু চাতুর্যে হেরে গেলেন ততক্ষণে হাত থেকে বল ছেড়ে দেওয়া ডি সিলভার কাছে। তামিমের দোলাচল দেখে সোজা ইয়র্কারই মেরে দিলেন ধনাঞ্জয়া। তামিম হয়ে গেলেন এলবিডব্লু।

কৌশলের হার–জিত ক্রিকেটের নিত্য ঘটনা। তাই বলে ক্রিকেটাররা ঝুঁকি নেবেন না, তা তো নয়! কিন্তু পরিস্থিতি বোঝারও তো একটা ব্যাপার থাকে। তামিমের আজ সুযোগ ছিল দলকে আরও বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যাওয়ার এবং নিজেও বড় কিছু করার। দলের বাজে সময়টা পার করে দিয়ে যখন তাঁর সেই বড় কিছুর দিকে যাওয়ার সময় হয়েছিল, তখনই ও রকম ঝুঁকি নেওয়াটা কি ঠিক হলো?

তামিমের মতো মুশফিকুর রহিমও বুঝলেন না সময়ের দাবি। রিভার্স সুইপ তাঁর প্রিয় শটগুলোরই একটি। প্রস্তুতিতে এই শটের অনুশীলন করেন নিয়মিত। মাঠেও সুযোগ পেলেই খেলেন রিভার্স সুইপ। কিন্তু আজ যে মুহূর্তে তাঁর ব্যাটের ওপরই নির্ভর করছিল বাংলাদেশের বড় ইনিংসের সম্ভাবনা এবং যখন তাঁর আর সঙ্গী মাহমুদউল্লাহর পর দায়িত্ব নেওয়ার মতো আর কেউ নেই, তখনই কেন ওই শট খেলে আউট হতে হবে!

মাহমুদউল্লাহও ফিফটির পর ফিরেছেন।
ছবি: প্রথম আলো

মুশফিক হয়তো বলবেন, ওই বলটাতে তিনি আউট না হলেই আর এ নিয়ে সমালোচনা হতো না। আউট হয়েছেন বলেই যত কথা। কিন্তু ওই সময় ওই শট খেলে আউট হয়ে আক্ষেপ যে তাঁরও হয়েছে, সেটি তো ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আকাশের দিকে তাকিয়ে হতাশা প্রকাশেই স্পষ্ট। অথচ বাংলাদেশের ইনিংসের তখনো ৬ ওভার ৫ বল বাকি। আরেকটু ধৈর্য ধরলেই হয়তো মুশফিক পারতেন দিনটাকে সেঞ্চুরির রঙে রাঙাতে। শ্রীলঙ্কার সামনে বাংলাদেশও দিতে পারত আরও বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি হলো না আরও একবার তাঁর ওই আত্মঘাতী শটেই।

তরুণদের দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষার মধ্যে তাই আকাশে–বাতাসে ভেসে বেড়ায় অভিজ্ঞদের হঠাৎই দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে পড়ার আক্ষেপও। যে সম্ভাবনাময় ইনিংসগুলোকে চাইলেই তারা পারেন বড় উপলক্ষের অলংকার করে তুলতে, সেগুলোর অপমৃত্যু হয় তাঁদের হাতেই। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মুহূর্তগুলোও তাতে বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যায়।

মুশফিক, তামিমরা কবে বুঝবেন তাঁদের উইকেটের মূল্য?