কলকাতায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত, সুযোগ মিলবে সাকিবের?

সাকিব আল হাসান।ফাইল ছবি

এবারের আইপিএলের শুরুটা ভালোই হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। প্রথম ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারানোর পর থেকেই ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে দলটি। পরের ছয় ম্যাচে মাত্র একবারই হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পেরেছে দলটি। এমনই অবস্থা যে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে। কলকাতার দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, উঠেছে বোলারদের ধার নিয়ে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দলের ব্যাটিং নিয়ে।
এবারের আইপিএলের অর্ধেক মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। প্রথম সাত ম্যাচে কলকাতাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ব্যাটিং। প্রথম ম্যাচের পর থেকে প্রতি ম্যাচেই ইনিংসের কোনো না পর্যায়ে ধস নেমেছে কলকাতা ইনিংসে। আর প্রায় প্রতি ম্যাচেই ধীরগতিতে শুরু করেছে দল। এরই মূল্য চুকিয়েছে একের এক পর ম্যাচ হেরে।

গতকাল দিল্লি ক্যাপিটালসের সামনে আরও একবার উড়ে গেছে কলকাতার ব্যাটিং। নিজের দলের ব্যাটসম্যানদের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠেছেন কলকাতার কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

পাওয়ার–প্লের সুবিধা নিতে পারছে না বলে বিরক্ত কোচ দলে পরিবর্তন আনার পক্ষে। সে সুবাদে দলের ব্যাটিং লাইনের খোলনলচে বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন সাকিবদের কোচ।

দলের পারফরম্যান্সে বিরক্ত ম্যাককালাম।
ছবি: আইপিএল

গতকাল কলকাতার ম্যাচটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ছিল। একদিকে টেনেটুনে মাত্র ১৫৪ রান তুলেছিল কলকাতা। উল্টো দিকে পৃথ্বী শর আগ্রাসী ইনিংস সে স্কোরকে রীতিমতো মামুলি বানিয়ে দিয়েছিল। ৪১ বলে ৮২ রান তোলা শ দিল্লিকে ২১ বল আগেই জয় এনে দিয়েছেন। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান যেখানে ঝড় তুলছেন, সেখানে তাঁর ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো ওয়ানডে ছন্দে ব্যাট করছেন—এটা দেখা বেশ কষ্টদায়ক ম্যাককালামের মতো আগ্রাসী ক্রিকেটারের জন্য।

কাল ম্যাচ শেষ তাই নিজের টপ অর্ডারকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন ম্যাককালাম। ম্যাককালামের দাবি, এক-দুই ম্যাচে ব্যর্থ হলেও যেন বাদ দেওয়া না হয়, এমন প্রতিশ্রুতি তাঁর কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন কলকাতার ব্যাটসম্যানরা।

প্রতিদানে আগ্রাসী খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত কিছু পাননি ম্যাককালাম। গতকালও পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৪৫ রান তুলেছে কলকাতা, ‘এটা খুবই হতাশজনক। আমার ধারণা, একজন খেলোয়াড় হিসেবে সবাই স্বাধীনতা চায়, দল নির্বাচনের সময় আস্থা ও বিশ্বাস চায় যেন মাঠে গিয়ে খেলাটা ধরতে পারে, আগ্রাসী হতে পারে, দলের জন্য কিছু করতে পারে। আমি আর অধিনায়ক (এউইন মরগান) এমন খেলাটাই খেলোয়াড়দের কাছে চাইছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সেটা করতে পারছি না। নিশ্চিতভাবে যতটা দরকার ততটা পাচ্ছি না।’

শুরুতে দ্রুত রান তুলতে পারছেন না রানারা।
ছবি: আইপিএল

দলের দুই ওপেনারের ওপরই বেশি বিরক্ত ম্যাককালাম। সরাসরি নাম না বললেও শুভমন গিল ১২০–এর নিচে স্ট্রাইকরেটে মাত্র ১৩২ রান করেছেন। নিতীশ রানা একটু ভালো করেছেন। দলের সর্বোচ্চ ২০১ রান তাঁর। কিন্তু তাঁর স্ট্রাইকরেটও মাত্র ১২২.৫৬। এই আইপিএলে মাত্র দুবার পাওয়ার প্লেতে ৫০ পেরিয়েছে কলকাতা। আর কাল দিল্লি কলকাতার বিপক্ষে তুলেছে ৬৭ রান। পৃথ্বী শ প্রথম ওভারেই তুলেছেন ২৫ রান। শিভম মাভির প্রথম ওভারের ছয় বলে ছয়টি চার মেরেছেন শ।

মুগ্ধ ম্যাককালাম নিজের ব্যাটসম্যানদের শর ইনিংস থেকে শিখতে বলছেন, ‘আজ (গতকাল) রাতে পৃথ্বী শর কাছ থেকে যা দেখেছি, সেভাবেই আমরা খেলতে চাই। আপনি প্রতি বলেই চার বা ছক্কা মারতে পারবেন না, কিন্তু আপনার মধ্যে সেই চেষ্টা থাকতে হবে, বিশেষ করে যখন আপনাকে সেই লাইসেন্স দিয়ে রাখা হয়েছে।’

ম্যাককালাম এরপরই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলে বড় পরিবর্তন আনতে চাইছেন, ‘পুরো ক্যারিয়ারে একটা কথা সব সময় বলেছি, “যদি কোনো মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনতে না পারো, তাহলে মানুষটাকেই বদলে ফেলো।” আমরা তাই কিছু পরিবর্তন আনতে পারি এবং নতুন কিছু মুখ আনব, যারা খেলাটাকে আরেকটু বেশি কিছু দিতে পারে।’

শুরুটা ভালো না হওয়ায় রাসেলদের ওপর বেশি চাপ পড়ছে।
ছবি: আইপিএল

পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও তাতে অবশ্য সাকিব আল হাসানের ফেরার সম্ভাবনা কম। প্রথম তিন ম্যাচ খেলা সাকিব ৩ ম্যাচে ৩৮ রান করলেও সেটা এসেছে ৯৭ স্ট্রাইকরেটে। তাঁর বদলি হিসেবে খেলা সুনীল নারাইন আরও ব্যর্থ। ৪ ম্যাচে করেছেন ১০ রান। কিন্তু সাকিব বা নারাইন মিডল অর্ডারে নিচের দিকে খেলেন।

ম্যাককালাম পরিবর্তন আনতে চাইছেন টপ অর্ডারে। দ্রুত রান তুলতে পারেন এমন ব্যাটসম্যানদেরই খেলাতে চান ম্যাককালাম, ‘ধীরগতির উইকেটে নতুন বল ও ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাধকতার নিয়ম কাজে লাগাতে হয়। আমাদের একটা জিনিস মাথায় গেঁথে নিতে হবে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পুরোনো সেই মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে হবে যে একটা বাউন্ডারির পরের বলে একটা সিঙ্গেল নিতে হবে। যদি একটি বাউন্ডারি পান, তবে আরেকটা মারার কথা ভাবতে হবে এবং এরপর আরেকটা। যদি সেটা করতে পারেন, তাহলেই প্রতিপক্ষ বোলার অনেক চাপে পড়বে এবং তখন সাধারণত যা হয়, তারা পরিকল্পনা আর কাজে লাগাতে পারে না। এটা খুবই হতাশাজনক; কারণ, বারবার বলেছি আমাদের আরও আক্রমণাত্মক হতে হবে এবং আরও বেশি আগ্রাসী হতে হবে, খেলাটাকে ধরতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা করছিই না। তার মানে আমাদের কিছু বদল আনতেই হচ্ছে।’