কাশ্মীরের ছেলের গতির ঝড় আইপিএলে

উমরান মালিক গতির ঝড় তুলছেন আইপিএলেছবি: আইপিএলে

আইপিএল নিলামের আগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সিদ্ধান্ত সবাইকে চমকে দিয়েছিল। ডেভিড ওয়ার্নার ও রশিদ খানকে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি ধরে রাখতে পারবে না, সেটা জানাই ছিল। তাই বলে উমরান মালিককে ৪ কোটি রুপিতে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত! ২০২১ আইপিএলে ৩ ম্যাচ খেলে ৪৮ গড়ে ২ উইকেট পেয়েছিলেন এই ফাস্ট বোলার, সেটাও ওভারপ্রতি ৮ করে রান দিয়ে। তবু কাশ্মীরের ফাস্ট বোলারকে ধরে রেখেছে হায়দরাবাদ।

সে সিদ্ধান্ত এখনো সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি উমরান মালিক। ২২ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার গতকাল ৩ ওভারে ৩৯ রান দিয়েছেন। সতীর্থরা যখন ওভারপ্রতি সাড়ে সাত রান দিচ্ছেন, তখন কোনো উইকেট না পাওয়া এক বোলারের এত রান বিলানো অপরাধ। তবু কাল রাতে আইপিএলে নিয়ে আলোচনায় উমরান মালিকের নামটাই উঠে এসেছে। আইপিএলের এই মৌসুমে দ্রুততম বল করেছেন মালিক।

জস বাটলারের হাতে নাকাল হয়েছিলেন মালিক
ছবি: আইপিএল

গত মৌসুমেই ঘণ্টায় নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন মালিক। আইপিএলের বাইরে পেশাদার ক্রিকেটে মাত্র ৯ ম্যাচ খেলা এই ফাস্ট বোলারকে তাই ধরে রেখেছিল হায়দরাবাদ। প্রথম ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে প্রথম ওভারে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছিল। জস বাটলারের সামনে পড়ে দুই ছক্কা ও দুই চারে ২১ রান দিয়ে বসেন। কিন্তু পরের ওভারে ফিরেই বাটলারকে গতিতে পরাস্ত করেছেন। শেষ ৩ ওভারে ১৮ রানে মালিকের ২ উইকেট পাওয়া দেখে স্টার স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দেওয়া সাবেক অধিনায়ক রবি শাস্ত্রী বলেছেন, সন্দেহ নেই উমরান মালিক ভারতের হয়ে খেলবে।

২০২২ আইপিএলে উমরান মালিকের দ্রুতগতির বল:

গতকাল প্রায় একই কথা বলেছেন জয় ভট্টাচার্য। লেখক ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাবেক এই কর্মকর্তা দেখেছেন, গতকাল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে মালিকের প্রথম ওভারটি ছিল দুর্দান্ত। প্রথম দুটি বলই ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার গতির। তৃতীয় বলে গতি একটু কমে নেমে আসে ১৪২-এ। পরের তিনটি বলের গতি আবার ১৪৬, ১৪৬, ১৪২। এর মধ্যে চতুর্থ বলটি ছিল ১৪৬ কিলোমিটার গতির ইয়র্কার। সঙ্গে সঙ্গে ভট্টাচার্যের টুইট, ‘১৪৬ কিলোমিটার গতির ইনসুইং ইয়র্কার, লোকেশ রাহুল কীভাবে যেন ঠেকিয়ে দিয়েছে। উমরান মালিক খুব দ্রুত ভারত দলে খেলবে।’

রাজস্থানের বিপক্ষে ২ উইকেট পেয়েছিলেন মালিক
ছবি: আইপিএল

গতির কথা চিন্তা করলে মালিকের দ্বিতীয় ওভারটি ছিল আরও দুর্দান্ত। সে ওভারের কোনো বলই ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতির নিচে করেননি। ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার গতি দিয়ে শুরু করেছেন, সেটা ১৫১ হয়ে তৃতীয় বলে ১৫২–তে উঠেছে। পরের তিনটি বলের গতি ছিল যথাক্রমে ১৫০, ১৪৫, ১৪৬ কিলোমিটার। কিন্তু গতিই যে সবকিছু নয়, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন লোকেশ রাহুল ও দীপক হুদা। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ওই ওভার থেকে ২০ রান এসেছে।

১৪তম ওভারে মালিককে আবার বোলিংয়ে ফেরানো হয়। এই ওভার থেকে আরও ১৬ রান তুলে নিয়েছেন দুই ব্যাটসম্যান। আর এ ওভারেই এবারের আইপিএলের সবচেয়ে দ্রুতগতির বলটি করেছেন উমরান মালিক। তবে ১৫২.৪ কিলোমিটার গতির সেই বলের ভুল লেংথ কাজে লাগিয়ে ঠিকই চার মেরেছেন হুদা। শেষ বলেও হজম করতে হয় ছক্কা।

টানা দুই ম্যাচে দ্রুততম বলের পুরস্কার পেয়েছেন মালিক
ছবি: আইপিএল

উমরানের গতিতে মুগ্ধ ইরফান পাঠান আশা হারাচ্ছেন না। টুইট করেছেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে উমরান মালিককে মাঝের ওভারে ব্যবহার করার বুদ্ধিটা সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাজে দেবে।’ হায়দরাবাদের বোলিং পরামর্শক ডেল স্টেইন আগেই জানিয়েছেন, এত সহজে হাল ছাড়বেন না তাঁরা, ‘সবাই উমরান মালিককে দেখার সম্ভাবনায় রোমাঞ্চিত। সে নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করে।’ ম্যাচের চার ওভারে গড়ে ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করা যে কত কঠিন সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন স্টেইন।

আইপিএলে সবচেয়ে দ্রুত গতির বলগুলো:

এ মৌসুমে ১৫২.৪ গতিতে বল করলেও এটাই মালিকের দ্রুততম নয়। গত মৌসুমেই ১৫২.৯৫ কিলোমিটার গতিতে বল করে আইপিএলে ভারতীয় বোলারদের সবচেয়ে দ্রুতগতির বলের রেকর্ড ভেঙেছেন। তবে আইপিএলের ইতিহাসের দ্রুতগতির বলের রেকর্ড ভাঙতে হলে বিশেষ কিছু করতে হবে মালিককে। তালিকার ১১তম দ্রুততম বলটি তাঁর।

বয়স মাত্র ২২ বছর, হাতে পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন মালিক।