কিপ্টে কৃষ্ণায় এলোমেলো উইন্ডিজ, সিরিজ ভারতের
লড়াই—ভারত সফরে ব্যাটিংয়ে এটাই যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মূল ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে! শুরুতেই উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়ার পর লড়াই করতে করতে স্কোরবোর্ডে মোটামুটি একটা স্কোর দাঁড় করাবে, এরপর হারবে—এটাই যেন হয়ে যাচ্ছে নিকোলাস পুরানের দলের নিয়তি! আহমেদাবাদে প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করে লড়াইয়ের এ কাজ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, একই মাঠ আজ একই কাজ তারা করেছে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে।
পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও ফলাফল সেই একই, ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের ৯ উইকেটে ২৩৭ রান তাড়া করতে নেমে ৪৬ ওভারে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে গেছে তারা। ৪৪ রানে জিতে ২–০-তে এগিয়ে থেকে তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে রোহিত শর্মার ভারত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ অবশ্য এলোমেলো হয়ে গেছে ভারতের পেসার প্রসিধ কৃষ্ণার কিপ্টে বোলিংয়ের কাছে। ৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩১ রান তুলে ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু অষ্টম ওভারে এসে তৃতীয় বলেই ভারতকে উইকেট এনে দেন প্রসিধ কৃষ্ণা। ঋষভ পন্তের কাছে ক্যাচ দিয়ে ব্র্যান্ডন কিং আউট হয়ে ফেরেন ১৮ রান করে। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে কৃষ্ণা তুলে নেন ড্যারেন ব্র্যাভোকে। ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ৩ রান দিয়ে নিয়েছেন এই ২ উইকেট।
দ্রুত আরও দুটি উইকেট হারিয়ে বিনা উইকেটে ৩২ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৭৬ রান। এরপর সামারা ব্রুকস ও আকিল হোসেন শুরু করেন লড়াই। তবে ষষ্ঠ উইকেটে তাঁদের ৪১ রানের জুটি ভাঙে দীপক হুদার বলে ব্রুকস আউট হয়ে ফিরলে। সপ্তম উইকেটে আকিল হোসেন এরপর ৪২ রানের জুটি গড়েন ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে নিয়ে। নবম উইকেটে আলজারি জোসেফ ও ওডিন স্মিথ গড়েন ৩৪ বলে ৩৪ রানের জুটি। কিন্তু এ তিনটি জুটি শুধু হারের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
৯ ওভারে ১২ রান দিয়ে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। ম্যাচ সেরা তিনি। আর কিপ্টেমিতে? ভারতের ইতিহাসেই দ্বিতীয় সেরা! ম্যাচে কমপক্ষে ৯ ওভার বোলিং করেছেন—এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে এটি দ্বিতীয় মিতব্যয়ী বোলিং। ভারতীয় পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে কিপ্টে বোলিং জাভাগাল শ্রীনাথের। ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে তিনি ১০ ওভার বোলিং করে ১৩ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
এর আগে ভারতের রানটা যে খুব বেশি হলো না, এতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের অবদান অনেক। কেউ কেউ হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের কৃতিত্ব দেওয়ার চেয়ে ভারতের ম্যাচ পরিকল্পনাকেই এর কারণ হিসেবে দেখাবেন।
রোহিত শর্মাদের ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার শুরু হয় ভারত ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই। প্রথম ওয়ানডেতে ৪ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ঋষভ পন্তকে আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামায় ভারতের ম্যানেজমেন্ট। এ নিয়ে কথা বলেছেন সুনীল গাভাস্কারও। ব্যাটিং অর্ডারে রোহিতদের এই পরীক্ষা–নিরীক্ষা কাজে লাগলে খুব ভালো হবে—এমনই মন্তব্য করেছিলেন ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি। তবে একটি প্রশ্নও সেই সময় তুলেছিলেন—পন্ত উদ্বোধনে গেলে ফিনিশারের কাজটা তাহলে কে করবে?
ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে সফল হননি পন্ত। ৩৪ বলে ১৮ রান করে আউট হয়েছেন ভারতের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। তবে লোকেশ রাহুল চার নম্বরে নেমে ভালোই করেছেন। সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছয়ে করেছেন ৪৯ রান। ৪৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সূর্যকুমারকে নিয়ে মিডল অর্ডারে ভারতের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছেন তিনি।
পন্তের ওপেনিং পার্টনার রোহিত মাত্র ৫ রান করে আউট হয়েছেন। আর তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা বিরাট কোহলি ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ। প্রথম ওয়ানডের চেয়ে ১০ রান করে বেশি করে আজ আউট হয়েছেন ১৮ রানে! পন্ত, রোহিত ও কোহলি চলে যাওয়ার পর চতুর্থ উইকেটে ১০৬ বলের জুটিতে রাহুল ও সূর্যকুমার মিলে তুলেছেন ৯১ রান। জুটিতে বড় অবদান রাহুলেরই, ৪৭ বলে করেছেন ৪৯৮ রান। আর সূর্যকুমার ৪০ রান তুলেছেন ৫৯ বলে।
রাহুলের আউটের পর খুব বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি সূর্যকুমারও। রাহুল আউট হয়েছেন দলের ১৩৪ রানে, সূর্যকুমার ফিরেছেন দলকে ১৭৭ রানে রেখে। এরপর যা রান এসেছে তা ওয়াশিংটন সুন্দর ও দীপক হুদার ব্যাটে। সুন্দর ৪১ বলে করেছেন ২৪ রান, হুদার রান ২৫ বলে ২৯। শেষ দিকে ব্যাট হাতে আর কেউ তেমন কিছু করতে না পারায় বড় স্কোর গড়ার ইঙ্গিত দিয়েও তা করতে পারেনি ভারত। সে জন্য অবশ্য ভুগতেও হয়নি!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন দুজন—আলজারি জোসেফ ৩৬ রানে ২ উইকেট আর ওডিন স্মিথ ২ উইকেট নিয়েছেন ২৯ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে বোলারই বল হাতে নিয়েছেন, উইকেট পেয়েছেন। একটি করে উইকেট কেমার রোচ, জেসন হোল্ডার, আকিল হোসেন ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের।