কোহলিকে ব্যাট করতে না দিয়ে যে রেকর্ডের জন্ম দিল ভারত

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিল্ডিংয়ের সময় ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিছবি: এএফপি

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনে ব্যাট করেছেন বিরাট কোহলি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ব্যাট করেছেন চারে। আবুধাবিতে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন-চার দূরের কথা, কোহলি ব্যাটিংয়েই নামলেন না!

বিষয়টি একটু হলেও বিস্ময় জাগায়। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি, অথচ তাঁকে ছাড়াই কিনা আফগানিস্তানের বিপক্ষে এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট করল ভারত। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি।

আগে ব্যাট করে ২ উইকেটে ২১০ রান তুলেছে ভারত। তবু ভারত কোনো ম্যাচে পুরো সময় ব্যাট করবে আর কোহলি নামবেন না, তা হয় নাকি!

হয়। দলের ভালোর জন্য ম্যানেজমেন্ট যেকোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারে—এ কথাও বিস্ময় জাগাতে পারে। কোহলির মতো ব্যাটসম্যানকে ব্যাটিংয়ে না নামিয়ে দলের কী এমন লাভ! পরিসংখ্যান এবং আজকের ম্যাচ পরিস্থিতিতে তাকালে বিষয়টি বোঝা যায়।

তার আগে একটি নজিরবিহীন বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো। কোহলির দল আগে ব্যাট করেছে কিন্তু তিনি নিজে ব্যাটিংয়ে নামেননি—এমন ঘটনা কোহলির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আজই প্রথম।

কোহলি ও আফগানিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৪৯ বলে ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন কোহলি। সে ম্যাচে ১১৬.৩২ স্ট্রাইক রেট তাঁর নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করে না। ম্যাচে সেদিন যথেষ্ট চাপ ছিল, সম্ভবত এ কারণেই রয়েসয়ে খেলতে হয় ভারত অধিনায়ককে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ বলে ৯ রানে আউট হন তিনি।

রান তো পানইনি, উল্টো স্ট্রাইক রেটও ছিল বিস্ময়করভাবে কম। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারতের তৃতীয় ম্যাচে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টকে তাই কোহলিকে নিয়ে ভাবতে হয়েছে।

ওপেনিং জুটিতে লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মাকে পাঠায় ভারত, সেই ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ১৪.৪ ওভারে। তার আগে উঠেছে ১৪০ রান। এ অবস্থায় নামতে পারতেন কোহলি। কিন্তু তা না করে পাঠানো হয় ঋষভ পন্তের মতো তরুণকে।

লক্ষ্য পরিষ্কার—যত বেশি সম্ভব রান তুলে নেওয়া। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া ভারতকে সেমিফাইনালে উঠতে যে নিজেদের বাকি তিন ম্যাচে জয় ও নিউজিল্যান্ডের অন্তত একটি হার কামনার পাশাপাশি রানরেটটাও নিউজিল্যান্ড-আফগানিস্তানের চেয়ে বেশি রাখতে হবে!

কোহলি উইকেটে থিতু হতে খানিকটা সময় নেন। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, টি-টোয়েন্টিতে পন্তের (১২১.০৭) স্ট্রাইক রেট কোহলির (১৩৭.৯৩) চেয়ে কম। কিন্তু বয়সে তরুণ এবং শুরু থেকেই মারতে পারেন—এই ভাবনা থেকে সম্ভবত পন্তকে তিনে ব্যাট করতে পাঠায় ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট।

২০৭.৬৯ স্ট্রাইক রেটে ১৩ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থেকে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাকে যৌক্তিক প্রমাণ করেন পন্ত। ইনিংসে মেরেছেন ৩ ছক্কা ও ১টি চার।

চারেও কোহলিকে নামায়নি ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট। ১৬.৩ ওভারে লোকেশ রাহুল আউট হলে তাঁর জায়গায় হার্দিক পান্ডিয়াকে নামানো হয়। ১৪১.৯১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা এই অলরাউন্ডারের ব্যাট করতে নামার জন্য সময়টা আদর্শ।

ভারতের ইনিংসে ‘ফিনিশ’ করায় হাত পাকানো পান্ডিয়াও হতাশ করেননি। ২ ছক্কা ও ৪ চারে ১৩ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কোহলি আছেন, এমন ম্যাচে এ নিয়ে ৫০তম বার আগে ব্যাটিং করল ভারত। তার মধ্যে আগের ৪৯ বারই ভারতের হয়ে ব্যাট করেছেন কোহলি। আজই শুধু তাঁকে ব্যাটিংয়ে দেখা গেল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট তো আছেই। আজকের আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক যেকোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আগে ব্যাট করা দলের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামতে দেখা গেছে কোহলিকে।

আজকের ম্যাচটা তাই কোহলির জন্য একটু অন্যভাবেই স্মরণীয় হয়ে থাকছে!