ক্রিকেটে বাজির নেশায় মা-বোনকে খুন তরুণের
ক্রিকেট নিয়ে বাজি ধরার কড়া নেশা। সে নেশা ছাড়তেই পারছিলেন না তরুণ। বাজি ধরতে ধরতে মায়ের ব্যাংকে রাখা সব অর্থ তুলে এনেও শান্তি পাননি। নিজেদের সব সহায়–সম্পত্তিও বিক্রি করা শুরু করেন।
কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান মা ও ছোট বোন। নিজের বাজির নেশার পথে বাধা সহ্য হয়নি তরুণের। তাই পরিকল্পনা করে খুন করেন মা ও বোনকে।
এমন ভয়ংকর এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের হায়দরাবাদে। ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী এ নৃশংস কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন। পাল্লি সৈনত রেড্ডি নামের এই প্রকৌশল শিক্ষার্থী পরিবারের দুই সদস্য মারা যাবেন, এটা নিশ্চিত করে তবেই হাসপাতালে নিয়েছিলেন!
মেদচল অঞ্চলের থানার পুলিশ এ ঘটনা নিশ্চিত করেছে।
মেদচল পুলিশের বরাতে মুম্বাই মিরর জানিয়েছে, সৈনত মা ও বোনের খাবারে কীটনাশক মিশিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁরা দুজন অচেতন হয়ে পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। মৃত্যু নিশ্চিত, এটা জেনে তারপর দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে এই তরুণ।
মেদচল পুলিশ ইন্সপেক্টর এম প্রবীণ রেড্ডি জানিয়েছেন, পাল্লি সৈনত রেড্ডি এমটেকের ছাত্র। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া এই ছাত্র ক্রিকেট নিয়ে বাজির নেশায় পড়েছিলেন। তাঁর বাবা প্রভাকর রেড্ডি তিন বছর আগেই মারা গেছেন। মা সুনিতা (৪৪) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বোন অনুজা (২২) ফার্মাসিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।
প্রভাকরের মৃত্যুর পর জীবনবিমা থেকে প্রাপ্ত অর্থের সঙ্গে নিজেদের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে সেটা ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন সুনিতা। তাঁর নামেই অ্যাকাউন্ট করা ছিল। কিন্তু বাজির নেশায় মাকে না জানিয়েই পুরো ২০ লাখ রুপি তুলে নিয়ে আসেন এবং পুরোটাই বাজিতে হেরে বসেন।
বাজির অঙ্ক শোধ করতে মায়ের ১৫ তোলা গয়নাও বিক্রি করে দেন। সুনিতা ও অনুজা পরে এ ঘটনা জানতে পেরে তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেন।
এ ব্যাপারে ছেলেকে শাসন করেন এবং নেশা কাটিয়ে উঠতে বলেন সুনিতা। সৈনত এরপরই সব সম্পত্তি বাজিতে খাটানো নিশ্চিত করতে মা ও বোনকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।
২৩ নভেম্বর কীটনাশক কিনে এনে রাতের খাবারে মিশিয়ে দেন। সে সময় মা টিভি দেখছিলেন। খণ্ডকালীন চাকরি করা সৈনত রাতের খাবার নিয়ে অফিসে চলে যান। খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন সুনিতা ও তাঁর কন্যা।
বারবার সৈনতকে ফোন করছিলেন সুনিতা, কিন্তু আগে থেকে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন সৈনত। সকাল ৯টায় ফোন চালু করে মায়ের মেসেজ দেখেন।
সৈনত তখন বোনকে ফোন করলে অনুজা জানান, তাঁদের দুজনের অবস্থা ভালো না। ঘরে ফেরেন সৈনত, কিন্তু মা ও বোনকে তখনো হাসপাতালে নেননি। দুজন যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরই কেবল হাসপাতালে নিয়েছেন সৈনত।
এত দেরি করে হাসপাতালে নেওয়ায় চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও মা-মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি। গত ২৭ নভেম্বর মারা গেছেন অনুজা। তাঁর মা মারা গেছেন পরদিন।
এ ঘটনায় আত্মীয়রা সৈনতকে সন্দেহ করে বসেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করা শুরু করেন। এরপরই ঘটনা স্বীকার করেন। মেদচল পুলিশ হত্যা ও প্রমাণ লুকানোর দায়ে সৈনতকে গ্রেপ্তার করেছে।