খেলাই ছেড়ে দিলেন টেস্টের সবচেয়ে কম বয়সী উইকেটরক্ষক

২০০৩ বিশ্বকাপের সেই দল। আছেন পার্থিব প্যাটেলও (ওপরে, সবার বামে।)ছবি : রয়টার্স

সবাইকে অবাক করে দিয়েই সৌরভ গাঙ্গুলী তাঁকে ভারতীয় দলে নিয়েছিলেন। ২০০২ সালের আগস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নটিংহ্যাম টেস্টে যখন তাঁর অভিষেক হয়, বয়সটা ছিল চমক জাগানিয়া। মাত্র ১৭ বছর ১৫৩ দিন বয়সে ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর। স্বপ্নটা অনেক বড় ছিল। কিন্তু কেন যেন ডালপালা মেলতে পারেনি। অনেকেই বলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি নামটাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেটি বড় কারণ। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে ফুল হয়ে ঠিকমতো ফুটতে না পারা কলি হয়েই আলোচিত হবেন তিনি।

উইকেটরক্ষক হিসেবেই ঢুকেছিলেন দলে।
ছবি : টুইটার

ওপরের কথাগুলো যে পার্থিব প্যাটেলকে নিয়ে বলা, সেটি সব সচেতন ক্রিকেটপ্রেমীই বুঝে গেছেন। আজ সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন পার্থিব। ছোটখাটো, আদুরে চেহারার এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানই বলছে, যতটা দূরে যাওয়ার কথা ছিল, ততটা দূরে তিনি যেতে পারেননি। পরিসংখ্যানজুড়েই আছে একধরনের অপূর্ণতা। এই যেমন ধরুন, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে ওঠা ভারতীয় দলে তিনি ছিলেন। কিন্তু গোটা বিশ্বকাপটাই সৌরভ আস্থা রাখলেন অস্থায়ী হিসেবে কিপিং করা রাহুল দ্রাবিড়ের ওপর।

একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার বেশি খেলানোর অভিপ্রায়ে পার্থিবের বিশ্বকাপ অভিষেকটা হলো না। ২৫ টেস্ট খেলে ৩১.১৩ গড়ে ৯৩৪ রানও অপূর্ণতার ব্যাপারটি সামনে নিয়ে আসে। তাঁর মূল ভূমিকা উইকেটকিপার হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্সও মন্দ নয়। ২৫ টেস্টে ৭২ ডিসমিসাল (৬২ ক্যাচ, ১০ স্টাম্পিং) আর ৩৮ ওয়ানডেতে ৩৯টি (৩০ ক্যাচ আর ৯ স্টাম্পিং) ডিসমিসাল প্রমাণ করে তিনি কিপার হিসেবেও ছিলেন যথেষ্ট ভালো।

শেষ টেস্ট হেলেছিলেন ২০১৮ সালে।
ছবি : টুইটার

ধোনির আবির্ভাবের পর ভারতীয় দলে স্থায়ী জায়গা হারালেও ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সটা ধরে রেখেছিলেন। সে কারণে মাঝেমধ্যে যখনই জাতীয় দলে ডাক এসেছে, তিনি হতাশ করেননি। শেষবার ওয়ানডে খেলেছেন ২০১২ সালে ভারতীয় দলের অস্ট্রেলিয়া সফরে। শেষ টেস্ট খেলেছেন আরও পরে, ২০১৮-তে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে। ১৯৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১১ হাজার ২৪০ রান তাঁর। গড় ৪৩.৩৯। ৪৮৬ ক্যাচ আর ৭৭টি স্টাম্পিং বলে দেয় ঘরোয়া ক্রিকেটে কতটা কার্যকর খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আইপিএলেও ছিলেন নিয়মিত মুখ। খেলে গেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, কোচি টাস্কার্স কেরালা, ডেকান চার্জার্স, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে।

টুইটারে এক বার্তায় নিজের অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন পার্থিব। লিখেছেন, ‘আজ আমি ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্রিকেটযাত্রার সমাপ্তি টানছি। বিদায়ের এই দিনে আপ্লুত হয়ে আমি অনেককেই স্মরণ করছি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের ওপর আস্থা রেখে তাঁকে ভারতের পক্ষে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁরা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুতে আমাকে পথ দেখিয়েছেন, আমাকে সাহায্য করেছেন।’