দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়ে যত কথা

১৫ মার্চ ১৮৭৭। মেলবোর্নের সেই দুপুরে টস করতে নেমে ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ডেভ গ্রেগরি আর ইংল্যান্ড অধিনায়ক জেমস লিলিহোয়াইট। জন্ম হলো টেস্ট ক্রিকেটের। প্রায় ১৩৮ বছর পর আগামী ২৭ নভেম্বর অ্যাডিলেডে যখন টস করতে নামবেন মাইকেল ক্লার্ক ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (এঁরা দুজন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক থাকছেন, সেটা ধরে নিয়ে), শুরু হবে টেস্ট ক্রিকেটের একটা নতুন অধ্যায়। এত দিন যেটা শুধু আলোচনা ছিল, সেটাই বাস্তবে দেখা যাবে সেদিন। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্টটাই হবে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট।
পরশু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এক বিবৃতি দিয়ে এটি নিশ্চিত করেছে, ‘এই গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টটিই হবে ঐতিহাসিক সেই আয়োজন। ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট, যা খেলা হবে গোলাপি কোকাবুরা বলে।’ টেস্ট ক্রিকেটে নতুন প্রাণসঞ্চার করতে আইসিসির ক্রিকেট কমিটির সুপারিশ মাথায় রেখেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড, ‘টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ছুটির দিনগুলোতে ছাড়া বেশির ভাগ টেস্টই খেলা হয় সাপ্তাহিক কার্যদিবসে, দিনের বেলায়। বেশির ভাগ মানুষ তখন কাজে থাকে আর ছোটরা থাকে স্কুলে। খেলার সময়টা বদল করায় সবার জন্য একটা সুযোগ তৈরি হবে কাজ কিংবা স্কুল শেষে মাঠে এসে কয়েক ঘণ্টা খেলা দেখার। আবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকেরাও টেলিভিশনে আরও বেশি সময় খেলা দেখার সুযোগ পাবেন।’ এটিকে টেস্ট ক্রিকেটের এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া মনে করেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইটও, ‘১৮৭৭ সালে প্রথম টেস্ট থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত খেলাটাকে যুগোপযোগী করে রাখতে নিয়মকানুনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এটা তেমনই আরেকটা পদক্ষেপ। ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব খেলাটাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
ইতিহাস গড়তে যাওয়া ম্যাচটির শুরুর সময় এখনো ঠিক হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত খেলা চলবে। টেস্টে প্রতিদিন প্রথম সেশনের পর যেখানে ৪০ মিনিটের ‘মধ্যাহ্নভোজ’ বিরতি দেওয়া হতো, সেখানে দিবা-রাত্রির এই ম্যাচে দ্বিতীয় সেশনের পর ‘রাতের খাবারের’ বিরতি দেওয়া হবে। চা-পানের জন্য ২০ মিনিটের বিরতি আগের মতোই থাকবে। তবে সেটা হবে প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনের মাঝে।
নতুন এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন ক্রিকেটাররা? প্রস্তাবটা যারা করেছিল, আইসিসির সেই ক্রিকেট কমিটির অন্যতম সদস্য ও অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেম্যান কিন্তু আশাবাদী, ‘সময়ই বলবে এটা সঠিক না ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমাদের নতুন কিছু চেষ্টা করে তো দেখতে হবে। আমি মনে করি এটি টেস্ট ক্রিকেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তন হতে পারে।’
সিদ্ধান্তটা নেওয়ার আগে গত মাসে নিউজিল্যান্ডের বেশ কিছু খেলোয়াড়ের মধ্যে এ নিয়ে একটা জরিপ হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে অনেক খেলোয়াড়ই এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দিহান। তার পরও দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে নিউজিল্যান্ডের সম্মতির পেছনে কারণটা কিছুটা বোঝা যাবে নিউজিল্যান্ড প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হিথ মিলসের কথা শুনলেই, ‘বলতে কোনো দ্বিধা নেই, আমাদের খেলোয়াড়েরা দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। এর সফলতা নিয়ে অনিশ্চয়তা, শঙ্কা দুটোই আছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে এ নিয়ে খুঁতখুঁতানি থাকলেও তারা বৃহত্তর স্বার্থটাই দেখছে।’
কী সেই বৃহত্তর স্বার্থ? ধারণা করা হচ্ছে, দিবা-রাত্রির টেস্ট হলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আরও বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে নিউজিল্যান্ড। প্রতিবেশী এই দুটি দেশ ২০১১ সালের নভেম্বরের পর কোনো দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজ খেলেনি। এখন দিবা-রাত্রির টেস্টের মাধ্যমে যদি সেই সুযোগ তৈরি হয়, সেটা কেন নেবে না নিউজিল্যান্ড! রয়টার্স, ক্রিকইনফো।