‘নতুন’ লিটন আর ‘পুরোনো’ নাসুমে কাটল বাংলাদেশের আফগান-জুজু

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ৪৪ বলে ৬০ রান করেছেন লিটন দাসছবি: শামসুল হক

‘রানের খরা ছিল না, ফরম্যাটটাই ছিল আলাদা। কিছুদিন আগেও নিউজিল্যান্ডে খেলে এসেছি, আমার ব্যাটে রান এসেছে। অনেক দিন পর ওয়ানডে খেলছি, ফরম্যাটটাই আলাদা…।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ এক শতকের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন লিটন দাস। ‘রানখরা’ যাচ্ছিল, উপস্থাপকের এমন মন্তব্যের জবাব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে জায়গা পাননি, এবারের বিপিএলটাও সাদামাটাই কেটেছে তাঁর। তবে ফর্মের জন্য ‘সংস্করণ’ দরকার পড়ে না, লিটন মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সেটিই প্রমাণ করলেন লিটন। আর নাসুম আহমেদ দেখালেন, অন্তত টি-টোয়েন্টিতে শুধুই কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করার দরকার নেই। সবুজাভ উইকেটেও ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করা যায়। যদিও তাঁর ৪ উইকেটে আফগান ব্যাটসম্যানদের ‘অবদানই’ বেশি।

১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন নাসুম আহমেদ
ছবি: প্রথম আলো

রেকর্ড, র‍্যাঙ্কিং—আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে দুটিই বিপক্ষে ছিল বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত লিটনের ৪৪ বলে ৬০ রানের ইনিংসের পর নাসুমের ১০ রানে ৪ উইকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেল ৬১ রানের বড় জয়। ১৫৫ রানতাড়ায় আফগানিস্তান গুটিয়ে গেছে মাত্র ৯৪ রানেই।

টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে অবশ্য টপ অর্ডারে পুরোনো সমস্যারই মুখোমুখি হয়েছে। বিভীষিকাময় বিপিএলের পরও দলে জায়গা ধরে রেখেছেন মোহাম্মদ নাঈম, আজ একাদশেও ছিলেন তিনি। তবে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান তিনি দিতে পারেননি। অন্তত দুইবার বল স্টাম্পে ডেকে আনতে নিয়েছিলেন, দুই দফায় বেঁচে গেলেও ফজলহক ফারুকির ফুল লেংথের বলের জবাব ছিল না তাঁর কাছে। অভিষেকে ব্যাটিং করা মুনিমের ইনিংস অবশ্য হয়ে থেকেছে ‘আশা জুগিয়েও হলো না’ ধরনের। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ ৩৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উইকেট পাওয়ার উচ্ছ্বাস
ছবি: প্রথম আলো

এ উইকেটে নেমেই শট খেলা সহজ নয়, সেটি বোঝা গেছে স্পষ্টই। লিটনও নিজের প্রথম বাউন্ডারি মেরেছেন মুখোমুখি হওয়া অষ্টম বলে গিয়ে। তবে একবার ‘ছন্দ’ ধরে ফেললে লিটনের মতো ব্যাটসম্যানরা ভয়ংকর—আজ আরেকবার দেখালেন তিনি।
অন্যদিকে দ্রুত উইকেট হারানোয় অবশ্য লিটনের ইনিংসের ছন্দপতন হয়েছে। ৬ বলে ৫ রান করা সাকিব আল হাসান, ৭ বলে ১০ রান করা মাহমুদউল্লাহরা ইনিংস বড় করতে পারেননি। লিটনকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটা মোটামুটি করতে পেরেছেন আফিফ হোসেনই। শেষ পর্যন্ত ১৭তম ওভারে গিয়ে ফিরেছেন লিটন।

অবশ্য যে বলে আউট হলেন, সেটিতে বড় একটা শট আসতেই পারত। ফজলহকের বলে জায়গা বানিয়ে নিয়েছিলেন, লেগ স্টাম্পের বাইরেও পেয়েছিলেন। তবে টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি। এর আগে ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়।

লিটন ফেরার পর রানের গতি বাড়ানোর কাজটা কঠিন হয়ে পড়েছিল আরও। তবে ৪ ওভারে ৪১ রান তুলে ১৫৫ রানের লড়াই করার সংগ্রহটা পায় বাংলাদেশ। এরপর তো ম্যাচটা নিজের করে নিয়েছেন নাসুম।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়েছে মুনিম শাহরিয়ারের। অভিষেক ম্যাচে ১৮ বলে ১৭ রান করেছেন মুনিম
ছবি: প্রথম আলো

গত বছর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারানো সিরিজে ছিল স্পিন-সহায়ক উইকেটের বড় ভূমিকা। ওই ১০ ম্যাচের মধ্যে ৩ ম্যাচেই নাসুম পাওয়ারপ্লের মধ্যে নিয়েছিলেন ২টি করে উইকেট। তবে আজকের উইকেটে নাসুম ছাড়িয়ে গেলেন নিজের সে কীর্তিকেও।

নাসুমকে দিয়ে শুরু থেকে টানা ৪ ওভার করিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, এর মধ্যে পাওয়ারপ্লের মধ্যে ছিল ৩ ওভার। ওই ১৮ বলের মধ্যেই নাসুম ফিরিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রথম চার জন ব্যাটসম্যানকে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ, হজরতউল্লাহ জাজাই, দারবিশ রাসুলির পর নাসুমের শিকার করিম জানাত। এ উইকেটে একটু অপেক্ষা করতে হয়, লিটনের ইনিংস থেকে সে শিক্ষাটা নেননি আফগান ব্যাটসম্যানরা—সবাই ফিরেছেন নাসুমের ওপর চড়াও হতে গিয়ে।

নাসুমের সে আঘাত আর সামলে উঠতে পারেনি আফগানিস্তান। সাকিব আল হাসান, শরীফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমানরা চেপে ধরেছেন রশিদ খানদের। ১৪ বল বাকি থাকতেই থেমেছে সফরকারীরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান আরেকটু কমিয়েছে বাংলাদেশ, পেয়েছে আত্মবিশ্বাসও।