না ফেরার দেশে সৈয়দ আলতাফ হোসেন

না ফেরার দেশে সৈয়দ আলতাফ হোসেন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
না ফেরার দেশে সৈয়দ আলতাফ হোসেন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
>দেশের ক্রিকেটের কারিগর সৈয়দ আলতাফ হোসেন মঙ্গলবার রাতে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি ছিলেন পাকিস্তান টেস্ট দলে ডাক পাওয়া প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার। বাংলাদেশের বহু ক্রিকেটারের গুরু সৈয়দ আলতাফ ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব।

তিনি ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পাওয়া প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে গড়ে তোলার কারিগর। অজস্র ক্রিকেটারের গুরু। সৈয়দ আলতাফ হোসেন নামটিই ছিল এদেশের ক্রিকেটের এক বিরাট প্রতিষ্ঠান। ৮১ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই মহীরূহ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। হানিফ মোহাম্মদ ছিলেন সে দলের অধিনায়ক। সৈয়দ আলতাফ অবশ্য টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। তবে টেস্ট খেলার সামর্থ্য ছিল বলেই সেদিনের তারকাখচিত পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। চরম আঞ্চলিকতা দোষে দুষ্ট পাকিস্তানি নির্বাচকেরাও তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেননি। খেলোয়াড়ি জীবনে ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার ছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লুডি, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা ও শান্তিনগরের হয়ে। পঞ্চাশের দশক থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সৈয়দ আলতাফ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেটের এক বড় তারকা। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। খেলেছেন কায়েদে আজম ট্রফি ও আইয়ুব ট্রফিতে।
খেলা ছাড়ার পর তিনি আম্পায়ার হিসেবে নাম লেখান। এর পরপরই কোচিংয়ে চলে আসেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কোচ হিসেবে যোগ দেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে। ২৫ বছর চাকরি করেছেন এখানে। সেখান থেকেই তিনি যুক্ত হন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে। একটা সময় ছিল, বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি ছিলেন অবিচ্ছেদ্য এক নাম। তাঁর কোচিংয়েই ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হয় বাংলাদেশের। ১৯৯০ সালে ভারতের এশিয়া কাপেও তিনি বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের পত্তন তাঁর হাতেই হয়েছে। ১৯৯৭ সালেই বিসিবি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল নারী ক্রিকেট দল গড়ে তোলার দায়িত্ব। ১৯৯৯ সালে সৈয়দ আলতাফকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জন্ম নিয়েছিলেন সৈয়দ আলতাফ। তাঁর বাবা চাকরি করতেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া শিপিং কোম্পানিতে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় তাঁর পরিবার বড় ধরনের ট্র্যাজেডির শিকার হন। তাঁর দুই বড় ভাই বলি হন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার। মায়ের সঙ্গে এর পরপরই তিনি চলে আসেন ঢাকায়। এখানেই নিজেকে গড়ে তোলেন ক্রীড়াঙ্গনের বটবৃক্ষ হিসেবে।
২০১১ সালে প্রথম আলো তাঁকে আজীবন সম্মাননায় সম্মানিত করে।