‘পাকিস্তানের বিপক্ষে সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে হয়’

ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিছবি: বিসিসিআই

দুবাইয়ে কাল উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মহারণ। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এ ম্যাচের আগে আজ অনলাইনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন দুই দলের অধিনায়ক।

ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ প্রশ্নোত্তর আকারে নিচে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: ভারতের কম্বিনেশন?

কোহলি: আমরা নিজেদের কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলেছি, এখন থেকে বলতে চাই না। ভারসাম্যপূর্ণ দল। সব দিকেই শক্তিশালী। কীভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব, সে ব্যাপারেও আমরা আত্মবিশ্বাসী। সবাই বর্তমানে অনেক টি-টোয়েন্টি খেলছে, আইপিএল খেলে এসেছে সবাই। সবাই ভালো খেলছে। এটা দলের জন্য অনেক ইতিবাচক। এখন পিচে সেটার প্রতিফলন ঘটানো যায় কি না, দেখতে হবে। সবাই আত্মবিশ্বাসী, নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সবাই সচেতন, যে ভূমিকা সম্বন্ধে সবাইকে আগেই জানানো হয়েছে।

প্রশ্ন: সবাইকে চমকে দিয়েছেন বিশ্বকাপের পর অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ কী?

কোহলি: আগেই অনেক ব্যাখ্যা করেছি, মনে হয় না আর বেশি ব্যাখ্যা করার দরকার আছে। আমাদের মনোযোগ এই বিশ্বকাপে ভালো খেলা, দল হিসেবে ভালো করা। মানুষ অনেক কিছুই বলছে, যা সত্যি নয়। আমি এর আগে অনেক স্পষ্টভাবে সবকিছু বলেছি। কিন্তু অনেকে মনে করেন অনেক কিছুই বলা হয়নি। আমার তাঁদের জন্য কষ্টই লাগে।

প্রশ্ন: আপনি সব সময়েই বলেছেন, ভারতের কাছে এটা শুধুই একটা ম্যাচ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু এই ম্যাচ নিয়ে বাইরে যে উত্তেজনা, এই উত্তেজনা থেকে দূরে থাকা কি সব সময় সম্ভব হয়?

কোহলি: না, অবশ্যই সম্ভব হয় না। পরিস্থিতিটাই এমন। আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে আমরা কী করব না করব, তা সম্পূর্ণভাবে আমাদের কাজের ওপর নির্ভর করছে। সেটা হওয়ার জন্য আমাদের যে দল হিসেবে একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকতে হবে, সেটাও আমরা বুঝি। যেকোনো ম্যাচ খেলার আগেই আমরা চাপ অনুভব করি। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। এমন ম্যাচের আগে পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাইরে হয়ে থাকে। কিন্তু যতক্ষণ এটা আমাদের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের বাইরে হচ্ছে, কোনো সমস্যা নেই, এটাই স্বাভাবিক। স্টেডিয়ামের পরিবেশও ভিন্ন থাকে। কিন্তু তাই বলে আমাদের এই ম্যাচ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে না।

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলির ব্যাটে তাকিয়ে ভারত
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে রোহিত বলেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া কয়েকটা ওভার বল করার জন্য প্রস্তুত। হার্দিক এখন কি বল করার জন্য প্রস্তুত? তিনি যদি বল না করতে পারেন, তাহলে দল নির্বাচনে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে? এই ম্যাচে টস কেমন ভূমিকা রাখতে পারে? বিশেষ করে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে যেখানে শিশির একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে?

কোহলি: আমার মনে হয়, হার্দিকের শারীরিক অবস্থা এখন ভালোর দিকে। টুর্নামেন্টের কোনো একটা পর্যায়ে ও দুই ওভার বল করতে পারবে বলে আশা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি, ও বল শুরু করার আগে আমরা আমাদের সুবিধাগুলোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে পারব। আমরা আরও দুজনকে চিন্তায় রেখেছি। আমরা ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করছি না। হার্দিক ছয় নম্বর পজিশনে যেভাবে ব্যাট করে, সেটা আপনি হুট করে অন্যকে দিয়ে করাতে পারবেন না। আমি অস্ট্রেলিয়াতেও ওকে নিখাদ ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে ছিলাম। আমরা দেখেছি ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওই ভূমিকায় কেমন করেছে, ও কীভাবে প্রতিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ বের করে আনতে পেরেছে। আমরা জানি, ও বল না করলে ব্যাপারটা অনেক আলোচনার জন্ম দেয়, তবে ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ও দলে কি সুবিধা দেয়, সেটা আমরা বেশ ভালো বুঝি। বিশ্ব ক্রিকেটে আপনি যদি আশপাশে তাকান, আপনি দেখবেন ওর ভূমিকায় অনেকে বিশেষজ্ঞ খেলায়, যে কি না ওই জায়গায় ব্যাট করতে নেমে অনেক অবদান রাখতে পারে। হার্দিক অনেক উদ্বুদ্ধ, ও ম্যাচ খেলতে চায়, অন্তত দুই ওভার বল করতে চায়। সেটা যদি হয়, আমাদের দলের রসায়ন আরও ভালো হবে।

প্রশ্ন: পাকিস্তানের এই রেকর্ড নিয়ে অনেক কথা হয় যে বিশ্বকাপে ভারতকে কখনো হারাতে পারে না। ম্যাচের আগে এসব রেকর্ড নিয়ে কি আপনারা ভাবেন?

কোহলি: না, ম্যাচের আগে আমরা ওসব রেকর্ড নিয়ে ভাবি না। রেকর্ড নিয়ে আলোচনাও করি না। এসব কথাবার্তায় মনঃসংযোগে অনেক ব্যাঘাত ঘটে। আমরা ওসব ম্যাচে ভালো খেলেছি, তাই জিতেছি। শুধু রেকর্ডের কথা ভেবে খেলতে নামলে মনে হয় না আমরা জিততাম। এগুলো আরও উল্টো চাপ সৃষ্টি করে। পাকিস্তান সব সময়ই শক্তিশালী দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে হয়।

প্রশ্ন: সাধারণত দেখা যায়, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ভারতের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে পাকিস্তানের বোলারদের লড়াই হয়। কিন্তু এবার বলতে হয়, ভারতেরও দুর্দান্ত একটা বোলিং লাইনআপ আছে। অধিনায়ক হিসেবে আপনি আপনার বোলিং বিভাগ নিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী?

কোহলি: আমরা যেকোনো ম্যাচ খেলার আগেই পরিকল্পনা করে খেলতে নামি, প্রস্তুতি নিয়ে নামি। আমরা যতক্ষণ এভাবে খেলছি, বিশ্বের যেকোনো দলের বিপক্ষে যেকোনো পিচে আমরা আত্মবিশ্বাসী থাকব। আমরা ওদের বিপক্ষে সব সময় জিতেছি বিশ্বকাপে। এখন আমি যদি বলি আমাদের এখন বোলিং বিভাগ ভালো, আগে ভালো ছিল না, তাহলে আগে তারা অবশ্যই কিছু ম্যাচ জিতত। আমি ওভাবে চিন্তা করি না। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো খেলোয়াড়েরা নিজেদের ভূমিকা ভালোভাবে পালন করছে কি না।

প্রশ্ন: দুই ওভার এদিক-ওদিক হয়ে গেলে টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। এ অবস্থায় চিন্তায় পরিচ্ছন্নতা থাকাটা কতটা জরুরি?

কোহলি: আমার মনে হয় দুই-তিন ওভার নয়, তিন-চার বলেই টি-টোয়েন্টির ধারা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় একজন বোলার ওভারের শুরুতে একটা চার হজম করলে পরের কয়েক বলে সে ঠিকঠাক বল করতে পারে না। তখন সবার মনে হয় হয়তো ম্যাচের লাগাম হাতছাড়া হয়ে গেল। তাই আইপিএলের অভিজ্ঞতা অনেক কাজে লাগবে আমাদের। তাই স্পষ্ট চিন্তায় খেলা খুব জরুরি।

প্রশ্ন: আপনি তিরিশটার মতো ম্যাচ খেলেছেন এবারের আইপিএলে। এই তিন পিচেই খেলেছেন। আপনার কি মনে হয় আইপিএলের সঙ্গে বিশ্বকাপের পিচে কোনো পার্থক্য হবে?

কোহলি: অবশ্যই। আইপিএলের ফাইনাল দেখে মনে হয়েছে বিশ্বকাপের পিচ আইপিএলের চেয়ে অনেক ভালো হবে। আর এমনিতেও আইসিসির টুর্নামেন্টের পিচের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা নিশ্চিত করে প্রতিটা ভেন্যুর পিচই যেন মোটামুটি একই রকম থাকে। আইপিএল ফাইনালের পিচও বেশ ভালো ছিল। শিশিরের প্রভাবও দেখা যাচ্ছে, যা এ সময় দুবাইয়ে দেখা যায়। আমার মনে হয় আবুধাবি আর দুবাইয়ের পিচ সবচেয়ে ভালো হবে। আর শারজার পিচ যেমন, তেমনই থাকবে। শারজায় সে রকম হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে বলে মনে হয় না।