পাকিস্তান বোর্ডকে ব্ল্যাকমেল করছেন আমির?

পাকিস্তানের সাবেক পেসার মোহাম্মদ আমির।ফাইল ছবি: এএফপি

মোহাম্মদ আমিরের ক্যারিয়ারটা বেশ নাটকীয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটেছিল পাকিস্তানি এই পেসারের। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ধূমকেতুর মতোই প্রায় মিলিয়ে যাওয়ার পথে ছিলেন আমির।

সাজা খেটে আবারও ফিরেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। পাকিস্তান দলের মূল পেসার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আবার হুট করেই গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে অবসর নিয়ে আবারও চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। অবসরের পর থেকেই পিসিবির বিরুদ্ধে একের পর এক বোমা ফাটিয়ে যাচ্ছেন এই তারকা।

কিছুদিন আগেই যেমন জানিয়েছেন, বোর্ডের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকু না পাওয়ার কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এবার আরেক সাবেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া যা বললেন, তাতে আমিরের উক্তির যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। কানেরিয়া জানিয়েছেন, আবারও জাতীয় দলে ঢোকার জন্য এসব বলে বোর্ডকে ব্ল্যাকমেল করেছেন আমির।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই আমিরকে ধুয়েছেন কানেরিয়া। দলে আবারও ফিরে আসার জন্যই আমির একের পর এক কথা বলে বাজার গরম রাখছেন, ‘আমি আমিরের অবদান খাটো করে দেখছি না। সবার নিজস্ব মতামত থাকে। আমার মনে হয়, এসব বলছে যাতে সে আবারও দলে ঢুকতে পারে। ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করা নিয়ে, সেখানকার নাগরিকত্ব নেওয়া নিয়ে, আইপিএলে খেলতে চাওয়া নিয়ে ও যা যা বলছে, তা শুনে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন ওর মাথায় কী চলছে।’

কানেরিয়ার মতে, স্পট ফিক্সিং–কাণ্ডে নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও আমিরকে যেভাবে জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছে, তাতেই আমিরের প্রতি পিসিবির সমর্থনের বিষয়টা স্পষ্ট, ‘আমিরের বোঝা উচিত ওকে যখন ফিক্সিং–কাণ্ডের পরেও দলে ফেরানো হলো, ওর প্রতি পিসিবি বেশ ভালোই সদয় ছিল দেখেই সেটা হয়েছে। কিন্তু ও গত দেড় বছরে জঘন্য খেলেছে। মানলাম, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওর পারফরম্যান্স দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু তারপর থেকে ওর শুধু অবনতিই হয়েছে।’

এখন যাঁরা আমিরকে বাদ দিয়েছেন, তারাই এককালে এই পেসারকে দলে ফেরানোর জন্য সবকিছু করেছেন বলে জানিয়েছেন কানেরিয়া, ‘আপনি যখন খারাপ খেলার কারণে দল থেকে বাদ পড়লেন, তখনই আপনার মনে হলো এই ম্যানেজমেন্টের অধীনে খেলা উচিত না। কিন্তু যাঁরা ওকে বাদ দিয়েছেন, তাঁরাই এককালে ওকে দলে নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তখন ওকে একটা ধারাভাষ্যকারও সমর্থন দিত না। কিন্তু তাও ওর নামে তাঁদের ভালো ভালো কথা বলতে হতো কারণ ধারাভাষ্য দেওয়াটাই তাঁদের রুটিরুজি।’

কিছুদিন আগে পাকপ্যাশন ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির জানিয়েছিলেন বোর্ড থেকে সম্মান না পাওয়ার কথা, ‘আমার কাছে সম্মানটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মনে হচ্ছিল, প্রাপ্য সম্মানটা পাচ্ছি না, তাই অবসরের সিদ্ধান্ত নিই। পাকিস্তান ক্রিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের তো নিজেদের কাজটা করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে আর আমাকেও নিজের ক্যারিয়ার চালিয়ে নিতে হবে। তাই সেসব বিষয় নিয়ে আর কথা না বলাই ভালো। এ মুহূর্তে নিজের জীবন নিয়ে আমি ভালো আছি।’

অবসর নেওয়ার পর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলছেন আমির।
ছবি: টুইটার

গত ডিসেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে আমিরকে বলতে দেখা গেছে, ‘সত্যি বলছি, আমার মনে হয় না এই প্রশাসনের অধীনে আমি ক্রিকেট খেলতে পারব। আমি ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে, আমি আর নিতে পারছি না। ২০১০-১৫ সময়টায় আমি যথেষ্ট দেখেছি। বারবার বলা হয়েছে, বোর্ড আমার ওপর অনেক বিনিয়োগ করেছে। আমি শহীদ আফ্রিদির কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, নিষেধাজ্ঞার পর তিনিই আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন।’

আমিরের প্রতি কানেরিয়ার তোপ মূলত এসব কথাবার্তা ঘিরেই।