প্রীতির পাঞ্জাবকে নিয়েই ডুবলেন ধোনিরা
‘হাম তো ডুবে হ্যায় সানাম, তুমকো লে কার ডুবেঙ্গে’—গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কথাটা বলেছিলেন আফগানিস্তান অধিনায়ক গুলবদিন নাইব। বাংলায় যেটির অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমরা তো ডুবেছি, তোমাদেরও সঙ্গে নিয়েই ডুবব!’
আফগানিস্তানের তখন বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল গ্রুপ পর্বেই, বাংলাদেশকে হারিয়ে বাংলাদেশেরও গ্রুপ পর্বে বিদায় নিশ্চিত করবেন বোঝাতেই কথাটা বলেছিলেন গুলবদিন। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে আটকে গেলেও আফগানিস্তানের কাছে হারেনি।
আবুধাবিতে আজ কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচের আগে গুলবদিনের মতো এমন কিছু মহেন্দ্র সিং ধোনি বা চেন্নাই সুপার কিংসের কেউ বলেননি। তবে আগেই আইপিএলের গ্রুপ পর্বে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া চেন্নাই আজ প্রীতি জিনতার পাঞ্জাবকে নিয়েই ডুবেছে। ৯ উইকেটে হেসেখেলেই ম্যাচটা জিতেছে চেন্নাই। তাতে নিশ্চিত হয়ে গেছে, এবারও গ্রুপ পর্বে বাদ পড়ছে পাঞ্জাব।
দুই দলেরই শেষ ম্যাচ ছিল এটি। আগেই গ্রুপ পর্বে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া চেন্নাইয়ের এই ম্যাচ জেতায় পয়েন্ট হলো ১২, আর হেরে যাওয়ায় পাঞ্জাবেরও পয়েন্ট ১২। পাঞ্জাব এই মুহূর্তে আছে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে। পাঞ্জাবকে এই হারটা পোড়াবে নিশ্চিত। মাঝে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে প্লে-অফে ওঠার দৌড়ে ভালোভাবেই ছিল দলটা, কিন্তু আজকের ম্যাচ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে হেরে ম্লান বদনেই বিদায় নিল দলটা। প্রথম আইপিএল শিরোপার খোঁজ আরেকটি মৌসুম বাড়ল প্রীতির দলের।
আর চেন্নাই? তাদের বিদায় আগেই নিশ্চিত হলেও সর্বশেষ তিন ম্যাচেই জিতে টুর্নামেন্টের শেষটা অন্তত হাসিতে হয়েছে। তবে ধোনিদের এই হাসিতে একটা বিদায়ের সুরও থাকবে। এই মৌসুমে অন্তত এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে, দল হিসেবে চেন্নাইকে আর আগের মতো দেখা যাবে না। এত বছরে এত সাফল্যের পেছনে চেন্নাইয়ের প্রায় একই দল ধরে রাখার কৌশলটাও অনেক বড় প্রভাবক ছিল বলে মানেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু এবার সেই কৌশল কাজে আসেনি। ধোনি-ওয়াটসনদের বয়সও হয়েছে অনেক। বদলের ডাক শুনছে চেন্নাই।
আজকের ম্যাচটি অবশ্য বেশ দাপটে জিতেছে চেন্নাই, আর সে দাপটে ব্যাট হাতে সবচেয়ে বড় অবদান তরুণ রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের। পাঞ্জাবের দেওয়া লক্ষ্যটা একেবারে ছোট ছিল না। কিন্তু ১৫৪ রানের সেই লক্ষ্য চেন্নাই ৯ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে পেরিয়ে গেছে রুতুরাজের ৪৯ বলে অপরাজিত ৬২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো ২৩ বছর বয়সী ভারতীয় ব্যাটসম্যানের ইনিংস।
এই রুতুরাজও হয়তো চেন্নাইয়ের এবারের মৌসুমের একটা বড় আক্ষেপের নাম। মৌসুমের প্রথম দিকে দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আলো ছড়াতে পারেননি। এরপর সুযোগ পেলেন সর্বশেষ চার ম্যাচে। এর মধ্যে আজকের ম্যাচ নিয়ে সর্বশেষ তিন ম্যাচেই ফিফটি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে করেছিলেন অপরাজিত ৬৫, তারপর কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে করেন ৭২। বড় অসময়েই জ্বললেন রুতুরাজ!
ওপেনিং জুটিতে আজ অবশ্য তাঁর চেয়েও ভয়ংকর ছিলেন ফাফ ডু প্লেসি। এবারের আইপিএলে চেন্নাইয়ের হয়ে সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটিং করা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান যখন আউট হচ্ছেন, দলের রান তখন ৯.৫ ওভারে ৮২। এর মধ্যে ডু প্লেসির রান ৪৮, সেটি করেছেন তিনি ৩৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায়। ডু প্লেসি ফেরার পর অম্বাতি রাইডু এসে ৩০ বলে করেন ৩০ রান। অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানের জুটিতে চেন্নাইয়ের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন রাইডু-রুতুরাজ।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাঞ্জাবের শুরুটা খারাপ হয়নি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার, অর্থাৎ ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ফিরলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। দলের রান ততক্ষণেই ৪৮, আগারওয়াল ১৫ বলে করেন ২৬। তাঁর ওপেনিং সঙ্গী লোকেশ রাহুল ২৯ রান করেন ২৭ বলে। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে ক্রিস গেইল-নিকোলাস পুরানরা হাল ধরতে পারেননি। ছয়ে নামা দীপক হুদা এসে পরে ঝড় তোলেন। ৬২ রানে অপরাজিত ছিলেন, সেটিও মাত্র ৩০ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায়।
সেই ঝড়ও পাঞ্জাবের বিদায় ঠেকাতে পারল না!