ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল জুপিটারকে!

জুপিটার ঘোষ
জুপিটার ঘোষ

ক্রিকেটার জুপিটার ঘোষের একটি অভিযোগ নিয়ে কদিন ধরেই ক্রিকেটাঙ্গনে আলোচনা। রংপুর রাইডার্সের এই ক্রিকেটারকে নাকি টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের আগেই ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য। সে প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তাঁকে ৫ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জুপিটারের অভিযোগের জবাবে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে কাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রংপুর। সেটার জবাবে জুপিটারও এনেছেন নতুন কিছু অভিযোগ।
রংপুরের অভিযোগের সারমর্ম, জুপিটারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই। আর সে জন্যই তিনি রংপুরকে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ব্যাপারটি অনেক আগেই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে রংপুর ফ্র্যাঞ্চাইজি। জুপিটারও বিসিবির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তাঁকে ২৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার পর আর টাকা দিচ্ছে না ফ্র্যাঞ্চাইজি। গভর্নিং কাউন্সিল এর ব্যাখ্যা চাইলে দু-তিন দিন আগে রংপুর রাইডার্স জুপিটারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে সেটার জবাব দেয়।
বিপিএলে এসব ঘটনার শেষ দৃশ্যটা অনেক পরেই সামনে আসে। তবে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ যেহেতু আছে ঘটনার তদন্ত করে দেখবে গভর্নিং কাউন্সিল। তার আগ পর্যন্ত জুপিটার এবং রংপুরের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেনের মাঠে আসায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। সাবেক ক্রিকেটার সানোয়ার দ্বিতীয় বিপিএলে ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়ানো ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ম্যানেজার ছিলেন।
মুঠোফোনে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাল জুপিটার বিস্তারিত বলতে রাজি হননি, ‘আমাকে দলের একজন অনৈতিক কিছু করার একটা প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি কাল (আজ) বিষয়টা বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগকে (আকসু) জানাব। তাদের সঙ্গে কথা না বলে এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’
তবে জুপিটারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ম্যাচের আগে রংপুরের এক কর্মকর্তা নাকি জুপিটারকে বলেছিলেন, ম্যানেজারের কথা অনুযায়ী ফিক্সিংয়ে সাহায্য করলেই শুধু তাঁকে একাদশে রাখা হবে। সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ৫ নভেম্বর সকালে নাশতার সময় তাঁকে বহিষ্কারাদেশের চিঠি দেওয়া হয়।

কিন্তু এত দিন পর কেন আকসুর কাছে যাচ্ছেন জুপিটার? কেন আরও আগেই গেলেন না বা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদেরও কেন জানাননি ‘অনৈতিক’ প্রস্তাবের কথা? এসবের ব্যাখ্যায় তিনি জানালেন, ‘আমার কাছে তখন কোনো তথ্যপ্রমাণ ছিল না। সেগুলোর জন্য অপেক্ষা করেছি। এখন তথ্যপ্রমাণ নিয়ে আকসুর সঙ্গে কথা বলব।’ ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়টি না জানানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাকে যিনি প্রস্তাবটা দিয়েছেন, তিনিও তো ফ্র্যাঞ্চাইজিরই কর্মকর্তা! আমি কীভাবে নিশ্চিত হব অন্যরাও তাঁর সঙ্গে জড়িত নন?’

রংপুর রাইডার্সের আনা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জুপিটার। একদিন রাতে দেরি করে রুমে ফেরা ও রুমে অতিথি আনার কথা স্বীকার করলেও সেসবকে শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে মানতে রাজি নন খুলনার হয়ে সাতটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার। জুপিটারের দাবি, তাঁর রুমে অতিথি গেলেও সেটা ৫-১০ মিনিটের জন্য এবং ওই সময় আরও একজন ক্রিকেটারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি, ‘বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের আগের ফুটেজগুলো দেখলেই সবাই পরিষ্কার হয়ে যাবেন, দলের কোন কোন খেলোয়াড়-কর্মকর্তার রুমে অতিথি গেছে। এ রকম অতিথি অনেকের রুমেই যায়।’ এ ছাড়া রংপুর রাইডার্স খেলোয়াড়দের রুমে বাইরের লোক রাখা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন এই ক্রিকেটার। ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান অবশ্য জুপিটারের সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।