বাংলাদেশের দারুণ ফেরার পরও স্বাগতিকেরাই হয়তো একটু এগিয়ে

শেষ সেশনের শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছিলেন ইবাদতছবি: এএফপি

একদম নিখুঁত হতে গেলে এক সেশন বলার উপায় নেই। তবে রায়ান রিকেলটনের উইকেট চা-বিরতির পর খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়েছে বাংলাদেশ। সে হিসেবে ২৪ ওভারের ওই সময়কে এক সেশন বলে ধরে নিলে আপত্তির কিছু নেই। ডারবান টেস্টে প্রথম দিনে সেশনভিত্তিক জয়ী খুঁজলে বাংলাদেশ মাঝের সেশনে জয়ী। কিন্তু দিনের প্রথম সেশনটার মতো শেষটাও দক্ষিণ আফ্রিকার। অধিনায়ক ডিন এলগার দাপুটে শুরু এনে দিয়েছেন আর ওয়ানডে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা বিকেলের সেশনে দিনটা যে স্বাগতিকদের—নিশ্চিত করেছেন তা।

সাইটস্ক্রিন–বিভ্রাট দিনের প্রথম ৩৫ মিনিট কেড়ে নিয়েছে, আজ তাই ৯০ ওভার হওয়ার সম্ভাবনা এমনিতেই ছিল না। প্রথম দুই সেশনের ৭ ওভারের ঘাটতি সেটা আরও নিশ্চিত করে দিয়েছে। দিনের খেলার ২০ ওভার বাকি থাকতেই মাঠে দীর্ঘ ছায়া দেখা গেছে। ফ্লাডলাইটের আলো প্রাকৃতিক আলোর অভাব দূর করতে পারছিল না, অন্তত আম্পায়ারদের সেটাই মনে হচ্ছিল। আকাশে সূর্য তখনো পুরোপুরি হেলে পড়েনি, দিনের তখনো ১৩.১ ওভার বাকি। ৭৬.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩৩ রানে দিন শেষ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিন শেষে তাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সুযোগ স্বাগতিক দলই পাচ্ছে।

অর্ধশতক পেয়েছেন বাভুমা
ছবি: এএফপি

সঙ্গে একটু স্বস্তিও। ১৮০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর পঞ্চম উইকেট জুটির প্রায় ২০ ওভার কাটিয়ে দেওয়ার স্বস্তি। চা-বিরতি থেকে ফেরার পরই ধাক্কা খেয়েছিল স্বাগতিক দল। অফ স্টাম্পের বাইরে ইবাদত হোসেনের বলটি এমন বিশেষ কিছু ছিল না। একটু হয়তো বাড়তি বাউন্স, এই যা! সেই বল পুল করতে চেয়েছিলেন রিকেলটন। ওই লাইনের বলে যে শট খেলাটাই একটু দুঃসাহসী হয়ে যায়, সঙ্গে বাড়তি বাউন্স মিলে বল উঠে গেল মিড উইকেটে। দুই ধাপ পিছিয়ে অধিনায়ক মুমিনুল সেটা ধরে নিলেন। অভিষেকে মাত্র ২১ রান করে ফিরে গেলেন রিকেলটন।

ওয়ানডে সিরিজ হেরে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় অস্বস্তির সময় ওটা। গত ২৩ মার্চ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টপাটপ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকার দেখা যে চা-বিরতির আগে পরে ডারবান টেস্টেও দেখা দিয়েছিল। ডিন এলগার ও সারেল এরউয়ির উদ্বোধনী জুটি মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ৯৫ রান এনে দিয়েছিল। যদিও বিরতির আগে শেষ ওভারেই সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু লিটন দাসের গ্লাভস এরউয়ির ব্যাটের স্পর্শ পাওয়া বলটি ধরে রাখতে পারেনি।

অপরাজিত পঞ্চম উইকেট জুটি ৫৩ রান এনে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে
ছবি: এএফপি

এ নিয়ে অবশ্য খুব বেশি আক্ষেপ করতে হয়নি। বিরতি থেকে ফেরা এলগার ৬৭ রান তুলে ফিরে গেছেন খালেদ আহমেদের বাড়তি বাউন্সে। ৬ বলের মধ্যে এরউয়িও মিরাজের দুঃখ ঘোচালেন। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে স্টাম্পে টেনে এনে। ৩২ রানে জীবন পাওয়া এই ওপেনার আর মাত্র ৯ রানই যোগ করতে পেরেছেন। পয়েন্ট থেকে মিরাজের দুর্দান্ত এক থ্রো কিগান পিটারসেনের ইনিংস ১৯ রানে থামিয়ে দিয়েছে। সে ইনিংসটাও থামতে পারত ১৮ রানে। বাংলাদেশ রিভিউ নিলেই তাসকিনের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরতে হতো পিটারসেনকে।

এ নিয়ে আফসোসের বদলে ৩৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে বাংলাদেশ তখন বিপুল বিক্রমে ম্যাচে ফিরে আসার আনন্দে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মেরামতের কাজটা পড়ে বাভুমা ও রিকেলটনের ওপর।

খালেদের এই আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার
ছবি: এএফপি

চায়ের স্বাদ মুখে তাজা থাকতে থাকতে রিকেলটন ড্রেসিংরুমে ফেরায় বাংলাদেশ স্বাগতিক দলকে আরও চাপে ফেলার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বাভুমা ও কাইল ভেরেইনা দাঁড়িয়ে গেলেন। পড়ে আসা আলোয় দুজনই টিকে থাকার দিকে মন দিয়েছেন। এত সাবধানী ব্যাটিংয়েও ভুল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বাভুমা ও ভেরেইনার ব্যাট থেকে ওঠা ক্যাচগুলো বারবার ফিল্ডারদের নাগালের বাইরে পরে হতাশা জাগিয়েছে। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিও যে বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে, সেটা টের পাওয়া গেছে মুমিনুল হকের তিন ওভারের স্পেলে। কিন্তু তাঁর বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ চাপ মুক্তির সুযোগ পাচ্ছে দেখে অধিনায়ক সরে এসেছেন দ্রুত।

বাংলাদেশকে হতাশ করে এগিয়েছেন বাভুমা। ৭ ইনিংস পর টেস্টে অর্ধশতক পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে অধিনায়ক। দিনের শেষ সেশনটা বাংলাদেশের করে নেওয়ার সম্ভাবনা জাগাচ্ছিলেন তাসকিন–খালেদরা। শেষ বিকেলে ভালো বোলিং করছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। কিন্তু দেরিতে শুরু হওয়া দিন আগেভাগেই শেষ করে দিলেন আম্পায়াররা। ৫৩ রানের অপরাজিত পঞ্চম উইকেট জুটি প্রথম দিন শেষে একটু হলেও এগিয়ে রাখল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আর দুটি উইকেট তুলে নিতে পারলেই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের লেজের দেখা মিলবে। দ্বিতীয় দিন বোলিং শুরু করার সময় এটাই হয়তো উজ্জীবিত রাখবে বাংলাদেশকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৭৬.৫ ওভারে ২৩৩/৪ (এলগার ৬৭, এরউয়ি ৪১, পিটারসেন ১৯, বাভুমা ৫৩*, রিকেলটন ২১, ভেরেইনা ২৭*; তাসকিন ০/৫৮, ইবাদত ১/ ৫৮, খালেদ ১/৪৯, মিরাজ ১/৫৭, মুমিনুল ০/৮)।