প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে আজ শারমিন আক্তারের সুযোগই মেলেনি। সালমা খাতুন সুযোগ পেলেও সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। তাঁদের দলের জন্যও রাতটা কেটেছে আনন্দ-হতাশায়।
ভারতের উইমেনস টি-টোয়েন্টিতে শারমিন-সালমার দল ট্রেইলব্লেজার্স নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে। পুনেতে আজ আগে ব্যাট করে ট্রেইলব্লেজার্সের ১৯০ রানের জবাবে ভেলোসিটি থেমেছে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৪ রান করে। তবে জিতেও টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছে ট্রেইলব্লেজার্স।
তিন দলের টুর্নামেন্টে প্রত্যেক দল গ্রুপ পর্বে দুটি করে ম্যাচ খেলেছে। তিন দলেরই এক জয়ের বিপরীতে এক হার। তবে ট্রেইলব্লেজার্সকে প্রথম ম্যাচে ৪৯ রানে হারানো সুপারনোভা রানরেটে এগিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আছে, ট্রেইলব্লেজার্স আজ জিতেও আছে পয়েন্ট তালিকার ৩ নম্বরে। তাতে নিশ্চিত হলো, আগামী রোববার ফাইনালে সুপারনোভা আর ভেলোসিটিই খেলছে।
বাংলাদেশের দুই মেয়ে শারমিন আর সালমার জন্য টুর্নামেন্টটা তেমন দারুণ কিছু নিয়ে আসেনি। সালমা তবু দুই ম্যাচেই উইকেট পেয়েছেন। প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ৩০ রানে ২ উইকেট পেয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সী অফস্পিনার, সে তুলনায় আজ বোলিংটা ভালো হয়নি। ২ ওভার করার সুযোগ পেয়েছেন, তাতে উইকেট পেয়েছেন ১টি, রান দিয়েছেন ২২!
অন্যদিকে শারমিনের জন্য তো টুর্নামেন্টটা হতাশারই হয়ে থাকছে। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪ বলে ০ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য উদ্বোধনী ব্যাটার হলেও তাঁকে সেদিন নামানো হয়েছে মিডল অর্ডারে। সেদিন শুধু ফিল্ডিংয়ে একটা রানআউট ছাড়া আর তেমন অবদান ছিল না তাঁর, সেটির জেরেই কি না আজ আর দলেই রাখা হয়নি ২৬ বছর বয়সী ব্যাটারকে।
শারমিনের বদলে যিনি ট্রেইলব্লেজার্সের একাদশে আজ সুযোগ পেয়েছেন, সেই সাভিনেনি মেঘানার পারফরম্যান্সই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে দলের।
উদ্বোধনে নেমে ৪৭ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় মেঘানার ৭৩ রানই ট্রেইলব্লেজার্সকে বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ তাল মিলিয়ে ব্যাট করেছেন জেমাইমা রদ্রিগেজও। ৪৪ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে জেমাইমা চার মেরেছেন ৭টি, ছক্কা ১টি।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার ও অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানার (৫ বলে ১ রান) উইকেট হারায় ট্রেইলব্লেজার্স। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে মেঘানা-জেমাইমার ৭২ বলে ১১৩ রানের জুটিতে ট্রেইলব্লেজার্সকে আর কিছু ভাবতে হয়নি। দুজন একই সঙ্গে ভিত গড়ে দিয়েছেন ইনিংসের, অন্যদিকে রানের গতিও ঠিক রেখেছেন।
তাঁদের এমন ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই চারে নামা হেইলি ম্যাথিউসের ১৬ বলে ২৭ আর পাঁচে নামা সোফিয়া ডাঙ্কলির ৮ বলে ১৯ রানে দুই শ ছুঁই ছুঁই স্কোর গড়ে ট্রেইলব্লেজার্স।
জবাবে ভেলোসিটির শুরুটা হয়েছিল তাদের দলের নামের সঙ্গে মিল রেখেই—দারুণ গতিতে। প্রথম ৫ ওভারেই ৫০ রান তুলে ফেলে তারা। কিন্তু সে পথে তাদের প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছেন বাংলাদেশের সালমাই।
তিন ওভারেই ভেলোসিটির দুই উদ্বোধনী ব্যাটার শেফালি ভার্মা ও যস্তিকা ভাটিয়া ৩২ রান তুলে ফেলার পর পাওয়ার প্লের চতুর্থ ওভারে সালমাকে বোলিংয়ে আনেন ট্রেইলব্লেজার্স অধিনায়ক। কিন্তু পাওয়ার প্লের ওই সময়েই দারুণ অফ স্পিনে চতুর্থ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়েছেন সালমা, পাশাপাশি ওভারের শেষ বলে বোল্ড করে দেন ভাটিয়াকে।
কিন্তু সালমার এমন দারুণ শুরুর আনন্দই নিজের পরের ওভারে মাটি! পঞ্চম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে শেফালি ভার্মা ঝড় তুলেছিলেন, রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ের সেই ওভারের প্রথম ৫ বলেই ৩ চারে নিয়েছিলেন ১৪ রান। শেফালি আউট হওয়ার সময়ও অন্য প্রান্তে কোনো বল না খেলে ০ রানে অপরাজিত কিরন প্রভু নাভগিরে পরের ওভারে যেন ‘শেফালি’ হয়ে উঠলেন! পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সালমার প্রথম ও শেষ বলে দুই ছক্কা মেরেছেন, পঞ্চম বলে চার! ওভারে আসে ১৮ রান।
ওই ওভারের পর আর বোলিং পাননি সালমা। পেলে কে জানে, নাভগিরের আগ্রাসনের সামনেই হয়তো পড়তে হতো তাঁকে! তিনে নামা নাভগিরে যে নাভিশ্বাস তুলেছিলেন ট্রেইলব্লেজার্স বোলারদের।
৩৪ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় করেছেন ৬৯ রান। অর্ধশতক করেছেন ২৫ বলে, যা মেয়েদের এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দ্রুততম। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে কাউকে পাশে পাননি নাভগিরে।
তাঁর পর আর কোনো ব্যাটারই ২০-এর ঘরে যেতে পারেননি। ১৭তম ওভারে দলকে ১৫৩ রানে রেখে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে নাভগিরে ফেরার পরই হয়তো ট্রেইলব্লেজার্সের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।