বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১০০ মিরাজের
সেঞ্চুরি ছুঁতে একটা উইকেট দরকার ছিল। শেন মোজলির ব্যাট ছুঁয়ে বলটা দ্বিতীয় স্লিপে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে জমা পড়তেই সেঞ্চুরি হয়ে গেল মেহেদি হাসান মিরাজের। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে ১০০তম উইকেট পেয়ে গেলেন ২৩ বছর বয়সী অফ স্পিনার।
বাংলাদেশের হয়ে এত দ্রুত টেস্টে ১০০ উইকেট আর কেউ পাননি। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই টেস্টটি মিরাজের ক্যারিয়ারের ২৪তম টেস্ট। মিরাজ পেছনে ফেললেন তাইজুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ রফিককে।
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ১০০ উইকেট পেয়েছেনই এখন পর্যন্ত এই ৪ জন বোলার। এর মধ্যে মাইলফলকটাতে পৌঁছাতে তাইজুলের লেগেছে ২৫ টেস্ট, সাকিবের ২৮ ও রফিকের ৩৩ টেস্ট। বলা বাহুল্য, চার স্পিনারের মধ্যে শুধু মিরাজই ডানহাতি।
মিরাজের কীর্তি গড়ার সৌজন্যে বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হলো। প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে ৩ উইকেট হারিয়ে করেছে ৩৯ রান।
বাংলাদেশের ইনিংসের সময়ে ক্যারিবীয় স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের সাফল্যই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, এই পিচ আস্তে আস্তে স্পিনারদের দিকে হাত বাড়াবে। যদিও কর্নওয়ালের পাঁচ উইকেট পাওয়ার পেছনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও দায় ছিল। উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই!
তা যা-ই হোক, কর্নওয়ালের সাফল্য তো আছেই, পাশাপাশি বাংলাদেশের তিন স্পিনার ও দুই মিডিয়াম পেসার নিয়ে নামার কৌশল আগেই বুঝিয়ে দিয়েছে, এই টেস্টে স্পিনই বাংলাদেশের ভরসা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই স্পিন আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
সাফল্য পেতে অবশ্য সময় লাগেনি। মিরাজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই ধাক্কা দিয়েছেন নাঈম। উইকেট পাওয়ায় অবশ্য উইকেটকিপার লিটন দাসের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতারও অবদান আছে।
চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে নাঈমের করা লেগ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলটাকে থার্ডম্যান অঞ্চলে সীমানার বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন উইন্ডিজ ওপেনার ক্রেইগ ব্রাথওয়েইট। কিন্তু বলের লাইনে যেতে পারেননি। বল চলে যায় পেছনে লিটনের হাতে।
বাংলাদেশ ক্যাচের আবেদন করলেও আম্পায়ার নাকচ করে দেন, কিন্তু লিটন সেকেন্ডও কালক্ষেপণ না করে অধিনায়ক মুমিনুলকে জানিয়ে দেন রিভিউ নিতে। রিভিউতে পরে দেখা যায়, বল যাওয়ার পথে ব্রাথওয়েইটের গ্লাভস আলতোভাবে ছুঁয়ে গেছে।
১১ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ঠিক পাঁচ ওভার পর ধাক্কা দিলেন মিরাজ। ২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জন ক্যাম্পবেল ও বোনার কিছুটা থিতু হয়েছিলেন উইকেটে। কিন্তু তাইজুল দ্বিতীয় স্পেলে এসে সে জুটি ভেঙে দেন।
প্রথম স্পেলে দারুণ লাইন-লেংথ রেখে ৪ ওভারে ১০ রান দিলেও উইকেট পাননি তাইজুল। দ্বিতীয় স্পেলে এসে প্রথম ওভারেই তুলে নিলেন ক্যাম্পবেলকে। কিন্তু উইকেটটা অদ্ভুতূড়েই। তাইজুলের বলে ডিফেন্সিভ শট খেলেছিলেন ক্যাম্পবেল। কিন্তু বল তাঁর ব্যাটে লাগার পর পিচে একবার বাউন্স করে চলে গেল পেছনে। ক্যাম্পবেল তখন শটের স্টান্স ধরে দাঁড়িয়ে, আর বল তাঁর পেছনে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়ল স্টাম্পে। বেল পড়ে গেল! বাংলাদেশ তখন উচ্ছ্বসিত, আর ক্যাম্পবেল তখনো কীভাবে কী হলো সে হিসেব মেলাতে ব্যস্ত।