বিনা খরচে সবার স্টাম্প ভেঙেছিলেন তিনি

হডেন অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট লিগে দেখা গিয়েছিল এ ঘটনা। ছবি: টুইটার
হডেন অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট লিগে দেখা গিয়েছিল এ ঘটনা। ছবি: টুইটার

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা মনে আছে? ডারবানে সেদিন স্কোর টাই হওয়ার পর বোল আউট নিয়মে জিতেছিল ভারত। অধুনা বিলুপ্ত সেই নিয়মে ব্যাটসম্যানবিহীন স্টাম্প তাক করে বল করেও উইকেট ভাঙতে পারেননি পাকিস্তানের ইয়াসির আরাফাত, উমর গুল ও শহীদ আফ্রিদির বিশেষজ্ঞ বোলাররা। সেদিন একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। ফাঁকা স্টাম্প ভাঙা এত সহজ না!

সত্যিই কঠিন। দেখে মনে হতে পারে ব্যাটসম্যানবিহীন উইকেটে বল করে স্টাম্প ভাঙা আর এমন কি! কাজটি যে সহজ না তা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন আফ্রিদি-গুলরা। তাহলে ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করা কতটা কঠিন? প্রশ্নটির জবাব ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই জানেন।

তাহলে কোনো দলের সব ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করা কতটা কঠিন হতে পারে? মানে সব উইকেট নিতে হবে বোল্ড আউট করে। আর তা করতে হবে শুধু একজন বোলারকে কোনো রান না দিয়ে। হয়তো ভাবছেন, মামা বাড়ির আবদার! আজগুবি শর্ত দিলেই তা পূরণ করা সম্ভব নাকি। সম্ভব-অসম্ভব বলে তো একটা কথা আছে, এ তো স্রেফ অসম্ভব!

পরিসংখ্যান বলছে, আন্তর্জাতিক থেকে ছোট পরিসর মানে মাইনর ক্রিকেট লিগ মিলিয়ে এক ইনিংসে কোনো বোলারের রান না দিয়ে ১০ উইকেট নেওয়ার ঘটনাই রয়েছে খুব সামান্য। মাত্র ২৫বার এমন নজির দেখা গেছে। এর সর্বশেষ নজির দেখা গেছে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে।

ব্রিসবেনে বেসাইড মাডিজ-রানাতুঙ্গাজ ম্যাচে কোনো রান না দিয়ে একাই ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ডেভিড মরটন। সে যাই হোক, ইনিংসে কোনো বোলারের ১০ উইকটে নেওয়াই যেখানে প্রায় অসম্ভব সেখানে কোনো রান না দিয়ে সবাইকে বোল্ড আউট করা তো নিশ্চিতভাবেই কল্পনার খোরাক!

ভুল। গৌরবময় অনিশ্চয়তার এ খেলা যে মাঝে-মধ্যে কল্পনাকেও হার মানায়। তবে জেনিংস টিউনের নামটা অজানা থাকার কথা। তিনি কোন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ছিলেন না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের তো নয়ই। ক্রিকইনফো কিংবা অন্য কোনো ক্রিকেট ওয়েবসাইটে তাঁর কোনো প্রোফাইল নেই। এমনকি ছবি পর্যন্ত নেই!

হারিয়ে যাওয়া এ ক্রিকেটার আছেন ‍শুধু পরিসংখ্যানের একটি জায়গায়। যেখানে আর কেউ কখনো পা রাখতে পারবে কি না সন্দেহ। ঠিকই ধরেছেন। এই জেনিংস টিউনই একমাত্র বোলার যিনি এক ইনিংসে সব ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেছিলেন কোনো রান না দিয়ে!

১৯২২ সালে ইয়র্কশায়ারে হডেন অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট লিগে ক্লিফের হয়ে ম্যাচে অনন্য এ নজির গড়েছিলেন জেনিংস টিউন। মাত্র ৫ ওভারের এক স্পেলে এস্টরিংটনের সব উইকেট একাই ‍তুলে নিয়েছিলেন এ পেসার। সবগুলো আউটই ছিল বোল্ড, ০ রানের বিনিময়ে!

টিউন এ কীর্তি গড়ার আগে মোট ৯জন বোলার কোনো রান না দিয়ে ইনিংসে ১০ উইকট নিয়েছিলেন। ১৮৬৭ সালে ব্রড গ্রিনের হয়ে প্রথম এ নজির গড়েছিলেন ডার্টনেল। টিউন যে বছর ১০ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করেন, সে বছর ইএ বার্কারও ওয়াটফোর্ডের হয়ে স্টোনফোর্ডের ইনিংসে একাই ১০ উইকেট নেন।

জেনিংস টিউন যা করেছিলেন সেটি এক অর্থে স্কুলপড়ুয়া সব খুদে ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন। নিজের গড়া এ কীর্তির জন্য একটি সম্মাননাও পেয়েছিলেন টিউন। আর তা করে দিয়ে গিয়েছিলেন ইয়র্কশায়ারের হয়ে ৩০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা স্যান্ডি জ্যাকস। প্রথম শ্রেনির ক্যারিয়ারে কখনো হারের মুখ না দেখা জ্যাক টিউনের নামটা তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন গিনেজ বইয়ে।

আজ এতদিন পর সেই টিউনকে খুঁড়ে বের করার নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে। কোনো রান না দিয়ে ১০ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করার সেই কীর্তি তিনি গড়েছিলেন আজ এই দিনে।