বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে চাই

বিশ্বকাপে বিশেষ কিছুই করতে চান মাহমুদউল্লাহছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্য নাম যেন হতাশা! এ পর্যন্ত ৬টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২৫টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৫টিতে। এর মধ্যে বড় দলের বিপক্ষে জয় বলতে শুধু ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হতাশার ছবিটা এবার পাল্টে ফেলতে চান মাহমুদউল্লাহ। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বলেছেন সেই স্বপ্নের কথাই—

প্রশ্ন :

পর পর তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলেন। অধিনায়ক হিসেবে নিশ্চয়ই খুব খুশি…

মাহমুদউল্লাহ: তা তো অবশ্যই। বিশ্বকাপের আগে এই ধারাবাহিকতার দরকার ছিল। তিনটি সিরিজেই ভালো দল হিসেবে খুব ভালো ক্রিকেট খেলে আমরা জিতেছি। বিশ্বকাপে এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে।

প্রশ্ন :

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে ধরনের উইকেটে খেলেছেন, সে রকম উইকেট বিশ্বকাপে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতিতে কি একটু ঘাটতি থেকে গেল, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের?

মাহমুদউল্লাহ: এসব আলোচনা নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই। আপনি কতটা ভালো ক্রিকেট খেললেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং সে জন্য খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। জিম্বাবুয়েতে তো ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই ছিল। সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করেছে। শেষ টি-টোয়েন্টিতে আমরা ১৯৩ রান তাড়া করে জিতেছি। হ্যাঁ, মিরপুরের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন ছিল এবং সেটা দুই দলের ব্যাটসম্যানদের জন্যই। তার মধ্যেও আমরা ম্যাচগুলো জিতেছি। শুধু সমালোচনা না করে মানুষ ওই ভাবে কেন চিন্তা করে না!

সাকিবের কাছে সেরাটাই চান মাহমুদউল্লাহ
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রশ্নটা হলো বিশ্বকাপে তো এ রকম উইকেট থাকবে না। এ রকম উইকেটে খেলে গিয়ে সেখানে ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হবে না?

মাহমুদউল্লাহ: সে জন্যই আমরা একটু আগে গিয়ে ওমানে প্রস্তুতি ক্যাম্প করব। উইকেট হয়তো ওখানে ভালো হবে। জয়ের সংখ্যাটা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই একটা প্রতীক হিসেবে কাজ করে। আপনি খুব ভালো খেলে ম্যাচ হেরে গেলেন, ওটাতে কিন্তু আত্মবিশ্বাসের চেয়ে হতাশাই আসবে বেশি। আমরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি; জিম্বাবুয়েকে তাদের কন্ডিশনে হারিয়েছি। মানুষ যে এত সমালোচনা করছে, তাতে দলের কৃতিত্বটাকে ছোট করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। বিশ্ব ক্রিকেটে এখন সব দলই কমবেশি ঘরের মাঠের সুবিধা নেয়। তাদের নিয়ে কেন এ রকম আলোচনা হয় না, যেটা আমাদের নিয়ে হচ্ছে? আমরা ভালো খেলেছি, সিরিজ জিতেছি বলেই হয়তো সমালোচনা বেশি হচ্ছে। গত ১৩টি টি-টোয়েন্টির মধ্যে আমরা ৯টিতে জিতেছি। সেটার কৃতিত্ব বাংলাদেশ দলের পাওয়া উচিত।

তামিমের অনুপস্থিতি দলের ওপর প্রভাব রাখবে কিনা, সেটি সময়ের হাতেই ছেড়ে দিতে চানর মাহমুদউল্লাহ
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এই ম্যাচগুলোর মধ্যে কঠিন পরিস্থিতে পড়েও অনেক সময় বাংলাদেশ দল ম্যাচে ফিরেছে, যেটা টি-টোয়েন্টিতে আগে আপনাদের জন্য কঠিন হতো। আপনার কি মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের সমীকরণটাও এখন ধরতে পারছে বাংলাদেশ দল?

মাহমুদউল্লাহ: আমার তা-ই মনে হয়। আগেও বলেছি, টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যতটুকু সম্ভাবনা আছে, আমরা হয়তোবা সে অনুযায়ী খেলতে পারছিলাম না। তবে বিশ্বাস ছিল, ম্যাচ জেতা শুরু করলে আমাদের মধ্যে এটা চলে আসবে। যেকোনো কন্ডিশনে, যে কোনো দলের বিপক্ষে ১৯০ রানের ওপরে তাড়া করে জেতাটা কিন্তু কঠিন, যেটা আমরা জিম্বাবুয়েতে করেছি। আবার আমাদের কন্ডিশনে যখন দ্রুত ৩-৪টি উইকেট পড়ে যাচ্ছিল, আমরা দেখিয়েছি সেটার সঙ্গে মানিয়ে মিডল অর্ডারে কীভাবে খেলতে হয়। গত কয়েকটি সিরিজে এই টিউনিংগুলো খুব ভালো হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে আপনাকে সব সময় নিজের দক্ষতার ওপর আস্থা রাখতে হবে, ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে।

মুশফিক আবারও নিজেকে ফিরে পাবে বলে মনে করেন মাহমুদউল্লাহ
ছবি: শামসুল হক

প্রশ্ন :

টি-টোয়েন্টিতে ভালো দল হয়ে ওঠার জন্য অনুশীলনে, পরিকল্পনায় বিশেষ কিছু কী করছেন আপনারা?

মাহমুদউল্লাহ: গত কয়েকটি সিরিজে আমাদের ফিল্ডিংটা হয়েছে এক কথায় অসাধারণ। কয়েকটি ভালো ক্যাচ নিয়েছি, কিছু বাউন্ডারি বাঁচিয়েছি। টি-টোয়েন্টিতে এসবই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। দলের পরিবেশটাও এখন খুব ভালো। খেলার সুযোগ না পেলে অনেক সময় খেলোয়াড়দের মধ্যে আলসেমি ভর করে। কিন্তু এখন যারা সুযোগ পাচ্ছে না, তারাও কঠোর পরিশ্রম করছে।

প্রশ্ন :

সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে বোলাররাও খুব ভালো করলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের কন্ডিশনে এই বোলিং কতটা কাজে লাগবে?

মাহমুদউল্লাহ: এই মুহূর্তে আমাদের বোলিং আক্রমণ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বোলাররা সবাই ভালো ছন্দে আছে। সাকিব, মোস্তাফিজ টি-টোয়েন্টিতে সেরা দশ বোলারের মধ্যে আছে। সাইফউদ্দিন প্রতিটি ম্যাচে ভালো বল করেছে। শরীফুলের এই সিরিজে খেলার সুযোগ না হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ভালো করেছে। নাসুম, মেহেদী—সবাই ভালো করছে। আমি খুবই আশাবাদী যে আমরা ওখানেও ভালো করতে পারব।

নাঈম–লিটনরা তামিম না থাকার সুযোগটা কাজে লাগাবে, আশা মাহমুদউল্লাহর
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন :

মুশফিকের জন্য সময়টা একটু খারাপই গেল…

মাহমুদউল্লাহ: গত ১৫-১৬ বছর ধরে মুশফিক বাংলাদেশ দলে অসাধারণ অবদান রাখছে। আগেই বলেছি, সব ব্যাটসম্যানের জন্যই এই কন্ডিশন চ্যালেঞ্জিং ছিল। মুশফিকও হয়তো যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে ব্যাটিং করতে পারেনি। তবে সে আবার নিজেকে ফিরে পাবে। মুশফিক বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। বিশ্বকাপে নিশ্চয়ই ভালো করবে।

প্রশ্ন :

তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের কেমন দেখছেন?

মাহমুদউল্লাহ: ওরা ভালোই করছে। নাঈম কয়েকটা সিরিজে আমাদের দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছে। লিটন একটা সিরিজে ছিল না। এই সিরিজে হয়তো মনের মতো ব্যাটিং করতে পারেনি। সৌম্য একটা ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছে। তবে জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ডে ও খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। এগুলো নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যখন আমরা একটু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খেলব, তারা তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেবে।

প্রশ্ন :

তবু বিশ্বকাপে তামিমের মতো একজন অভিজ্ঞ ওপেনারের অভাব নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন…

মাহমুদউল্লাহ: সময়ই বলে দেবে যে দলের চাহিদাটা কী। তামিম অবশ্যই ভালো একজন ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যান। তবে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণের জন্য এটা অন্যদের জন্যও বড় সুযোগ।

মোস্তাফিজসহ অন্য বোলারদের নিয়ে দারুণ আশাবাদী মাহমুদউল্লাহ
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্সে ভর করেই অত দূর গেছে বাংলাদেশ দল। এবার অধিনায়ক হিসেবে তাঁর কাছে প্রত্যাশা কী?

মাহমুদউল্লাহ: আমাদের দলের সবকিছুতেই সাকিবের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। সব ক্ষেত্রেই ওর অবদান থাকে। আমি খুবই আশাবাদী যে ২০১৯ বিশ্বকাপের মতো এবারও সে সেরাটাই দেবে। অধিনায়ক হিসেবে মাঠে এবং মাঠের বাইরে সব সময়ই তার কাছ থেকে আমি সাহায্য পাই। সাকিব দলের ভালোটাকেই সব সময় গুরুত্ব দেয়।

প্রশ্ন :

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য কী থাকবে?

মাহমুদউল্লাহ: বিগত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলোতে আমাদের খুব একটা সুখস্মৃতি নেই। এবার তাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকবে আমরা যেন বিশেষ কিছু করতে পারি। আমার বিশ্বাস, এই বিশ্বকাপে বিশেষ কিছুই করে দেখাব আমরা।

প্রশ্ন :

সেই বিশেষ কিছুটা কী? চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ?

মাহমুদউল্লাহ: (হাসি) সেটা সময়ই বলে দেবে। যেকোনো কিছুই হতে পারে।