ভারতের বিপক্ষে ১২-০ পাত্তা দিচ্ছেন না বাবর

পাকিস্তানের অনুশীলনে অধিনায়ক বাবর আজমছবি: এএফপি

দুবাইয়ে কাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি হওয়ার আগে আজ অনলাইনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই দলের অধিনায়ক। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ১২ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করেন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে। ভারতের বিপক্ষে এখান থেকে একাদশ গড়বে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট।

স্কোয়াড ঘোষণার আগে বাবর আজম বলেন, ‘প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেও আত্মবিশ্বাস মিলেছে। ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা থাকবে।’ এরপর ১২ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করেন পাকিস্তানের এ সেরা ব্যাটসম্যান—বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফখর জামান, হায়দার আলী, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, আসিফ আলী, শাদাব খান, ইমাদ ওয়াসিম, হাসান আলী, শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফ। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, মোহাম্মদ নওয়াজ ও সরফরাজ আহমেদের এ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি।

বাবর এরপর সংবাদকর্মীদের প্রশ্ন নেন। তার চুম্বক অংশ প্রশ্নোত্তর আকারে নিচে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: আপনার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচই ভারতের বিপক্ষে—সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে ধরা হয়। গত কয়েক দিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন, কোনো রকম দুশ্চিন্তা হচ্ছে?

বাবর: না। তেমন কিছু না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তো খেলেছি। আমার মতে, এমন ম্যাচের আগে নিজেকে যত চাপমুক্ত রাখা যায়, যত ফুরফুরে মেজাজে থাকা যায় এবং খেলার মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক রাখতে পারলে আমাদের জন্য ভালো। নিজেদের মধ্যেও আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। খেলোয়াড়েরা শতভাগ উজাড় করে দিতে প্রস্তুত।

প্রশ্ন: এশিয়া কাপ যখন এখানে হয়েছিল তখনই আমরা দেখেছিলাম, পাকিস্তান দলকে বেশ ভ্রমণ করতে হয়েছে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তা-ই দেখা যাচ্ছে। দুবাই, আবুধাবি ও শারজায় ম্যাচ আছে। মানিয়ে নেওয়া কতটা কঠিন হবে?

বাবর: যতটা ভাবছেন ততটা কঠিন হবে না। যত খেলব ততই মানিয়ে নিতে পারব। সিরিজেও তো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয়। আমরা এসবে অভ্যস্ত। শুধু ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে চাই, ভ্রমণের ধকল নিয়ে কেউ ভাবছি না।

প্রশ্ন: সাধারণ ধারণা হলো, সরফরাজ আহমেদ ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অধিনায়কও ছিলেন, ট্রফিও জিতেছেন। ভারতের বিপক্ষে তাঁর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকার কথা। দল নির্বাচনে এ বিষয়টি কি ভেবেছিলেন?

বাবর: আমরা সেটা ভেবেছি। সরফরাজ ভাই স্পিনারদের খুব ভালো খেলেন। যখন যাঁকে দরকার হবে তাঁকে খেলানো হবে। স্কোয়াডে শোয়েব মালিকও আছেন। স্পিনের কথা উঠলে সে-ই প্রাধান্য পায়। দলের স্বার্থে যেটা সেরা সমন্বয় মনে হয়েছে আমরা সেটাই বেছে নিয়েছি।

প্রশ্ন: ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ১২ ম্যাচের সবগুলোই হেরেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা হয়েছে? বিষয়টি কি মাথায় নিয়েই মাঠে নামবেন?

বাবর: দেখুন আমি মনে করি, নিজেকে যতটা চাপমুক্ত রেখে খেলার মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক রাখতে পারবেন দলের জন্য ততটাই ভালো। ম্যাচের দিন সেরাটা ঢেলে দিতে প্রস্তুত সবাই। আগে কি হয়েছে তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। ম্যাচের দিন যারা ভালো খেলে তারাই জেতে।

প্রশ্ন: টানা দুটি বড় ম্যাচ পাকিস্তানের সামনে—প্রতিপক্ষ ভারত ও নিউজিল্যান্ড। মাঝে মাত্র এক দিন বিরতি। আপনারা প্রস্তুত তো?

বাবর: বিশ্বকাপ অনেক বড় টুর্নামেন্ট। এখানে চাপমুক্ত থাকার সুযোগ নেই। টানা দুটি ম্যাচের জন্য আমরা প্রস্তুত। সবাই নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দেবে বলে বিশ্বাস রাখি।

প্রশ্ন: ভারতের মতো দলকে হারাতে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ভালো করতে হয়। কিন্তু শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে দেখা গেল, ব্যাটিং ভালো হলেও বোলিং ভালো হয়নি। বোলারদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন? কোনো লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে?

বাবর: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে চাপমুক্ত থাকার সুযোগ নেই। শুধু ব্যাটিং-বোলিং নয়, ফিল্ডিংয়েও ভালো করতে হয়। আগের ম্যাচে আমাদের দলের সমন্বয়টা একটু আলাদা ছিল। ইমাদ ওয়াসিমকে খেলানো হয়েছে। সে ম্যাচে বোলাররা ভালো করতে পারেনি, ওরা (দক্ষিণ আফ্রিকা) রান তাড়া করে জিতেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে বোলাররা চাপে আছে। এই দলটা নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।

প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে আগে দেখা যেত, পাকিস্তানের পেস আক্রমণ বেশি শক্তিশালী। কিন্তু এখন ভারতের পেস আক্রমণও বিশ্বের অন্যতম সেরা। ভারত এ ক্ষেত্রে একটু সুবিধা পাবে বলে কি আপনার মনে হয়? বিশেষ করে যশপ্রীত বুমরাকে আপনি কীভাবে সামলাবেন?

বাবর: দেখুন, একেক দলের কৌশল তো একেক রকম হয়। আমাদের বোলিং বিভাগ শক্তিশালী। বড় টুর্নামেন্ট বোলাররাই জেতায়। যদি (বুমরাকে খেলার বিষয়ে) ব্যক্তিগত প্রস্তুতি জানতে চান তাহলে বলব, আমি সব সময় নিজের ব্যাটিংয়ের মৌলিক বিষয়ে মনোযোগ দিই। (বোলার নয়) বল খেলার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: এই ম্যাচের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছ থেকে কোনো বার্তা পেয়েছেন?

বাবর: না, কোনো বার্তা পাইনি। (বিশ্বকাপ খেলতে) আসার আগে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপে তাঁর পরিকল্পনা কী ছিল, শরীরী ভাষা কেমন ছিল—এসব।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত কীভাবে ভালো করছে? এবার তাদের হারাতে আপনাদের কী পরিকল্পনা?

বাবর: অতীতে যা ঘটে গেছে, আমরা তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলতে চাই। ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।

প্রশ্ন: ভারত এ ম্যাচে পুরো শক্তি নিয়ে নামার চেষ্টা করছে। হার্দিক পান্ডিয়াকে খেলানো হবে কি না, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। এদিকে শাদাব খানের ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে প্রশ্ন আছে। পাঁচ থেকে সাত পর্যন্ত পাকিস্তানের ব্যাটিং নিয়ে সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?

বাবর: শাদাব আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সে প্রস্তুতি ম্যাচেও ভালো করেছে। আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। সে তো সাত কিংবা আটে ব্যাট করে। ওখানে দ্রুত রান তুলতে হয়। সে এ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে। তার ওপর আমার আস্থা আছে।

প্রশ্ন: পিসিবি চেয়ারম্যান এ ম্যাচ নিয়ে আপনাদের কোনো বার্তা দিয়েছেন?

বাবর: শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সবকিছু সরল-সোজা রাখতে বলেছেন, আত্মবিশ্বাসও রাখতে হবে। শতভাগ উজাড় করে দেওয়ার কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে নামার আগে দলের কী অবস্থা? পাকিস্তানের প্রত্যাশা কী?

বাবর: আমরা বিশ্বকাপে নামতে উন্মুখ। ভালো শুরু করতে চাই। দল হিসেবেও আমরা শক্তিশালী এবং সবাই ভালো অবস্থায় আছে। ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। ভালো খেলার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।