ভালো সময়ে ফিরতে প্রথম টেস্ট অধিনায়কের হাতে জিম্বাবুয়ে

জিম্বাবুয়ে দলে কোচ হয়ে ফিরেছেন প্রথম তাদের টেস্ট অধিনায়ক ডেভিড হটনফাইলছবি

আশি–নব্বইয়ের দশকে জিম্বাবুয়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট অধিনায়কও। তাঁর নেতৃত্বে দুর্দান্ত একটা ক্রিকেটীয় প্রজন্ম জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। পরিণত হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বে সমীহজাগানিয়া এক দলে। কিন্তু নানা ঘাত–প্রতিঘাতে উন্মাতাল জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে সেই অবস্থান হারিয়েছে। ভালো দিন ফেরাতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানেরই শরণাপন্ন এখন জিম্বাবুয়ে। হ্যাঁ, নিজেদের হারিয়ে খোঁজা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ডেভ হটনের হাতে।

হটন অবশ্য জিম্বাবুয়ের কোচিং স্টাফে নতুন নন। নব্বইয়ের দশকের শেষার্ধে খেলা ছাড়ার পর জিম্বাবুয়ে দলের কোচ ছিলেন। এর আগে কোচ ও ক্রিকেটার দুই ভূমিকাতেই দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার নতুন করে কোচের দায়িত্ব পেয়ে আবার ফিরিয়ে আনতে চান সেই সুদিন।

১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, হিথ স্ট্রিক, হেনরি ওলোঙ্গা, গাই হুইটাল, মারে গুডউইন, নিল জনসনদের জিম্বাবুয়ে বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে জায়গা করে নিয়েছিল। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে হারিয়েছিল সে সময়ের অন্যতম হট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতকে। হটন ছিলেন সেই দলের কোচ।

আবার দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে বিবিসি স্পোর্ট আফ্রিকাকে ডেভ হটন বলেছেন, ‘আমি সব সময়ই জিম্বাবুয়েকে সাহায্য করতে চাই। সেটি যেভাবেই হোক না কেন। জিম্বাবুয়েতে আমি জন্মেছি, এই জিম্বাবুয়ের হয়েই আমি আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছি। আমি চাই, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সেই অতীতের সুন্দর দিনগুলো ফিরিয়ে দিতে সব রকমের সাহায্য করতে।’

১৯৯২ সালে জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন ডেভ হটন
ফাইল ছবি

কোচ হিসেবে হটনের অনেক অভিজ্ঞতা। জিম্বাবুয়ে ছাড়াও ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের হেড কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। কোচ ছিলেন মিডলসেক্স, সমারসেট ও উস্টারশায়ারের। জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি লিগেও একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন গত মৌসুমে। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার মনে করেন, কোচ হিসেবে জিম্বাবুয়ে দলের বড় ধরনের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবেন।

হটন মনে করেন, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল হয়তো সেভাবে ফল পাচ্ছে না, তবে সেটি দেশটির ক্রিকেটের পুরো পরিচয় দেয় না, ‘এখানে খুব ভালো ক্রিকেট হয়। জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের ফলে হয়তো সেটির প্রতিফলন নেই। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এখন ঘরোয়া পর্যায়ে যে মানের ক্রিকেট হয়, সেটি আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত।’

জিম্বাবুয়েকে আবার কীভাবে আগের জায়গায় ফেরাবেন হটন? এর একটা রূপরেখাও জানিয়েছেন তিনি, ‘আমাদের এখন ইতিবাচক হতে হবে আবারও। আমি তাদের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে কাজ করব। সাম্প্রতিককালে জিম্বাবুয়ে দল বেশ কিছু ম্যাচ হেরেছে। আমি তাদের ভালো খেলতে সহায়তা করব। ইতিবাচক ক্রিকেট খেলাব, যাতে তারা ভালো ফল করা শুরু করে।’

১৯৯২ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ছিলেন হটন। সে বছরই টেস্ট মর্যাদা পায় দেশটি
ফাইল ছবি

১৯৯২ সালে ভারতের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন হটন। সেটি ছিল টেস্ট ইতিহাসে দেশেরই অভিষেক টেস্টে কোনো ক্রিকেটারের শতকের দ্বিতীয় ঘটনা। প্রথমটি ছিল ১৮৭৬–৭৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যানের। এ তালিকায় তৃতীয় নাম বাংলাদেশের আমিনুল ইসলামের। এরপর আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েনও যোগ দিয়েছেন এই দলে। হটনের ১২১ রানের ইনিংসটিতে জিম্বাবুয়ে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট ড্র করেছিল। জিম্বাবুয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়ার পর প্রথম টেস্ট দল, যারা নিজেদের অভিষেক টেস্ট হারেনি।

দেশের হয়ে খেলেছেন ২২টি টেস্ট আর ৬৩টি ওয়ানডে। ১৯৯৪ সালে বুলাওয়েতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ২৬৬ রানের ইনিংসটি এখনো টেস্টে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। ১৯৮৩, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।

২০১৫ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপে খেলেছে জিম্বাবুয়ে। ২০১৯ সালে বাছাইপর্ব উতরাতে পারেনি ইতিহাসের নবম টেস্ট খেলুড়ে দেশটি। খেলতে পারেনি সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। হটনের প্রথম লক্ষ্য এ বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও আগামী বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে যাওয়া।